প্রভাকর বলছেন, পরিচয়ের রাজনীতি করতে গিয়ে বিজেপি অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জগুলি মোকাবিলার দিকে আর মন দিচ্ছে না।
ভোটের পরে কী হাল হবে স্বৈরাচারী মোদির? ভবিষ্যদ্বাণী পরাকলা প্রভাকরের
Parakala Prabhakar Predicts Modi's Future: "বিজেপি বিভাজনমূলক বক্তব্য এবং সংখ্যাগরিষ্ঠতাবাদী নীতির উপর অনেক বেশি নির্ভর করেছে,", বলছেন পরাকলা প্রভাকর।
অর্থনীতিবিদ পরাকলা প্রভাকর বিজেপির বিরোধিতায় প্রথম সরব হন ইলেক্টোরাল বন্ডকে ঘিরে। নির্মলা সীতারমণ যেখানে মোদির ক্যাবিনেটের বিশ্বস্ত মন্ত্রী, দেশের অর্থনীতি সামলান যিনি, তাঁর স্বামীই যেখানে বিজেপির বিরোধিতা করছেন, সেখানে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক পরাকলা প্রভাকর ঠিক কী ভেবে কথাগুলি বলছেন? পরাকলা প্রভাকর বলেছিলেন, ইলেক্টোরাল বন্ড বিশ্বের সবচেয়ে বড় দুর্নীতি যার মাশুল গুনতে হবে বিজেপিকে। তিনি এও বলেছিলেন বিজেপি ৩০০টির বেশি আসন পেতে হিমশিম খাবে। এবার তিনি সরাসরি বিশ্বের স্বৈরাচারী শাসকদের সঙ্গে তুলনা করেছেন মোদির। বলেছেন, বিশ্বের বিভিন্ন স্বৈরশাসকদের যে হাল হয়েছিল মোদি এবং বিজেপির ভবিষ্যৎ খানিক তেমনই হতে পারে।
আসন্ন নির্বাচনের পর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং ভারতীয় জনতা পার্টির ভবিষ্যৎ সম্পর্কে কঠিন মন্তব্য করেছেন প্রভাকর। সাম্প্রতিক এক সাক্ষাত্কারে, প্রভাকর ইতিহাস জুড়ে স্বৈরশাসকদের ভাগ্যের মধ্যে তুলনা করেছেন। প্রভাকরের বিশ্বাস, মোদি এবং বিজেপি যদি এভাবেই চলতে থাকে তবে সেই স্বৈরাচারীদের মতোই ভবিতব্য তাঁদের।
"স্বৈরাচারীদের শেষটা হয় হাতকড়ায় বা কফিনে,” কর্তৃত্ববাদী শাসনের বিপদ বিষয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে এই কথাই জোর দিয়ে বলেছেন প্রভাকর। বিজেপি যে ক্ষমতার কেন্দ্রীকরণ পন্থায় বিশ্বাস রাখে এবং যেভাবে ভিন্নমত দেখলেই তা দমন করে যে কোনও উপায়ে, গণতান্ত্রিক সমাজে এই জাতীয় কৌশলগুলি চলে না, চলতে পারে না বলেই মনে করেন প্রভাকর।
আরও পড়ুন- মোদি আর বিজেপি দুই-ই এবার ব্যাকফুটে || মুখোমুখি পরাকলা প্রভাকর
প্রভাকর বারেবারেই ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, তিনি বিশ্বাস করেন যে মোদি সরকার ব্যর্থ হয়েছে। অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা, ক্রমবর্ধমান বেকারত্ব এবং সামাজিক মেরুকরণ প্রমাণ করে দেয় বিজেপির সরকার আপাদমস্তক ব্যর্থ। সারা দেশেই শাসক দলের বিরুদ্ধে কৃষক, যুবক এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায় যে রুষ্ট সেই ক্রমবর্ধমান অসন্তোষের কথাও বলেছেন প্রভাকর।
"বিজেপি বিভাজনমূলক বক্তব্য এবং সংখ্যাগরিষ্ঠতাবাদী নীতির উপর অনেক বেশি নির্ভর করেছে, এতে স্বল্পমেয়াদি নির্বাচনী লাভ হতে পারে তবে দীর্ঘমেয়াদে তা ক্ষতিকারক," বলছেন প্রভাকর। প্রভাকর সতর্ক করে দিচ্ছেন, গণতান্ত্রিক নিয়ম এবং প্রতিষ্ঠানের ক্রমাগত ক্ষয় এমন একটি পরিস্থিতির দিকে নিয়ে যেতে পারে যেখানে বিজেপি গুরুতর রাজনৈতিক পরিণতির সম্মুখীন হতে পারে।
প্রভাকর দেশের অর্থনীতিতে সরকারের ভূমিকার সমালোচনা করেছেন। প্রভাকর বলছেন, পরিচয়ের রাজনীতি করতে গিয়ে বিজেপি অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জগুলি মোকাবিলার দিকে আর মন দিচ্ছে না। নির্বাচন যত শেষের পথে, প্রভাকরের মন্তব্য ভারতীয় রাজনীতির ভবিষ্যৎ নিয়ে ততই প্রশ্ন তুলে দিচ্ছে। প্রভাকরের সতর্কবাণী কি সারবত্তাহীন? ভারতবর্ষে গণতন্ত্রের কফিনে শেষ পেরেক কি পুঁতবে বিজেপিই? নাকি সারা বিশ্বে একটা সময় গিয়ে স্বৈরাচারী শাসকদের সঙ্গে যা ঘটেছে, মোদি সরকারের সঙ্গেও তার অন্যথা হবে না? ভারতবর্ষে গণতান্ত্রিক নীতি এবং সকলকে নিয়ে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার যে সনাতন পথ, সেই পথে কি বাঁচবে ১৪০ কোটির এই প্রজাতন্ত্র? ভোটের ফলাফল বলতে পারবে প্রভাকরের ভবিষ্যদ্বাণী কতখানি বাস্তব হতে পারে।