রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে শেষ হাসি হাসবে বিজেপি-বিরোধীরা? যে সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে
রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে বিরোধী শিবিরের প্রার্থী হিসেবে একাধিক নাম ভেসে উঠেছে। তবে এনসিপি সুপ্রিমো শারদ পাওয়ার, কাশ্মীরি পণ্ডিত করণ সিং, বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার অনেকটাই এগিয়ে রয়েছেন।
কথাবার্তায় যতই 'ডোন্ট কেয়ার' ভাব দেখানো হোক, রাষ্ট্রপতি নির্বাচন নিয়ে নিশ্চিতভাবেই গভীর উৎকন্ঠায় রয়েছে পদ্ম-শিবিরের শীর্ষ স্তর। বিজেপি-র এই 'অকুতোভয়' ভাব প্রদর্শনকে নেহাতই যুদ্ধকৌশল হিসেবে দেখছে রাজনৈতিক মহল। এর কারণ একটাই। রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের 'ভোটারদের' একটি হিসেব সামনে এসেছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, এই মুহূর্তে বিজেপির পক্ষে রয়েছে মোট ভোটের ৪৮.৯ শতাংশ। ওদিকে বিরোধী শিবিরের হাতে আছে ৫১.১ শতাংশ ভোট। দু'তরফের ভোটের ব্যবধান ২.২ শতাংশ। দেশের প্রথম নাগরিক নির্বাচনের পাটিগণিত বলছে বিজেপি-বিরোধী শিবির ঐক্যবদ্ধ হতে পারলে বিজেপি বা এনডিএ প্রার্থীকে সামান্য ব্যবধানে হারতে হতে পারে।
আর বিজেপির এই দুর্বলতার সুযোগ নিতেই চাঙ্গা হয়ে উঠেছে দেশের বিজেপি-বিরোধী শিবির। রাষ্ট্রপতি পদে প্রার্থী চূড়ান্ত করতে দিল্লিতে আগামী সপ্তাহেই বৈঠকে বসছে বিরোধী দলগুলি। এই বৈঠকে যোগ দিতে বিশেষভাবে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। সূত্রের খবর মঙ্গলবারই দিল্লি যেতে পারেন তৃণমূল নেত্রী।
বিরোধী দলগুলি ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রার্থী বাছাই করার কাজ সহজ নয়। আজ পর্যন্ত কোনও ইস্যুতেই বিজেপি-বিরোধী শিবির ঐক্যমতে পৌঁছাতে পারেনি। বিজেপিকে পরাস্ত করার বিষয়টি 'কমন' হলেও অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছনোর পথ নিয়ে বিরোধীদের মতান্তরের জেরে প্রতিবারই লাভবান হয়েছে বিজেপিই। এই মুহূর্তে দেশের বেশ কয়েকটি রাজ্যে বিরোধীদের ভোট ভাগাভাগির কল্যাণেই রাজ করছে বিজেপি। অথচ সব বিরোধী দলেরই লক্ষ্য এবং প্রচারের মূল বিষয় ছিল বিজেপিকে হারানো। নিন্দুকরা বলে বিরোধী শিবিরে এমন বহু দল রয়েছে, যেগুলি আসলে বিজেপি-রই 'ছায়া' সংগঠন। এই ধরনের দলগুলির নেতা-নেত্রীরা বছরভর বিজেপির অপশাসনের বিরুদ্ধে গর্জন করেন, 'বিজেপিমুক্ত' ভারত গঠনের দাবি তোলেন, মাঠে- ময়দানে দাঁড়িয়ে বিজেপির শীর্ষ নেতাদের জীবন্ত অবস্থাতেই চিতায় তোলেন। বিজেপি-বিরোধী 'ফায়ারব্র্যান্ড' দল হিসেবে গোটা দেশেই স্বীকৃতি মেলে।
কিন্তু যখনই বিজেপি অস্বস্তিতে পড়ে, তখনই এরা নানা বিচিত্র অথবা সেই মুহূর্তে অপ্রাসঙ্গিক অভিযোগ তুলে সংসদের ভেতরে বা বাইরে বিরোধী শিবিরে ফাটল লাগিয়ে দেয়। আর সেই ফাঁক গলে বেরিয়ে যায় পদ্ম-শিবির। পক্ষান্তরে বিজেপিও নীরবে এই দলগুলির এবং সেই সব দলের নেতা-নেত্রীদের নানা ধরনের স্বার্থ রক্ষা করে।
ফলে ধরে নেওয়া যায়, রাষ্ট্রপতি ভোটে একমত হয়ে বিরোধীদের প্রার্থী দেওয়া যেমন সহজ কাজ নয়, তেমন এটাও ঠিক, নিজেদের প্রার্থীকে জিতিয়ে আনতে বিরোধী শিবিরে ফাটল ধরানোরও মরিয়া চেষ্টা চালাবে বিজেপি৷ এখন মুখে যাই বলা হোক, বাস্তবে বিরোধী শিবির এক হয়ে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রার্থী দিতেই ব্যর্থ হবে। ওদিকে তথাকথিত বিরোধী দলের একাংশ প্রকাশ্যে অথবা গোপনে এনডিএ প্রার্থীকেই সমর্থন করবে। তাই যতই মনে হোক, এই নির্বাচনে বিজেপি প্রার্থীর পরাজয় নিশ্চিত, বাস্তবে তেমন হওয়ার আশা প্রায় নেই বললেই চলে। সরল পাটিগণিত এবং ভোটের অঙ্ক কোনওকালেই এক ছিল না। এবারও অঙ্ক মেলার সম্ভাবনা কম। এই ফাঁক ভরাট করার কাজ বিজেপি প্রায় সেরে ফেলেছে বলেই জানা যাচ্ছে। অসমর্থিত সূত্রে জানা গিয়েছে, ওড়িশা এবং অন্ধ্রপ্রদেশের দুই শাসক দল, যথাক্রমে নবীন পট্টনায়েকের বিজেডি এবং ওয়াই এস জগন্মোহন রেড্ডির ওয়াইএসআর কংগ্রেসের সঙ্গে প্রাথমিক কথা সেরে ফেলেছে বিজেপি। এনডিএ প্রার্থীকে সমর্থনের আশ্বাসও নাকি নবীন-রেড্ডির কাছ থেকে পেয়ে গিয়েছে বিজেপি।
পাশাপাশি তেলেঙ্গনার মুখ্যমন্ত্রী কে চন্দ্রশেখর রাওয়ের দল টিআরএস-এর সমর্থন মিলবে না ধরে নিয়েও কথা চালাচ্ছে বিজেপি তথা এনডিএ। প্রসঙ্গত, শেষ রাষ্ট্রপতি নির্বাচন হয়েছিল ২০১৭ সালে। সেই নির্বাচনে প্রায় ৬৫% ভোট পেয়ে রাইসিনা হিলসে পা রাখেন এনডিএ প্রার্থী রামনাথ কোবিন্দ। কিন্তু বিজেপির সেই দিন এখন আর নেই। দুই নির্বাচনের মধ্যবর্তী সময়ে বিজেপির হাতছাড়া হয়েছে মহারাষ্ট্র, তামিলনাড়ু, রাজস্থান, ছত্তিশগড়, ঝাড়খণ্ড রাজ্যের শাসনক্ষমতা। এছাড়া মধ্যপ্রদেশ এবং কর্নাটকে বিজেপি হেরেছে, যদিও অন্য দল ভাঙিয়ে দুই রাজ্যেই সরকার চালাচ্ছে গেরুয়া বাহিনী৷ তাই বলা যায়, কোবিন্দের পাওয়া ৬৫% ভোট এবার বিজেপি প্রার্থীর কপালে জুটবে না।
এদিকে বিরোধী শিবিরের আশার আলো, কংগ্রেস চেয়ারপার্সন সোনিয়া গান্ধী প্রার্থী নিয়ে ফোনে এক দফা আলোচনা সেরেছেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে। জানা গিয়েছে, বিরোধী শিবিরের প্রার্থী বাছাই করার ভার দিয়ে সোনিয়া মমতাকে অনুরোধ করেছেন, এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে৷ সোনিয়া গান্ধী প্রার্থী বাছাই করার ভার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দেওয়ার পিছনেও যুক্তিসংগত কারণ রয়েছে। সোনিয়া জানেন, কংগ্রেস উদ্যোগ নিয়ে প্রার্থী চূড়ান্ত করলে বিরোধী শিবিরের একাধিক দল তা পছন্দ না-ও করতে পারে। কারণ, ওই দলগুলি কংগ্রেসেরও বিরোধী। অপরদিকে, মমতা প্রায় সব দলের কাছেই গ্রহণযোগ্য। তাই মমতার উদ্যোগ কার্যকর হওয়ার সম্ভাবনা অনেকটাই বেশি। সূত্রের খবর, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই ইস্যুতে আলোচনার জন্য সোনিয়া গান্ধীকে বিরোধীদের বৈঠক ডাকতে বলেছেন। দিল্লিতেই এই বৈঠক হবে। শোনা যাচ্ছে, আগামী সপ্তাহে তাই দিল্লি যেতে পারেন মমতা।
এদিকে জানা গিয়েছে, রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে বিরোধী শিবিরের প্রার্থী হিসেবে একাধিক নাম ভেসে উঠেছে। তবে এনসিপি সুপ্রিমো শারদ পাওয়ার, কাশ্মীরি পণ্ডিত করণ সিং, বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার অনেকটাই এগিয়ে রয়েছেন। আগামী সপ্তাহের বিরোধী-বৈঠকেই বিরোধী প্রার্থীর নাম চূড়ান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।