কেউ রিকশাচালক, কেউ ট্যাক্সি ড্রাইভার, দিল্লি বিস্ফোরণের নিহতদের সম্পর্কে যা জানা যাচ্ছে
Red Fort Blast: মুহাম্মদ জুম্মান, বিহারের বাসিন্দা। তাঁর পরিবারের সদস্যরা বিবিসি-কে জানিয়েছেন, “দেহ চেনা যাচ্ছিল না, পোশাক দেখে চিনতে হয়েছে।”
দিল্লির লাল কেল্লার কাছে গত ১০ নভেম্বর সন্ধ্যায় ঘটে যাওয়া ভয়াবহ বিস্ফোরণকে সন্ত্রাসী হামলা বলে ঘোষণা করেছে ভারত সরকার। বুধবার রাতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বৈঠকে এই ঘোষণা করা হয়। তদন্তে সিসিটিভি ফুটেজ, উপস্থিতদের বয়ান ও ফরেনসিক পরীক্ষা চলছে; সন্দেহভাজনদের খোঁজে হরিয়ানা-ফরিদাবাদ এলাকায় তল্লাশি চলছে। বিস্ফোরণে নিহতদের পরিচয় সম্পর্কে এখন পর্যন্ত কী জানা যাচ্ছে?
দিল্লি পুলিশের দেওয়া প্রাথমিক তালিকা অনুযায়ী, নিহতরা হলেন— মুহাম্মদ জুম্মান, মহসিন মালিক, দিনেশ মিশ্র, লোকেশ আগরওয়াল, অশোক কুমার, নোমান, পঙ্কজ সাহনী এবং অমর কাটারিয়া। কেউ ছিলেন রিকশাচালক, কেউ ট্যাক্সি ড্রাইভার, কেউ ছোট ব্যবসায়ী। কেউ আবার বাস ধরার অপেক্ষায় ছিলেন বিস্ফোরণস্থলের কাছে।
• মহসিন মালিক (২৮)– মেরঠের বাসিন্দা, দিল্লিতে ই-রিকশা চালাতেন। বিস্ফোরণের সময় তিনি ঘটনাস্থলের কাছে ছিলেন। তাঁর মা সাজিদা এনআইএ-কে জানিয়েছেন, “আমরা টিভিতে খবর দেখে ফোন করতে শুরু করি, কিন্তু কোনো উত্তর পাইনি। পরে হাসপাতালে গিয়ে জানতে পারি, ছেলে আর নেই।”
আরও পড়ুন
দিল্লি সন্ত্রান্সের নেপথ্যে মেডিক্যাল মডিউল! যেভাবে গড়ে উঠেছিল
• মুহাম্মদ জুম্মান, বিহারের বাসিন্দা। তাঁর পরিবারের সদস্যরা বিবিসি-কে জানিয়েছেন, “দেহ চেনা যাচ্ছিল না, পোশাক দেখে চিনতে হয়েছে।”
•দিনেশ মিশ্র (৩৫) উত্তরপ্রদেশের শ্রাবস্তীর বাসিন্দা। দিল্লিতে বিয়ের কার্ডের দোকানে কাজ করতেন। ভাই গুড্ডু সংবাদ সংস্থা আইএএনএস-কে বলেন, “রাত ৮টা, ১১টা দু’বার ফোন করি। শেষে হাসপাতাল থেকে বলা হয়, দেহ মর্গে আছে।”
• নোমান বয়স ২২, উত্তরপ্রদেশের শামলিতে কসমেটিক্সের দোকান চালাতেন। ভাই আমনের সঙ্গে কেনাকাটা করতে এসেছিলেন। বিস্ফোরণে নোমান মারা যান, আমন হাসপাতালে।
• ৫৫ বছর বয়সি লোকেশ আগরওয়াল গঙ্গারাম হাসপাতালে আত্মীয়কে দেখতে গিয়েছিলেন। ফেরার পথে বন্ধু অশোক কুমার-এর সঙ্গে দেখা হয়। দুই বন্ধু একসঙ্গে মারা যান বিস্ফোরণে।
• পঙ্কজ সাহনী বয়স ২২, বিহারের সমস্তিপুরের বাসিন্দা, ট্যাক্সিচালক। স্টেশনে যাত্রী নামাতে যাচ্ছিলেন, ঠিক তখনই হয় বিস্ফোরণ।
• অমর কাটারিয়া-র লাল কেল্লা অঞ্চলে ওষুধের ব্যবসা ছিল। বিস্ফোরণের দশ মিনিট আগে বাবার সঙ্গে ফোনে কথা বলেছিলেন। পরে ফোন ধরেন এক মহিলা পুলিশ। তিনিই জানান অমর নিহত হয়েছেন।
আরও পড়ুন
দিল্লি বিস্ফোরণ | ৬ অভিযুক্তই চিকিৎসক, যা জানা যাচ্ছে
সংবাদ সংস্থা পিটিআই জানিয়েছে, আহত বিলাল নামের এক ব্যক্তি বৃহস্পতিবার সকালে হাসপাতালে মারা যাওয়ার পর মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৩ জনে। অন্যদিকে, ন্যাশনাল সিকিউরিটি গার্ড (NSG) ও হরিয়ানা পুলিশের যৌথ বাহিনী বৃহস্পতিবার ফরিদাবাদে নতুন করে তল্লাশি অভিযান শুরু করেছে। সেখানে একটি লাল রঙের গাড়ি পাওয়া গিয়েছে, যা মূল সন্দেহভাজন ড. উমর নবীর বলে ধারণা তদন্তকারীদের। ড. নবী কাশ্মীরের অধিবাসী এক চিকিৎসক। তার পরিচয় নিশ্চিত করতে বাবা-মায়ের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। লাল কেল্লার বিস্ফোরণস্থল থেকে উদ্ধার দেহাংশের সঙ্গে সেই নমুনা মেলানো হচ্ছে।
এএনআই জানিয়েছে, পুলিশ অন্তত ৫০টি সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে দেখেছে বিস্ফোরণের আগে ড. নবী কোথায় গিয়েছিলেন ও কী করেছিলেন। আরও এক ফুটেজে দেখা গিয়েছে, বিস্ফোরণের কিছুক্ষণ আগে তিনি দিল্লির তুর্কমান গেটের কাছে একটি মসজিদ থেকে বের হচ্ছেন।
বিস্ফোরণের পর থেকেই দিল্লি পুলিশের বিভিন্ন শাখা, এনআইএ, এনএসজি ও ফরেনসিক টিম যৌথভাবে তদন্তে নেমেছে। রাজধানী জুড়ে বাড়ানো হয়েছে নিরাপত্তা, বিশেষ করে রেড ফোর্ট, জামা মসজিদ, ওল্ড দিল্লি রেলস্টেশন ও চাঁদনি চক এলাকায় কড়া নজরদারি চলছে। তবে এখনও পর্যন্ত এই ঘটনার দায় স্বীকার করেনি কোনো সংগঠন। তুরস্কের সঙ্গে যোগের অভিযোগও খারিজ করেছে আঙ্কারা। সাধারণ মানুষ প্রশ্ন তুলছে, রাজধানীর এমন গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় এভাবে বিস্ফোরণ ঘটল কীভাবে?

Whatsapp
