শুটিংয়ের সবচেয়ে কঠিন ইভেন্টে জয়! যে ভাবে ভারতকে পদক এনে দিলেন স্বপ্নিল
Paris Olympics 2024: ১৯৫২ সালে পুরুষদের ৫০ মিটার রাইফেল থ্রি পজিশনস শুরু হওয়ার পর থেকে প্রথমবার এই ইভেন্টে কোনও পদক জিতল ভারত।
অলিম্পিকে একের পর এক সাফল্য ভারতের। ইতিমধ্যেই দু'দুটি বিভাগে ব্রোঞ্জ জিতেছে ভারত। এর পর এল তৃতীয় পদক। মনু বাকর, সরবজ্যোৎ সিংহের পর এবার ৫০ মিটার রাইফেল থ্রি পজিশনে ব্রোঞ্জ জিতলেন ভারতের স্বপ্নিল কুসালে। আশ্চর্যের ব্যাপার এবার তিনটি পদকই এসেছে বাংলার ঘরে শুটিং বিভাগ থেকে। চলতি বছর একশো বছরে পড়েছে প্যারিস সামার অলিম্পিক। যে ইভেন্টে ব্রোঞ্জ জিতেছেন মহারাষ্ট্রের ছেলে স্বপ্নিল, সেই ইভেন্টটিকে বলা হয় শুটিংয়ের ম্যারাথন। ১৯৫২ সালে পুরুষদের ৫০ মিটার রাইফেল থ্রি পজিশনস শুরু হওয়ার পর থেকে প্রথমবার এই ইভেন্টে কোনও পদক জিতল ভারত। আর সেই ঐতিহাসিক পদক জয়ের ফলে প্যারিসে ভারতের পদক সংখ্যা তিনে পৌঁছে গেল। তিনটি পদকই এসেছে শ্যুটিং থেকে। স্বপ্নিল সপ্তম ভারতীয় শুটার, যিনি অলিম্পিকের ইতিহাসে পদক জিতলেন।
মহারাষ্ট্রের কৃষক পরিবারের ছেলে স্বপ্নিল। কিংবদন্তি ক্রিকেটার মহেন্দ্র সিং ধোনির মতোই রেলে কাজ স্বপ্নিলের। পুনে রেলওয়ে ডিভিশনে ট্যাভেলিং টিকিট পরীক্ষক (TTE) হিসেবে প্রায়শই দেখা যেত তাঁকে। না, শুধু কাজের ব্যাপারে মিলই নয়, ব্যক্তিগত জীবনেও 'মাহি'র দারুণ ভক্ত স্বপ্নিল। তাঁর দাদা ও বাবা স্কুলশিক্ষক, মা কোলাপুরের কাম্বেলওয়াড়ি গ্রামের পঞ্চায়েত প্রধান। প্রাইমারি স্পোর্টস প্রোগ্রাম, মহারাষ্ট্র ক্রীড়া প্রবোধিনীতে নাম লিখিয়ে এসেছিল বাবা। একবছর কঠোর শরীরচর্চার পর যখন খেলা নির্বাচন করার সময় এল, স্বপ্নিল বেছে নিলেন শুটিং। ২০১৫ সালে কুয়েতে এশিয়ান শুটিং চ্যাম্পিয়নশিপে জুনিয়র বিভাগে ৫০ মিটার রাইফেল প্রোন থ্রি ইভেন্টে সোনা জেতেন স্বপ্নিল। সেই শুরু। এরপর ৫৯তম জাতীয় শুটিং চ্যাম্পিয়নশিপ জেকা,এমনকী ৫০ মিটার রাইফেল প্রোন ইভেন্টে গগন নারাং ও চেইন সিংকেও ছাপিয়ে যাওয়া। তিরুঅনন্তপুরমে ৬১তম জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপেও থ্রি পজিশন ইভেন্টে সোনা জিতেছিলেন স্বপ্নিল। সেখান থেকে প্যারিস সামার অলিম্পিক।
আরও পড়ুন: নেই স্পেশাল চশমা, পকেটে হাত ভরেই যেভাবে অলিম্পিকে রুপো জিতলেন ৫১-র যুবক
ফাইনালে উঠলেও কঠিন এই ইভেন্ট থেকে যে ঘরে পদক এনে দিতে পারেন স্বপ্নিল, এমনটা অনেকেই বিশ্বাস করতে পারেননি। তবে সেটাই শেষপর্যন্ত করে দেখালেন। শুরুটা অবশ্য দারুণ কিছু হয়নি স্বপ্নিলের। প্রথম ধাপে ছিল নিলিং অর্থাৎ হাঁটু মুড়ে বসে শুটিং। সেখানে প্রথন সিরিজে (পাঁচটি শট) ৫০.৮ স্কোর করেন তিনি। রুতেই নেমে যান সাতে। পরের সিরিজ়ে স্কোর হয় আর একটু ভাল, ৫০.৯। তৃতীয় সিরিজ়ে অনেকটা এগিয়ে ৫১.৬ স্কোর করেন।
এর পর ছিল প্রোন অর্থাৎ বুকে ভর দিয়ে শুটিং। সেখানেই সবাইকে অবাক করে প্রতিটি সিরিজে ভালো স্কোর করতে শুরু করেন স্বপ্নিল। ৫২.৭, ৫২.২ এবং ৫১.৯ স্কোর করে মুহূর্তে উঠে আসেন চারে। এর পর ‘স্ট্যান্ডিং’, অর্থাৎ দাঁড়িয়ে শুটিং বিভাগের দু’টি সিরিজ়ে ৫১.১ এবং ৫০.৪ স্কোর করেন। আর এই রাউন্ডের পর পদকজয়ের সম্ভাবনা বেড়ে গিয়েছিল অনেকটাই। তবু বাকি ছিল লড়াই। একটি শটের পরে আসে এলিমিনেশন। যেখানে এক জন করে বাদ পড়তে থাকেন। সেই পরিস্থিতিতে তিন নম্বর স্থান ধরে রাখা যথেষ্ট কঠিন ছিল তাঁর পক্ষে। তবে হার মানেননি আঠাশ বছরের স্বপ্নিল। তিনি প্রথম শটে ১০.৪ মারার পর দ্বিতীয় এবং তৃতীয় শটে ৯.৪ ও ৯.৯ স্কোর করেন। চতুর্থ স্থানে যিনি ছিলেন, তাঁর সঙ্গে এতটাই পার্থক্য তৈরি করতে পেরেছিলেন স্বপ্নিল, যে ততক্ষণে অলিম্পিকে পদকজয় তাঁর নিশ্চিত।
আরও পড়ুন: গত অলিম্পিকে খারাপ হয়ে যায় বন্দুক! প্যারিসে যেভাবে ব্রোঞ্জ জয় মনু ভাকরের
তবে ব্রোঞ্জ পদক পজিশন থেকে উন্নতি করাই লক্ষ্য ছিল। দ্বিতীয় স্থানে থাকা প্রতিপক্ষর থেকে ০.৬ পয়েন্টে পিছিয়ে ছিলেন। যদিও পদকের রং বদলাতে পারেনননি। ব্রোঞ্জ থেকে রুপো পেতে গেলে ভাল শট মারতে হত স্বপ্নিলকে। তিনি ১০.০ মারেন। দ্বিতীয় স্থানে থাকা ইউক্রেনের সের্হি কুলিশের সঙ্গে ০.৬ পয়েন্টের পার্থক্য ছিল। ফলে স্বপ্নিলকে রুপো পেতে গেলে কুলিশকে ৯.৩ স্কোর করতে হত। তিনি ৯.৯ স্কোর করে রুপো নিশ্চিত করে ফেলেন। সোনা জেতেন চিনের ইয়ুকুন লিউ। মোট ৪৫১.৪ পয়েন্ট নিয়ে ব্রোঞ্জ পকেটে পোরেন মহারাষ্ট্রের স্বপ্নিল কুসালে। আর তার সঙ্গেই গড়লেন ইতিহাস। ৫০ মিটার রাইফেল থ্রি পজিশনস শুটিংয়ে এই প্রথমবার কোনও ভারতীয় পদক জিতে নিলেন। আর তার সঙ্গে সঙ্গেই তিনখানা পদক প্যারিস অলিম্পিক ২০২৪-এ নিশ্চিত করে ফেলল ভারত।