মানুষের বসতি, না ভূতের আস্তানা? বিশ্বের সবচেয়ে 'নিঃসঙ্গ' বাড়ি ঘিরে আজও ঘুরে বেড়ায় রহস্য

World's Loneliest House Mystery : বিশ্বের সবচেয়ে নিঃসঙ্গ, একা বাড়িটি ঘিরে মানুষের উৎসাহের শেষ নেই। তৈরি হয়েছে একের পর এক মিথ।

চারিদিকে থই থই করছে নীল জল। তারই মধ্যে একটা ছোট্ট দ্বীপ। সবুজ ঘাসের গালিচা আর পাথরের মাঝেই দাঁড়িয়ে রয়েছে ছোট্ট একটা সাদা বিন্দু। আশেপাশে আর কোনও বাড়িঘরও নেই। মানুষজনও নেই। আস্ত একটা দ্বীপে এভাবে একা একটা বাড়ি দাঁড়িয়ে রয়েছে! এখান থেকেই রহস্যের সূত্রপাত। বহু বছর ধরে ‘একা বেঁচে থাকতে’ শেখার গান গেয়েই চলেছে এই রহস্যময় সাদা বাড়িটি। বিশ্বের সবচেয়ে নিঃসঙ্গ, একা বাড়িটি ঘিরে মানুষের উৎসাহের শেষ নেই। আর সেখান থেকেই তৈরি হয়েছে একের পর এক মিথ, ঘনিয়ে উঠেছে রহস্যের মেঘ।

বরফে আবৃত দেশ আইসল্যান্ড। তারই দক্ষিণে ১৬ থেকে ১৮টি দ্বীপ নিয়ে তৈরি হয়েছে ভেস্টমাননায়েজার দ্বীপপুঞ্জ। সেখানেই রয়েছে একটি ছোট্ট দ্বীপ, এলিদে (Ellidaey)। এমনিতে অন্যান্য দ্বীপের থেকে খুব একটা আলাদা মনে হবে না একে। সমুদ্রের মাঝে ছোট্ট একটা ভূখণ্ড। কিন্তু ওই একটি সাদা বাড়িই সবকিছুর থেকে একে আলাদা করেছে। অদ্ভুতভাবে, আর কেউ ওই দ্বীপে থাকেও না। বাড়িটাও বছরের পর বছর ধরে ফাঁকা পড়ে রয়েছে।

অনেকেই আছেন, যারা ঘুরতে গিয়ে একেবারে জনমানবশূন্য হয়ে থাকতে চান। ইন্ট্রোভার্টরা বোধহয় এলিদে দ্বীপের মতো এমন একটি জায়গাই পছন্দ করবেন। একটা ফাঁকা বাড়িতে শুয়ে শুয়ে চারদিকের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করা, অনেকের কাছেই এটা সবচেয়ে ভালো উপায়। কিন্তু সেসব তো অন্য কথা। আইসল্যান্ডের এই দ্বীপের আশেপাশের জায়গায় তো দিব্যি মানুষজন বসবাস করছেন। তাহলে এখানে কেউ নেই কেন? এই বাড়িটাই বা কে তৈরি করল?

আরও পড়ুন : দেওয়ালে, দরজায় সর্বত্র আঁকা পুরুষাঙ্গ! ভুটানের এই রহস্যময় রীতির আসল কারণ কী?

এই প্রশ্ন থেকেই শুরু হয় মিথ আর রহস্যের বন্যা। নানা মুনির নানা মতামত বাড়িটাকে নিয়ে। একটা সময় নাকি এই এলিদে দ্বীপে মানুষেরা বসবাস করতেন। পাঁচটি পরিবার হেসেখেলে জীবন কাটাতেন। কিন্তু ১৯৩০-র দশকে সেই পরিবারগুলি বরাবরের মতো এই দ্বীপ ছেড়ে চলে যায়। তারপর থেকেই জনমানবহীন। কিন্তু কেন ওই পরিবারগুলি এখান থেকে চলে গেল? এখনও কোনও উত্তর নেই।

 
 
 
 
 
View this post on Instagram
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 

A post shared by Hörður Kristleifsson - Iceland (@h0rdur)

আর এই বাড়িটা? কেউ কেউ বলেন, আইসল্যান্ডের এক ধনী ব্যবসায়ী এই বাড়িটা তৈরি করেছিলেন। কেন? জোম্বি আক্রমণ হলে যাতে এখানে এসে সুরক্ষিত হয়ে থাকতে পারেন! চারিদিকে সমুদ্রে ঘেরা বলে কেউ সহজে আসতেও পারবে না। কেউ কেউ আবার বলেন, আইসল্যান্ডের এক বিখ্যাত গায়ক বরিস নাকি এই বাড়িটি তৈরি করেছিলেন। একাংশের আবার মত, কোনও এক সাধু এসে এটি তৈরি করে থাকতেন। আসল রহস্য কোথায় লুকিয়ে আছে, তা এখনও সঠিকভাবে জানা যায় না। কেউ কেউ বলেন, রাত হলে নাকি ‘তেনাদের’ উপদ্রব শুরু হয়! ভূতেদের হাত থেকে বাঁচতেই নাকি সবাই এই দ্বীপ ছেড়ে চলে গিয়েছে।

আরও পড়ুন : ‘আত্মা’ এখনও আসে ফিরে? পর্যটকদের কেন টানে ভৌতিক রহস্যে মোড়া সিকিমের বাবা মন্দির!

এভাবেই রহস্য আর মিথ ঘিরে রয়েছে আইসল্যান্ডের এই এলিদে দ্বীপ ঘিরে। রহস্যের কেন্দ্রবিন্দুতে বিশ্বের নিঃসঙ্গতম বাড়িটি। এখন অবশ্য শিকারিরা মাঝেমধ্যেই এই বাড়িটায় যান। এখানেই থাকেন, শিকার করেন, তারপর আবার ফিরে যান। বাড়ির ভেতরের এলাহি আয়োজন, কারুকাজ, জিনিসপত্রের বহর দেখে চমকে উঠবে অনেকে। ফাইভ স্টার হোটেলের থেকে কম কিছু মনে হবে না। এভাবেই রহস্য নিয়ে একা একা বেঁচে থাকার মন্ত্র বলে চলেছে নিঃসঙ্গতম বাড়িটি।

More Articles