পাকিস্তানের ভবিষ্যৎ এবার কোন পথে?

ক্লিন বোল্ড হলেন ক্যাপ্টেন। ক'দিনের নাটকীয় পরিস্থিতির যবনিকা পড়ল রবিবার মাঝরাতে। গদিচ্যুত হলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। শনিবার সারাদিন ধরে ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির অধিবেশন মুলতুবি করতে থাকেন পাকিস্তানের স্পিকার। তখন ও বোঝা যাচ্ছিল না কী ঘটনা ঘটতে চলেছে। মনে করা হচ্ছিল আরও একদিন প্রধানমন্ত্রীর কুর্সি থাকবে ইমরান খানেরই জিম্মায়। ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির স্পিকার আসাদ কায়সার প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বিরুদ্ধে অনাস্থা ভোটের প্রস্তাব বাতিল করে দেন। কিন্তু শেষ অবধি রাত ১২ টায় সুপ্রিম কোর্টের বিশেষ অধিবেশন ডাকেন পাকিস্তানের প্রধান বিচারপতি উমর আটা বন্দিয়াল। আস্থা ভোটই একমাত্র পথ বুঝতে পেরে ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকার পদ থেকে ইস্তফা দেন আসাদ কায়সার ও কাসিম খান সুরি। অন্যদিকে পার্লামেন্টের লোয়ার হাউসের ১৭৪ জনই ইমরান খানের বিপক্ষে ভোট দেন। পরিস্থিতি হাতের বাইরে বুঝতে পেরেই ইস্তফা দেন ইমরান খান।    

গত ৩ এপ্রিল পাকিস্তানের বিরোধী দলের সাংসদরা জাতীয় পরিষদে ইমরান খান কে ক্ষমতাচ্যুত করার উদ্দেশ্যে অনাস্থা প্রস্তাব পেশ করার চেষ্টা করেন। কিন্তু বিরোধীরা সংখ্যা গরিষ্ঠ হওয়া সত্ত্বে ও ডেপুটি স্পিকার নিজের ক্ষমতা প্রয়োগ করে বিরোধীদের আনা অনাস্থা প্রস্তাব বাতিল করে দেন। এই প্রসঙ্গে স্পিকার বলেন আমেরিকা যুক্ত রাষ্ট্রের মদতে বিরোধীরা চক্রান্ত করে ইমরানের সরকার ফেলে দিচ্ছে। ক্ষুব্ধ বিরোধী দলগুলি সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়। তারই প্রেক্ষিতে সুপ্রিম কোর্ট সুয়ো মোটো রুল জারি করে। সেই শুনানিতে সুপ্রিম কোর্ট স্পষ্ট জানিয়ে দেয় পাকিস্তানের সংবিধানের ৯৫ ধারা অনুযায়ী বেআইনি ও অসাংবিধানিক কাজ করেছেন ডেপুটি স্পিকার কাসিম সুরি। পাকিস্তানের ইতিহাসে এই প্রথম অনাস্থা ভোটের ফলে পদ খোয়াতে হল কোনও প্রধানমন্ত্রীকে।

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে প্রাক্তন পাক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের ভাই শাহবাজ শরিফ, প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট আসিফ আলি জারদারি, পাকিস্তানের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টোর ছেলে বিলাবল ভুট্টো এবং মৌলানা ফজলুর রহমানের অঙ্কেই সিংহাসন হারালেন ইমরান খান।  

কোন পথে পাকিস্তানের ভাগ্য?

ইমরান খান সরকারের পতনের পর কে হবেন পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী তাই নিয়ে শুরু হচ্ছে জল্পনা। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে বিরোধী দলনেতা শাহবাজ শরীফ ই প্রধানমন্ত্রী হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে রয়েছেন। ইতিমধ্যেই পাকিস্তানের সংসদে বিরোধী জোটগুলি নিজেদের মধ্যে হাত মিলিয়েছে। ইমরান খানের দল তেহরিক-ই-ইনসাফের সঙ্গী এমকিউম-পি পাকিস্তানের বিরোধী দল পিপলস পার্টির সঙ্গে যোগ দেয়। এই পরিস্থিতিতে কার্যত জরুরি অবস্থার পরিস্থিতি গোটা পাকিস্তান জুড়ে। গোটা দেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থা আঁটোসাঁটো করা হয়েছে। সমস্ত হাসপাতাল, বিমানবন্দরে জারি করা হয়েছে রেড অ্যালার্ট। সমস্ত সরকারি আধিকারিকের দেশ ছাড়তে বারণ করে দেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুন-অস্ত্রেও রাশিয়াকে টেক্কা, ‘চাণক্য’ জেলেনস্কির কূটবুদ্ধির জোরে এগিয়ে ইউক্রেন

এই পরিস্থিতিতে পাকিস্তানের ভবিষ্যৎ কীভাবে নির্ধারিত হবে তার দিকে তাকিয়ে গোটা বিশ্ব। সূত্রের খবর, আগামী ১১ এপ্রিল পাকিস্তানের জাতীয় সংসদের সদস্যরা একটি বৈঠকে বসবেন। সেখানেই প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনের ব্যাপারে আলোচনা হবে। এই প্রসঙ্গে পাকিস্তান মুসলিম লিগের নেতা আওয়াজ সিদিক জানান, রবিবার দুপুর দুটোর সময় প্রধানমন্ত্রী পদ প্রার্থীদের মনোনয়ন গ্রহণ করা শুরু হবে। ৩ টে নাগাদ স্ক্রুটিনি শুরু হবে। এরপরেই সিদ্ধান্ত হবে পাক সিংহাসনে ইমরানের উত্তরসূরি কে হবেন!

আবার পাকিস্তানের রাজনীতিতে সেনার ভূমিকার কথা মাথায় রেখে আরেকটি আশঙ্কার কথা ও শোনা যাচ্ছে। তবে কি প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের পাকিস্তানে জারি হবে সেনার শাসন?

পাকিস্তানের সেনা দেশের রাষ্ট্রনায়ক নির্বাচনে সবসময়ই গুরুত্বের দাবি রাখে। ২০১৮ সালে ইমরানের উত্থানের সময় পাক সেনাবাহিনীর বিপুল সমর্থন পেয়েছিলেন ইমরান খান। গত বছরের গোড়ার দিক থেকেই পাক সেনা প্রধান ও কমান্ডারদের সঙ্গে দূরত্ব বাড়তে থাকে ইমরানের।

এর আগে ও অতীতে ১৯৫৮ সালে ফিরোজ খানের পদত্যাগের পর, ১৯৭৭ এ জুলফিকার আলি ভুট্টোর সময়ে ও ১৯৯৯ এ নওয়াজ শরিফের আমলে প্রধানমন্ত্রীর পতনের পর পাকিস্তানে সেনার শাসন জারি হয়েছিল। এখন দেখার, আগামী দিনে পাকিস্তানের প্রশাসনিক ভবিষ্যৎ কী হতে চলেছে!

More Articles