যিশুর জন্মের সময় উপস্থিত ছিলেন এই ভারতীয় রাজা! যে কাহিনি চমকে দেবে আপনাকেও
Jesus Christ birth Bible : প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে ওই নক্ষত্রটিকে অনুসরণ করতে শুরু করেন তিন ব্যক্তি। খুঁজতে খুঁজতে তাঁরা জেরুসালেমে চলে আসেন।
“In the time of king Herod, after Jesus was born in Bethlehem of Judea, wise men from the East came to Jerusalem…”
বাইবেলের নিউ টেস্টামেন্ট। ‘গসপেল অফ ম্যাথিউ’-এর দ্বিতীয় অধ্যায়ের প্রথম অংশটি শুরু হচ্ছে এমনভাবে। কী বলা হয়ে সেখানে? রাজা হেরোদের রাজত্বের সময়, যুদেয়ার বেথলেহেমের ছোট্ট একটি ঘরে জন্ম নেন যিশু খ্রিস্ট। বাইবেলে বলা হয়, সেই সময় আকাশে নতুন একটি তারা ওঠে। জ্বলজ্বলে সেই তারা কীসের প্রতীক? কীসের ইঙ্গিত দিচ্ছে? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে ওই নক্ষত্রটিকে অনুসরণ করতে শুরু করেন তিন ব্যক্তি। খুঁজতে খুঁজতে তাঁরা জেরুসালেমে চলে আসেন। তারপরই মোলাকাত হয় সদ্যোজাত যিশুর সঙ্গে।
গোটা পৃথিবীর কাছে এটি অত্যন্ত পরিচিত গল্প। তবে গল্পের বর্ণনা এখানেই শেষ নয়। বাইবেল বলে, এই তিন ব্যক্তি প্রাচ্য থেকে বিভিন্ন উপহার নিয়ে এসেছিলেন। কিন্তু এঁদের পরিচয় কী? নাম, ঠিকানা কী? এই বিষয়ে চুপ থাকে নিউ টেস্টামেন্ট। কিন্তু বিভিন্ন সূত্র মারফৎ সামনে আসে তিনটি নাম। পারস্যের পণ্ডিত মেলচিওর, ব্যাবিলনের পণ্ডিত বালথাজার। আর আরেকজন? এই পরিচয়ের সামনে এসে একটুখানি থেমে যেতে হয়। এই তৃতীয় ব্যক্তির নাম ক্যাসপার; তাঁর নিবাস – ভারত!
আলেকজান্দ্রিয়ায় আনুমানিক ৫০০ খ্রিষ্টাব্দের একটি পুঁথিতেও এই তিন ব্যক্তির পরিচয়ের হদিশ পাওয়া গিয়েছে। সেখানে অবশ্য এঁরা পণ্ডিত ব্যক্তি নন, তিনজনই প্রাচ্যের রাজা। আরবের রাজা বালথাজার, পারস্যের রাজা মেলচিওর এবং ভারতের রাজা ‘গ্যাসপার’। স্থান এবং কালভেদে গ্যাসপারের অপভ্রংশ হয়েছে ‘ক্যাসপার’, এটা মেনে নেওয়া যেতেই পারে। কিন্তু কে এই গ্যাসপার? ভারতের ইতিহাসে এই নামে তো কোনও রাজা নেই। তাঁর পরিচয় কী?
খ্রিস্টধর্ম ও যিশুর জীবনের সঙ্গে ভারতের যোগ নিজে আগেও অনেক গবেষণা হয়েছে। বলা হয়, জেরুসালেমে নিজের যাত্রা শুরুর আগে ভারতে অনেকগুলো দিন কাটিয়েছিলেন যিশু। ভারতের সংস্কৃতি, ধর্ম, দর্শনের সঙ্গে পরিচয় হয়েছিল তাঁর। যিশুর প্রধান শিষ্যদের মধ্যে একজন ছিলেন সেন্ট থমাস। তিনি নিজে ভারতে এসেছিলেন ধর্ম প্রচার করতে। কিন্তু যিশুর জন্মের সঙ্গে বাহ্রতের যোগ কীরকম? সেটা জানতে হলে একবার ইতিহাসের পাতায় চোখ রাখা দরকার।
‘শক হুন দল পাঠান মোগল’-এর ইতিহাস জুড়ে রয়েছে এই ভারতীয় সভ্যতায়। মৌর্য, গুপ্ত, সাতবাহনদের সঙ্গে বিভিন্ন বিদেশি শক্তি এ দেশে এসেছে। তারা রাজত্ব করেছে, সমৃদ্ধ করেছে দেশের ইতিহাসকে। যে সময়ের কথা বলা হচ্ছে, তখন ভারতে শকদের রাজত্ব। তবে তারাই একমাত্র ছিল না। দেশের উত্তর-পশ্চিম অংশে তৈরি হয়েছিল আরও একটি সাম্রাজ্য। ভারত ও ইরানের একাংশ ও আফগানিস্তানকে নিয়ে তৈরি হয়েছিল ইন্দো-পার্থিয়ান সাম্রাজ্য। যিশুর জন্মের আগেই তৈরি হয়েছিল এই রাজপাট। আর এই বিশেষ সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেছিলেন যিনি, তাঁর নাম প্রথম গণ্ডোফারেস। আপাতত এই ‘গল্পের’ নায়ক তিনিই।
ভারতের বিস্তৃত ইতিহাস বলতে গেলে গণ্ডোফারেসের প্রসঙ্গ আসবেই। কিন্তু তাঁর সঙ্গে যিশুর সম্পর্ক? একটু নামের দিকে আসা যাক। গণ্ডোফারেস শব্দটি গ্রিক। কালে কালে বিভিন্ন জায়গায় এর উচ্চারণ বিভিন্ন রকম হয়েছে। ইরানে এই নাম বদলে হয়েছে উইন্ডাফার্ন, মধ্য পারস্যে আবার বদলে গিয়েছে গুন্ডাপার হিসেবে। তবে আমাদের নজর থাকবে আর্মেনিয়ার ওপর। প্রাচীন আর্মেনিয়ার ভাষায় গণ্ডোফারেসের অনুবাদ হয় ‘গাস্টাফার’। ধীরে ধীরে এই নাম যখন ইউরোপে প্রবেশ করে, আরও ভেঙে যায়। এখান থেকেই ইতিহাসবিদদের প্রশ্ন, গাস্টাফার-ই কি সেই পুরনো ‘গ্যাসপার’ বা ‘ক্যাসপার’?
সম্ভাবনা উড়িয়ে দেননি ঐতিহাসিকরা। কারণ, গণ্ডোফারেস ভারতেরই একটি অংশে রাজত্ব করতেন। এবং তিনি সমসাময়িকও বটে। ভারতের উত্তর-পশ্চিম প্রদেশ থেকে পারস্য আর আরবের রাজার সঙ্গে জেরুসালেমে যাওয়া খুব একটা আশ্চর্যের নয়। অন্যদিকে, যিশুর মৃত্যুর পর সেন্ট থমাস ভারতে আসেন। তিনি ছিলেন যিশুর প্রধান ১২ জন শিষ্যের মধ্যে একজন। সেই সময় এক রাজার সম্মুখীন হয়েছিলেন তিনি। ‘অ্যাক্ট অফ থমাস’ অনুযায়ী, ভারতের সেই রাজার নাম ‘গুডনাফার’। আবারও গণ্ডোফারেসের অপভ্রংশ? ঐতিহাসিকরা সেটাই মনে করছেন।
কিন্তু সবই ধারণার জায়গায়। গণ্ডোফারেস আদৌ ওই ‘থ্রি ওয়াইস ম্যান’-এর অন্যতম কিনা, তার অকাট্য কোনও প্রমাণ এখনও পাওয়া যায়নি। বিভিন্ন সূত্র নিয়ে একটা ধারণা মাত্র তৈরি হয়েছে। তবে সেই তত্ত্ব সত্যি হলে আশ্চর্যের কিছু থাকবে না। ভারতের সঙ্গে যিশুর যোগাযোগ তখন আরও দৃঢ় হবে।