তৃণমূলকে জেতাতেই ডায়মন্ড হারবার থেকে প্রার্থী হলেন না নৌশাদ?
Nawsad Siddique Diamond Harbor: আইএসএফ নেতারা চান নিজে প্রার্থী না হয়ে দলের তারকা প্রচারক হিসাবে কাজ করুন নৌশাদ।
গত কয়েক মাস ধরেই অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়েছিলেন নৌশাদ সিদ্দিকী। বলেছিলেন, আইএসএফের হয়ে ডায়মন্ড হারবার আসন থেকে লড়বেন অভিষেকের বিরুদ্ধে। এককালে রাজ্যে আইএসএফ জোটসঙ্গী ছিল বামেদের। এবারেও বামেদের কোনও কোনও নেতা বলেছেন তৃণমূল বিজেপিকে একটিও ভোট না, বরং বাম, কংগ্রেস, আইএসএফকে দিতে। জোট না থাকলেও হালকা সম্ভাবনাকে জিইয়ে রেখেছিলেন তারা। তবে আইএসএফ জোট ভাবেওনি। একা লড়ার কথা ভেবেই নৌশাদ সিদ্দিকী ডায়মন্ড হারবারে দাঁড়ানোর কথা বললেও শেষ পর্যন্ত ডায়মন্ড হারবারে লড়ছেন না তিনি। ফুরফুরা শরিফে পাঁচটি লোকসভা আসনে নিজেদের দলের প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেছে আইএসএফ। ডায়মন্ড হারবার আসনে আইএসএফের প্রার্থী মজনু লস্কর।
ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। ডায়মন্ড হারবারে সংখ্যালঘু ভোটও বেশি। ফলে ওই আসনে সংখ্যালঘু ভোট টানতে নৌশাদকে প্রার্থী করার সম্ভাবনা নিয়ে কয়েক মাস ধরেই গুঞ্জন ছিল। নৌশাদ নিজেও চেয়েছিলেন অভিষেকের বিরুদ্ধে প্রার্থী হতে। কিন্তু কোথায় কী! তাহলে এত শোরগোল তুলেও ডায়মন্ড হারবার থেকে কেন সরে এলেন নৌশাদ? তৃণমূলকে কি আসন পাইয়ে দিলেন না নৌশাদ?
মার্চ মাসের শেষদিকে ফুরফুরা শরিফেই লোকসভা ভোটের প্রার্থী ঠিক করতে বৈঠকে বসেছিলেন দলের শীর্ষ নেতৃত্ব। জানা গিয়েছে, ওই বৈঠকেই আইএসএফ নেতারা চান নিজে প্রার্থী না হয়ে দলের তারকা প্রচারক হিসাবে কাজ করুন নৌশাদ। বাম আর কংগ্রেসের সঙ্গে যতবারই জোটের আলোচনা হয়েছে বারবর আইএসএফ ডায়মন্ড হারবার আসনটির দাবি জানিয়েছে। বাম-কংগ্রেস নেতৃত্বের তাতে কোনও আপত্তিও নাকি ছিল না। নৌশাদ প্রার্থী হলে সংখ্যালঘু ভোট সেখানে তৃণমূল আর আইএসএফে ভাগ হয়ে যেতই। ভাগ হলে আখেরে লাভ ছিল বিজেপির। কিন্তু নৌশাদ প্রার্থীই হলেন না।
আরও পড়ুন-বিজেপির উপর গোঁসা করেই তৃণমূলে! ‘বহিরাগত’ শত্রুঘ্ন এবারও জিতবেন?
আইএসএফের শীর্ষ নেতৃত্ব বলছে ভাঙড়ের মানুষকে ভয়মুক্ত করেছেন নৌশাদ। তিনি সারা বাংলার মুখ। তাঁকে কোনও কেন্দ্রে আবদ্ধ করে দিতে চাইছে না দলে। এদিকে নৌশাদ বারেবারে বুঝিয়ে দিয়েছেন তিনি এই সিদ্ধান্তে খুশি নন। আইএসএফের মূল রাজনীতিতে উত্থান ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটে। দলের একমাত্র বিধায়ক নৌশাদ। দলের শীর্ষ নেতৃত্বের কাছে বিধায়কের কথার কোনও মূল্য নেই? বিজেপি এখনও এই আসনে প্রার্থী দেয়নি। সিপিএমও দেয়নি কারণ আইএসএফ থেকে নৌশাদ দাঁড়ালে প্রার্থী দেবে না বামেরা, এই কথাই ছিল। নৌশাদ দাঁড়ালে ছবিটা অন্য হতেই পারত। হলো না। তৃণমূলের সঙ্গে সমঝোতা করলেন শেষে? সব দিক থেকে সুবিধা করে দিলেন অভিষেককে?
বিশ্লেষকরা বলছেন, এবারের লোকসভা ভোটে বিজেপি বনাম তৃণমূলই লড়াই। একথা বুঝেই সারা বাংলার নানা জায়গায় 'ভোটকাটুয়া'-র কাজ করতে চাইছে আইএসএফ। শুধু ডায়মন্ডহারবারেই কিন্তু শক্তি ক্ষয় করতে চাইছে না। মোট ১৩টি লোকসভা আসনে প্রার্থী দিয়েছে আইএসএফ। ডায়মন্ড হারবারের পাশাপাশি যাদবপুরেও আইএসএফ প্রার্থী দিয়েছে। যাদবপুরে প্রার্থী করা হয়েছে আইনজীবী নুর আলম খানকে। ভাঙড় বিধানসভা কেন্দ্রটি পড়ে যাদবপুরের মধ্যেই। সেটি আইএসএফের ঘাঁটি। এদিকে বামফ্রন্টের প্রার্থী সেখানে সিপিএমের ছাত্রনেতা সৃজন ভট্টাচার্য। সেখানে সায়নী ঘোষও তৃণমূলের প্রার্থী। সেখানে আইএসএফের প্রার্থী দেওয়া মানে আখেরে সৃজন ভট্টাচার্যের অংশের ভোট কাটা, তাতে আবারও লাভ হবে তৃণমূলের। ডায়মন্ড হারবারের পাশাপাশি আইএসএফ যাদবপুর আসনটিও চেয়েছিল। বাম নেতৃত্ব এই আসন হাতছাড়া করতে চায়নি। যদিও নৌশাদ জানিয়েছিলেন, ওই আসনে সিপিএম নেতা বিকাশ ভট্টাচার্য প্রার্থী হলে তারা আসনটি ছেড়ে দেবেন। কিন্তু প্রার্থী হলেন সৃজন। মুর্শিদাবাদ আসনে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম প্রার্থী হয়েছেন। তাঁর বিরুদ্ধেও প্রার্থী দিয়েছে আইএসএফ। বালুরঘাটে মোজাম্মেল হক, উলুবেড়িয়ায় মফিকুল ইসলাম এবং ব্যারাকপুরে আইনজীবী জামির হোসেন আইএসএফ প্রার্থী হয়েছেন। বসিরহাট লোকসভা কেন্দ্রে আগে শহিদুল ইসলাম মোল্লা প্রার্থী ছিলেন। নতুন প্রার্থী আখতার আলি বিশ্বাস।