ভারতীয় মশলা মানেই বিষ? কেন একের পর এক দেশে জারি নিষেধাজ্ঞা?
কেন বিশ্বজুড়ে নিষিদ্ধ হচ্ছে ভারতীয় মশলা? কেন বিষাক্ত রাসায়নিক সম্পর্কে আগে সতর্ক হয়নি মোদী সরকার?
লোকসভা ভোটের মধ্যেই নয়া বিপদের মুখে ভারত। এবার পড়শি দেশেও নিষিদ্ধ করা হল ভারতীয় মশলা। এর আগে ভারতীয় মশলার উপর নিষেধাজ্ঞা জারির সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সিঙ্গাপুর এবং হংকং। তার পর নেপাল তৃতীয় দেশ, যেখানে নিষিদ্ধ হল ভারতীয় মশলা। ভারতের দু'টি মশলা প্রস্তুতকারক সংস্থাকে সেখানে নিষিদ্ধ বলে জানিয়ে দিয়েছে নেপাল কর্তৃপক্ষ। ভারতীয় মশলা প্রস্তুতকারক সংস্থা 'এমডিএইচ' এবং 'এভারেস্ট'-এর কোনও মশলাই আর ভারত থেকে আমদানি করবে না নেপাল।
কেন এমন সিদ্ধান্ত নেপালের? সূত্রের খবর, সে দেশের খাদ্য প্রযুক্তি ও মান নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থাগুলি ওই দুই সংস্থার মশলার উপাদান ও তার গুণগতমান পরীক্ষা করে দেখেছে। আর তার পরেই সামনে এসেছে বিস্ফোরক তথ্য। নেপাল সরকারের খাদ্য প্রযুক্তি এবং মান নিয়ন্ত্রক বিভাগের মুখপাত্র মোহনকৃষ্ণ মহার্জনের তরফে সংবাদমাধ্য়মকে জানানো হয়েছে, ‘এমডিএইচ এবং এভারেস্টের মশলার আমদানি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। আমাদের এখানে বাজারে ওই মশলা বিক্রিও নিষিদ্ধ করেছি। ওই মশলাগুলিতে ক্ষতিকারক রাসায়নিক রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। তাই এই পদক্ষেপ।’’ পাশাপাশি তিনি এ-ও জানান, ‘‘এই নির্দিষ্ট দু’টি ব্র্যান্ডের মশলায় ক্ষতিকর রাসায়নিক আছে কি না, ঠিক কী ধরনের রাসায়নিক রয়েছে, তা আমরা খতিয়ে দেখছি। পরীক্ষা নিরীক্ষা শুরু হয়েছে। চূড়ান্ত রিপোর্ট হাতে না পাওয়া পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞা জারি থাকবে।’’
কী সেই রাসায়নিক? সূত্রের খবর, মাত্রাতিরিক্ত এথিলিন অক্সাইড নামক কীটনাশক রয়েছে বলে অভিযোগ ওই দু'টি সংস্থার কীটনাশকে। সেই কারণেই ওই সংস্থার মশলাগুলিকে নিষিদ্ধ করে হংকং ও সিঙ্গাপুরে। শুধু তারাই নয়, তার পরে ভারতের ওই দু'টি মশলা উৎপাদক সংস্থার বিভিন্ন পণ্যের উপর নজরদারি চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে একাধিক দেশ। ইতিমধ্যেই ভারতের খাদ্য নিয়ন্ত্রক সংস্থা FSSI-ও ওই মশলা উৎপাদক সংস্থার পণ্যের উপর নজরদারি শুরু করেছে। নেপালের খাদ্য নিয়ন্ত্রক ডিপার্টমেন্ট অব ফুড টেকনোলজি অ্যান্ড কোয়ালিটি কন্ট্রোল জানিয়েছে, সংবাদমাধ্যমের বিভিন্ন রিপোর্ট নজরে আসার পরেই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করেছে তারা। তবে এমডিএইচ ও এভারেস্টের তরফে কিন্তু দাবি করা হয়েছে, তাদের মশলা নিরাপদ।
কেন ক্ষতিকর এই এথিলিন অক্সাইড?
বিশেষজ্ঞমহল ও বিভিন্ন দেশের খাদ্য নিয়ন্ত্রকের বক্তব্য, এথিলিন অক্সাইড নামক এই রাসায়নিকটি শরীরে বেশি পরিমাণে ঢুকতে থাকলে ক্যানসারের আশঙ্কা রয়েছে। নেপালের খাদ্য দফতরের তরফে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘‘ওই চারটি মশলায় নির্ধারিত মাত্রার চেয়ে বেশি এথিলিন অক্সাইড পাওয়া গিয়েছে। খাদ্য নিয়ন্ত্রণ বিধি অনুযায়ী দেশে ওই সমস্ত মশলার আমদানি এবং বিক্রির উপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।’’
সংবাদ সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, হংকং, সিঙ্গাপুর, নেপাল তো রয়েইছে, একই সঙ্গে আমেরিকা, নিউজিল্যান্ড এবং অস্ট্রেলিয়াতেও আতসকাচের তলায় এসেছে ভারতের এই দুই ব্র্যান্ডেড মশলা। তবে এখনও সেই সব দেশে মশলাগুলি নিষিদ্ধ করার মতো চরম পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। কিন্তু সে দেশের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষও যে বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন, তা তাঁদের তরফে স্পষ্ট জানানো হয়েছে। সত্যিই সেই মশলাগুলি থেকে স্বাস্থ্য সংক্রান্ত ঝুঁকি কতটা, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
কেন ব্যবহার করা হয় এই এথিলিন অক্সাইড?
জানা গিয়েছে মশলা জীবাণুমুক্ত করার জন্যই এই রাসায়নিক কীটনাশক ব্যবহার করা হয়। এপ্রিল মাসে এই কীটনাশকের উপস্থিতির অভিযোগ তুলেই ওই দুটি ব্র্যান্ডকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছিল সিঙ্গাপুর। তার পরে সেই একই পথে হাঁটে হংকংও। আর এর পর বড় ধাক্কা এল নেপালের তরফেও।
পৃথিবীর মধ্যে সর্ববৃহৎ মশলা রফতানির বাজার ভারত। গোটা বিশ্বে ভারত থেকে মশলা সরবরাহ হয়। ফলে অর্থনীতির একটা বড় অংশ নির্ভর করে থাকে এই মশলা রফতানির বাজারের উপর। ২০২৩ সালে ভারত গোটা বিশ্বে ৩.৮৯ বিলিয়ন ডলার মূল্যের মশলা রফতানি করেছে বিশ্বে। এবার সেই মশলার বাজারেই আঁচ আসতে শুরু করেছে রাসায়নিক যৌগের সন্ধান মেলাকে কেন্দ্র করে। এর প্রভাব কতখানি পড়তে চলেছে চলতি বছরের অর্থনীতিতে। ভোটের বাজারেই বা কতখানি এর প্রভাব পড়তে চলেছে। মশলা রফতানির সঙ্কট একগুচ্ছ প্রশ্ন সামনে এনে দিয়েছে ভারতের সামনে। তাছাড়া প্রশ্ন উঠছে, নরেন্দ্র মোদীর সরকার এই মশলার গুণমান বিষয়ে আগে কেন সতর্ক হয়নি?