চা ভালোবাসেন? ভয়াবহ দূষণ থেকে যেভাবে আপনাকে বাঁচাচ্ছে এক কাপ চা
Tea Leaves Lead Pollution: যারা ভেষজ চা পছন্দ করেন, তারা জানলে হতাশ হবেন যে ক্যামোমাইল চা একেবারেই ভারী ধাতু ছেঁকে নিতে পারে না। কেন?
চা পাতার গুণ নিয়ে দিস্তে দিস্তে প্রবন্ধ রয়েছে। চুলের যত্ন থেকে গাছের সার, সবেতেই চা পাতার ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। তবে সম্প্রতি নতুন এক গবেষণায়, চা পাতার অন্য এক বিশেষ গুণ উঠে এসেছে। জল থেকে ভারী ধাতু টেনে নিতে পারে চা পাতা। অর্থাৎ সীসা এবং অন্যান্য বিপজ্জনক যৌগের পরিমাণ পানীয় জলে উল্লেখযোগ্যভাবে কমিয়ে দিতে পারে চা পাতা। মানুষ অজান্তেই বিষাক্ত জল খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন, চা পাতা বাঁচাতে পারে তাঁদের!
সাম্প্রতিক নানা গবেষণায় দেখা গেছে জৈব জ্বালানি থেকে গ্লুটেন-মুক্ত কুকিজ পর্যন্ত চা পাতার ব্যবহারের সম্ভাবনা প্রবল। কিন্তু নতুন একটি গবেষণায় দেখা গেছে জনস্বাস্থ্য উন্নতিতে চা পাতাকে ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা যেতে পারে। একটি সমীক্ষা বলছে, সারা বিশ্বে প্রতিদিন প্রায় পাঁচ বিলিয়ন কাপ চা খাওয়া হয়। ফলে সহজেই বোঝা যাচ্ছে, চা পাতার সঙ্গে সরাসরি মানুষের সম্পর্ক বেশ ব্যাপক!
অনেক দেশেই, চায়ের জন্য ব্যবহৃত জল বেশ দূষিত হয়। জলের জরাজীর্ণ পাইপের ফলে জলে সীসার দূষণ বাড়ছে। এনভায়রনমেন্টাল প্রোটেকশন এজেন্সি বলছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে, ৯ মিলিয়ন বাড়িতে জলের পাইপের মাধ্যমে যে জল যায়, সেই জলে সীসা থাকে। সীসা বিশেষ করে শিশুদের জন্য ভয়াবহ বিপজ্জনক। সীসার দূষণের ফলে শিশুদের বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয় এবং আচরণগত সমস্যাও হতে পারে।
আরও পড়ুন-১১০ বছরে এই প্রথম! কেন দার্জিলিং চা বিক্রি বন্ধ হয়ে গেল পর্যটকপ্রিয় গ্লেনারিজে
গবেষক বিনায়ক দ্রাবিড় বলছেন, পরীক্ষা করে দেখা গেছে যে বিভিন্ন ধরনের চা - কালো, সাদা, ওলং, সবুজ, রুইবোস, ভেষজ, পাতা চা এবং সাধারণ পুরনো লিপটন চা - বিভিন্ন পরিমাণে সীসা মিশ্রিত জলে ভিন্ন আচরণ করে। এই বিভিন্ন চা পাতা বিভিন্ন জলে বেশ কিছুক্ষণ ডুবিয়ে রাখা হয়। তারপরে, বিজ্ঞানীরা মেপে দেখেন কোন জলে কতটা সীসা রয়ে গেছে।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, চায়ের পাতায় ক্যাটেচিন নামক যৌগগুলি ছোট ভেলক্রো হুকের মতো কাজ করে যার মধ্যে সীসার অণুগুলি আটকে যায়। ব্রায়ান মাওর কলেজের রসায়নবিদ এবং চায়ের রসায়ন বিষয়ক বইয়ের লেখক মিশেল ফ্রাঙ্কল বলছেন চা পাতার শিরা এবং পাতার উপত্যকা অংশগুলিতেই সীসার সঙ্গে মিথস্ক্রিয়া চলে।
গবেষক দ্রাবিড় এবং তাঁর সহকর্মীরা প্রথম এক কাপ চায়ের সীসা-ডিটক্সিফাইং ক্ষমতা পরীক্ষা করে দেখেন। গবেষকরা দেখতে পান, কালো চা পাতা ওই সীসা যুক্ত জলে অনেকক্ষণ ভেজার পরে কুঁচকে যায়। অর্থাৎ ওই চা পাতাগুলি ভারী ধাতু শোষণ করে নিচ্ছে। গবেষক-লেখক বেঞ্জামিন শিন্ডেল বলছেন, সবুজ চা এবং কালো চা মোটামুটি সমান পরিমাণে ধাতুই শোষণ করে।
সাদা চা কিন্তু বেশি সীসা শোষণ করতে পারে না। দূষিত জলে ভেজার পরেও এর পাতাগুলি মসৃণ থাকে। এই চা পাতাগুলি ছোট হওয়াতে সীসাকে ছেঁকে নেওয়ার ক্ষমতাও কম হয়। যারা ভেষজ চা পছন্দ করেন, তারা জানলে হতাশ হবেন যে ক্যামোমাইল চা একেবারেই ভারী ধাতু ছেঁকে নিতে পারে না। কেন? সম্ভবত এটি চা পাতা নয়, ক্যামোমাইল ফুল দিয়ে তৈরি বলেই এমনটা ঘটে। তবে বিভিন্ন ধরনের চায়ের ফারাকের চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে আমরা কতক্ষণ ধরে চা পাতা ফোটাচ্ছি।
আরও পড়ুন- পানীয় জলে দুর্গন্ধ! কলকাতায় যেভাবে বিষের আধার হয়ে উঠছে জলাভূমিগুলি
গবেষকরা দেখেছেন, যে এক কাপ কালো চা যদি পাঁচ মিনিট ধরে ফোটানো যায় তাহলে জল থেকে ১৫ শতাংশ সীসা কমিয়ে ফেলা যায়। তবে গবেষকরা বলছেন, সীসার সর্বোচ্চ মাত্রার কিন্তু কোনও নিরাপদ স্তরও নেই। তবে সীসা এবং অন্যান্য দূষিত পদার্থ যতটুকু কমানো যায় ততটুকুই মঙ্গল৷
কিন্তু চা পাতা তো আবার বেশিক্ষণ ভিজিয়ে রাখলে চা-টাই তেতো হয়ে যাবে। গবেষক ফ্রাঙ্কল একবার দেখিয়েছিলেন যে চায়ে নুন মেশালে এর তিক্ততা খানিক প্রশমিত হতে পারে। কিন্তু ১০ মিনিট চা ভিজিয়ে রাখলে তারপর যে নুনই দেওয়া হোক না কেন, চায়ের ওই কষাটে ভাব আর কাটানো সম্ভব না বাস্তবে। গবেষকরা কিছু চা পাতা জলে ২৪ ঘণ্টা ভিজিয়ে রেখেছিলেন, সেই চা অবশ্যই আর জিভে দেওয়ার যোগ্য থাকেনি।
গবেষকদের অনুমান, যে দেশের মানুষ প্রচুর পরিমাণে চা খায়, তাঁদের জলে সীসা দূষণে ভোগার আশঙ্কা যে দেশে মানুষরা কোনওদিন চা খায় না, তাঁদের চেয়ে প্রায় ৩ শতাংশ কম। এখানে উল্লেখ্য, চিনে হাজার হাজার বছর ধরে ওষুধ হিসেবে চা ব্যবহার করা হচ্ছে। যত গবেষণা বাড়ছে চায়ের নানা অভূতপূর্ব ব্যবহার সামনে আসছে। সীসা দূষণ এই মুহূর্তের গুরুতর সমস্যাগুলোর একটি। পরিষ্কার পানীয় জল বিশ্বব্যাপী সমস্যা। সেখানে চায়ের এমন ব্যবহার জলকে পরিশুদ্ধ করতে বড় ভূমিকা পালন করবে আগামীতে।