পুজোর আগেই বাংলায় টন টন পদ্মার ইলিশ, রফতানিতে সায় দিতে বাধ্য হল বাংলাদেশ?
Hilsa Fish From Bangladesh: যা জানা যাচ্ছে তাতে প্রথম দফায় যে ইলিশ বাংলায় এসেছে, সেগুলির বেশিরভাগের ওজনই এক কেজি বা তার বেশি। খুচরো বাজারে কত দাম হতে পারে সেই ইলিশের?
রুপোলি শস্য বলে কথা। তার উপর সে ইলিশ যদি পদ্মার হয়, তাহলে তো কথাই নেই। বাঙালির কাছে তার আবেদনই আলাদা। কিন্তু চলতি বছর নানা কারণে বাংলাদেশ থেকে তেমন ইলিশ মাছ সরবরাহ হয়নি বাংলায়। তার উপর বাংলাদেশে রাজনৈতিক অচলাবস্থার কারণে আরওই সঙ্কট তৈরি হয়েছিল ইলিশের রফতানিকে কেন্দ্র করে। তবে দুর্গাপুজোর মুখে মুখে শেষপর্যন্ত সেই জটিলতা কেটেছে। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পরে অবশেষে বৃহস্পতিবার বেনাপোল সীমান্ত পেরিয়ে ভারতের পেট্রাপোল সীমান্তে পৌঁছয় বাংলাদেশের ইলিশ মাছ ভর্তি ট্রাক। প্রথম দফায় ট্রাকে করে প্রায় ১৭২ পেটি পদ্মার ইলিশ পৌঁছেছে বলে খবর।
প্রথম পর্যায়ে বৃহস্পতিবার দুপুর ২:৩০ নাগাদ ঢোকে প্রথম ইলিশের ট্রাকটি। শুল্ক বিভাগের প্রয়োজনীয় অনুমোদন পেতে দেরি হওয়ায় ইলিশের দ্বিতীয় ট্রাকটি ভারতের সীমান্তে পৌঁছতে পৌঁছতে বিকেল গড়িয়ে যায়। ভারতীয় ফিস ইমপোর্টার অ্যাসোসিয়েশনের তরফে জানানো হয়েছে, প্রথম চালানে দু'টি ট্রাকে মোট ৮ টন ইলিশ এসে পৌঁছেছে ভারতে। পেট্রাপোল সীমান্তে ইমপোর্টার্স সুদীপ মজুমদার জানান, আমরা অপেক্ষায় থাকি পুজোর আগে বাংলাদেশের ইলিশ ভোজনরসিকদের পাতে দেওয়ার। কাল থেকেই রাজ্যের নানা প্রান্তের বাজারে মিলবে এই রুপোলি শস্য। আপাতত যে ইলিশগুলি এসেছে তার ওজন এক কেজির বেশি বলেই জানান তিনি। ইলিশ বোঝাই ট্রাক নিয়ে ভারত সীমান্তে আসা বাংলাদেশের চালক জসিম জানান, এই মাছ পাঠানোর মধ্যে দিয়ে দু'দেশের সম্পর্ক আরও দৃঢ় হবে আশা করি। ঢাকা থেকে এই ইলিশ আমরা নিয়ে এসেছি।
আরও পড়ুন: বাজারে পদ্মার ইলিশ কিনতে গিয়ে ঠকছেন? কীভাবে চিনবেন নদীর মাছ, যে তথ্য জানতেই হবে
শেখ হাসিনার আমলে গত কয়েক বছর ধরে নিয়ম করে পশ্চিমবঙ্গে ইলিশ পাঠাত বাংলাদেশ। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকাকালীন ভারতে ইলিশ রপ্তানি কার্যত রীতিতে পরিণত হয়েছিল। তবে সে সরকারের পতনের পর বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ইলিশ পাঠানো নিয়ে টালবাহানা করতে শুরু করে। এমনকী ইলিশ পাঠানো নিয়ে ‘গরম-গরম’ কথাও শোনা যাচ্ছিল বাংলাদেশের একাধিক মহল থেকে। ভারতীয় ফিস ইমপোর্টার অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকেও ইলিশ পাঠানোর অনুরোধ জানিয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছিল মোহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্ভুক্তি সরকারকে। সূত্রের খবর, বিস্তর টালবাহানার পর সম্প্রতি ইলিশ রপ্তানিতে ছাড়পত্র দেয় বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন বাংলাদেশ সরকারের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। গত ২১ সেপ্টেম্বর এই সংক্রান্ত একটি বিজ্ঞপ্তিও জারি করা হয় বাংলাদেশ সরকারের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এখন পর্যন্ত ২ হাজার ৪২০ মেট্রিক টন ইলিশ রপ্তানির অনুমোদন দিয়েছে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। জানানো হয়েছে, আগামী ১২ অক্টোবর পর্যন্ত ইলিশ রপ্তানি করতে পারবেন বাংলাদেশের রপ্তানিকারকেরা।
প্রাথমিকভাবে হাওড়া, পাতিপুকুর, শিয়ালদহ ও শিলিগুড়ির বাজারে পদ্মার ইলিশ পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ফিশ ইমপোর্টার অ্যাসোসিয়েশন সূত্রে খবর, আমদানিকৃত ইলিশ বৃহস্পতিবার রাতের মধ্যেই পৌঁছে যাবে কলকাতার হাওড়া পাতিপুকুর ও বারাসাতের পাইকারি মাছের বাজারে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে লক্ষ্মীবারের সন্ধে থেকেই রাজ্যের বিভিন্ন বাজারে মিলবে রূপোলি শস্য। তা যদি না-ও হয়, শুক্রবারের মধ্যে এপার বাংলার বাঙালিদের হাতে হাতে পদ্মার ইলিশ চলে আসার সম্ভবনা প্রবল। তবে প্রাথমিকভাবে এবার খুচরো বাজারে ইলিশের দাম বেশি থাকতে পারে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন পশ্চিমবঙ্গ ফিস ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আনোয়ার মাকসুদ।
যা জানা যাচ্ছে তাতে প্রথম দফায় যে ইলিশ বাংলায় এসেছে, সেগুলির বেশিরভাগের ওজনই এক কেজি বা তার বেশি। খুচরো পর্যায়ে ভারতীয় বাজারে যার দাম হতে পারে আনুমানিক দু'হাজার টাকা বা তারও কিছু বেশি। ইলিশের দাম নির্ভর করে জোগান ও চাহিদার উপরে। 'কাল-পরশুর মধ্যে বাংলাদেশে বেশি পরিমাণে ইলিশ ধরা পড়লে ভারতের বাজারেও দাম কমবে বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। আর সেই আশাতেই বসে রয়েছেন এপার বাংলার ইলিশ-রসিকরা। অ্যাসোসিয়েশন সূত্রে আরো জানানো হয়েছে, আগামী দু-এক দিনের মধ্যেই আরও সাতটি ট্রাকে মোট ২৮ থেকে ৩০ টন ইলিশ আসার কথা রয়েছে ভারতে। আসন্ন দূর্গা পূজার আগে আমদানিকৃত এই ইলিশ চাহিদার অনেকটাই সামাল দিতে পারবে বলেই মনে করছেন তারা। আর ইলিশের আমদানি বাড়লে দাম কিছুটা কমবে বলেও মনে করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন:শুধু স্বাদেই নয়, পুষ্টিগুণেও মাছের রাজা ইলিশ! উপকারিতা জানলে পাতে তুলতে বাধ্য হবেন
এখনও ১২ অক্টোবর পর্যন্ত হাতে সময় আছে। ততদিনে মধ্যবিত্তদের জন্য ইলিশের বাজার খানিকটা সহজ হবে বলেই মনে করছেন ফিস ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক মাকসুদ। বিস্তর টালবাহানার পরে অবশেষে ভারতকে পদ্মার ইলিশ পাঠাতে রাজি হয়েছে বাংলাদেশ। বেশ কিছু দিন ধরেই একাধিক বিষয় নিয়ে ভারতের উপর ক্ষোভপ্রকাশ করে আসছে বাংলাদেশ। শোনা যাচ্ছে, এর মধ্যেই আবার ইলিশ রফতানি বন্ধ করতে চেয়ে বাংলাদেশের হাইকোর্টে রিট পিটিশন দায়ের করেছেন এক আইনজীবী। সাম্প্রতিক ত্রিপুরার বন্যা ও বাংলাদেশের একাধিক জায়গায় জল বেড়ে যাওয়া নিয়েও ভারতকে এক হাত নিয়েছিল বাংলাদেশ। ফলে এই বার পুজোর আগে ইলিশ রফতানি নিয়ে যত টালবাহানা করেছে বাংলাদেশের নয়া সরকার, তাতে পুজোর আগে বাংলার পাতে পদ্মার ইলিশের স্বাদ কার্যত অনিশ্চিতই হয়ে পড়েছিল। অবশেষে সেই জটিলতা কেটেছে। তবে এর নেপথ্যে যে আদতে বাংলাদেশের নিজস্ব স্বার্থ জড়িয়ে রয়েছে, তা স্বীকার করে নিয়েছেন বাংলাদেশের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং জলসম্পদ মন্ত্রকের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। তিনি জানান, বাংলাদেশে ডলারের ভাঁড়ারের হাল খুবই খারাপ। এই পরিস্থিতিতে মূলত ডলারের জন্যই ভারতে ইলিশ পাঠাতে বাধ্য হচ্ছে বাংলাদেশের নতুন সরকার। তবে শেষপর্যন্ত কারণ যা-ই হোক না কেন, সাধের পদ্মার ইলিশ যে শেষমেশ পুজোর আগেই পাতে পড়তে চলেছে, তাতেই খুশি মৎস্যপ্রিয় আমবাঙালিরা।