Climate Change: আগামী দিনে খেয়ে-পরে বাঁচবে তো মানুষ? যে আশঙ্কার কথা জানালেন পরিবেশবিজ্ঞানীরা
Global Warming; ২০২৩ সাল বিশ্ব ইতিহাসে সবচেয়ে উষ্ণতম বছর। ওই বছর রেকর্ড তাপমাত্রা লক্ষ্য করা গিয়েছে বিশ্ব জুড়েই। বিশেষত জীবাশ্ম জ্বালানীর বাড়বাড়ন্ত আরও বাড়িয়ে চলেছে উষ্ণায়নের সমস্যাকে।
এখনকার খাবার মানেই ভেজাল। আজকের পৃথিবীতে ভেজালহীন খাবার যেন সোনার পাথরবাটি। অথচ আজ থেকে একশো বছর আগেও খাবারদাবারে এই পরিমাণ ভেজাল সমস্যা চোখে পড়ত না। খেতে মিলত বিশুদ্ধ সবজি, গাছে মিলত ফল। পুকুরে বিশুদ্ধ মাছ। অথচ সেই জায়গাটাই গত কয়েক বছরে আমূল বদলে গিয়েছে। এখন সবেতেই কীটনাশক, বিষ। ফলে পুষ্টিও থেকে যায় অধরাই। গোটা বিশ্ব জুড়ে যে খাদ্যকে ঘিরে যে নিরাপত্তাহীনতা বেড়েই চলেছে দিন কে দিন, তার নেপথ্যে আসলে ঠিক কী কারণ? সম্প্রতি স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞেরা অবশ্য তার জন্য দায়ী করেছেন জলবায়ু পরিবর্তনকেই।
ক্রমে বিশ্বজুড়ে বাড়ছে গরম। বিশ্ব উষ্ণায়নের যে প্রভাবের কথা পরিবেশবিদেরা বলে বলে মুখ ব্যথা করত এতদিন, তা সচক্ষে দেখা গিয়েছে গত কয়েক বছর ধরে। যে সব জায়গায় কার্যত গরম পড়তই না বলা চলে, সেখানেও তাপপ্রবাহের সমস্যা দেখা দিচ্ছে। এই যে দিনে দিনে ভয়ঙ্কর গরমের উৎপাত, তার জন্য কিন্তু পরিবেশবিদেরা দুষেছেন জলবায়ু পরিবর্তনের মতো সমস্যাকেই। চলতি বছর গরমের শ্রীবৃদ্ধির জন্য এলনিনো-র খানিকটা ভূমিকা থাকলেও বিশ্ব উষ্ণায়নের নেপথ্যে রয়েছে পরিবেশ দূষণের মতো সমস্যা, তা একবাক্যে মানবেন সকলে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের দাবি, এই ভয়ঙ্কর যে উষ্ণায়ন এবং তার জন্য় পাল্টে যাওয়া জলবায়ু তা যেমন বিশ্বজুড়ে খরার সমস্যাকে বাড়িয়েছে, তেমনই গোটা বিশ্বের খাদ্য-নিরাপত্তাকেও বিপজ্জনক জায়গায় ঠেলে দিয়েছে।
আরও পড়ুন: ১০০-তে শূন্য! প্রকৃতি সংরক্ষণ সূচকে কেন এমন লজ্জাজনক অবস্থা ভারতের?
২০২৩ সাল বিশ্ব ইতিহাসে সবচেয়ে উষ্ণতম বছর। ওই বছর রেকর্ড তাপমাত্রা লক্ষ্য করা গিয়েছে বিশ্ব জুড়েই। বিশেষত জীবাশ্ম জ্বালানীর বাড়বাড়ন্ত আরও বাড়িয়ে চলেছে উষ্ণায়নের সমস্যাকে। ল্যানসেট কাউন্টডাউনের রিপোর্ট বলছে, গত ৬৫ বছরে ২০২৩ সালে তাপজনীত কারণে মৃত্যুর সংখ্যা উল্লেখযোগ্য রকমের বেশি। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন প্রবীণেরা। ১৯৯০ সালেও গরমের কারণে প্রচুর মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। কিন্তু সেই সংখ্যাকে ছাপিয়ে গিয়েছে গত বছরের রিপোর্ট। ল্যানসেট কাউন্টডাউনের এগজিকিউটিভ ডিরেক্টর মেরিনা বেলেন রোমানেলো আশঙ্কা করছেন, বছর বছর জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে এই ধরনের মৃত্যুর সংখ্যা আরও বাড়বে। একই সঙ্গে বাড়বে নানাবিধ অসুখও।
উদাহরণ হিসেবে মেরিনা জানান, যাঁরা বাইরে শারীরিক কসরত বা ব্য়ায়াম করেন, তাঁদের ঝুঁকি ক্রমশ বাড়ছে। একই সঙ্গে ভয়ঙ্কর গরমের জন্য শ্রমের সময়ের উপরেও গুরুতর প্রভাব পড়ছে। গত বছর চরম উত্তাপের কারণে বিশ্বের আনুমানিক ৫১২ বিলিয়ন সম্ভাব্য শ্রমঘণ্টা বরবাদ হয়েছে। যেখান থেকে শত শত বিলিয়ন আয় করা সম্ভব ছিল।
এমনিতে কোভিড অতিমারি আমাদের জীবনযাপনের উপরে বড়সড় প্রভাব ফেলেছে। বদলে গিয়েছে মানুষের কাজের অভ্যাস। বাইরের তুলনায় ঘরে বসে কাজ করাকেই মানুষ নতুন অভ্যাস বানিয়ে ফেলেছে। সেই পরিস্থিতিকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে উষ্ণায়নের সমস্যা। এসবের পাশাপাশি সবচেয়ে বড় যে সমস্যা দেখা যাচ্ছে এই উষ্ণায়নের জেরে, তা হল খাদ্যসমস্যা। দেখা গিয়েছে, গত বছর বিশ্বের অন্তত ৪৮ শতাংশ ভূমিই চরম খরা পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছে। যার জন্য চাষাবাদ, ভালো ফলনের আশা কোনওটাই তেমন ভাবে করা যাচ্ছে না। ফসল ফলানোর জন্য নানা ধরনের রাসায়নিক সার, কেমিক্যালের ব্যবহার বাড়ছে। তাতে ফলন বাড়লেও কমছে খাদ্যের পুষ্টিগুণ।
বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, যার জেরে ১৯৮১-২০১০ সাল, এই দীর্ঘ সময়ের চেয়ে গত কয়েক বছরে কার্যত ১৫১ মিলিয়ন মানুষ খাদ্য নিয়ে ভয়ঙ্কর নিরাপত্তাহীনতার মুখে পড়েছেন। এবং এই সমস্যা উত্তরোত্তর আরও বাড়ছে। সামগ্রিক জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বেড়েছে বৃষ্টির পরিমাণও। গত বছর অতিবৃষ্টির জেরে ক্ষতির মুখে পড়েছে প্রায় ৬০ শতাংশ জমিই। বন্যাপরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, দূষিত হয়েছে জল এবং যার জেরে সংক্রামক রোগের ঝঁকি ক্রমশ বেড়েছে।
আরও পড়ুন:ফুরিয়ে যাচ্ছে আমাজন, চার দশকে যেভাবে কুঠার চলেছে বিশ্বের বৃহত্তম বৃষ্টিঅরণ্যে
কীভাবে এই বিশ্বজনীন সমস্য়া থেকে রেহাই মিলবে? জলবায়ু পরিবর্তনের মতো সমস্যা নিয়ে একটা দীর্ঘ সময় ধরে মাথাই ঘামাতে চাননি বিশ্বনেতারা। যদিও পরিবেশবিদদের এ নিয়ে উদ্বেগের অন্ত নেই। রাষ্ট্রসঙ্ঘের মহাসচিব আন্তেনিও গুতারেস জানাচ্ছেন, জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমাতে না পারলে সকলের জন্য নিরাপদ, স্বাস্থ্যকর ভবিষ্যত তৈরির আশা ক্রমশ দূরতর দ্বীপ হয়ে যেতে চলেছে আগামী দিনে। তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়বে সংক্রামক ব্যধি। এখন থেকে সতর্ক না হলে অচিরেই অন্ধকার নামবে গোটা বিশ্ব জুড়ে, সে ব্যপারে নিশ্চিত বিশেষজ্ঞ মহল।