ভাঙাচোরা প্লাস্টিকের বদলে খাবার! কোথায় আছে এই অদ্ভুত আবর্জনা ক্যাফে?
Garbage Café: এই গারবেজ ক্যাফেতে হাফ কেজি প্লাস্টিক বর্জ্যের বিনিময়ে আপনি পাবেন প্রাতঃরাশ। প্রাতঃরাশে কী কী মেলে?
শীত এলেই খাই-খাই করে মন। ভালোটা-মন্দটা পেটে পুরতে বড় সাধ হয়। চারদিক থেকে ভেসে আসা খাবারের গন্ধে মন উথাল-পাথাল করে। মন টানে, পকেট পিছনে টানে। শখ আর সাধ্যের মধ্যে ছোটখাট বিশ্বযুদ্ধ বাঁধে। যদি পকেট পাতলা না করেই এমন সব সুখাদ্য পেটস্থ করা যেত! মানে যত ইচ্ছা খাব, পয়সা লাগবে না, এমন ইউটোপিয়ান দিন কি আসতে পারে না? আসতে পারে, এসে গেছেও! খিদে পেলে টাকা দিয়ে কিনতে হবে না আর। বাড়ির ভাঙাচোরা প্লাস্টিক নিয়ে গেলেই হবে।
শীতে নানা ক্যাফে, রেস্তোরাঁ খুঁজে নতুন খাবার, নতুন পরিবেশ 'ট্রাই' করতে ভালোবাসেন অনেকেই। এবার শীতে নতুন এই অদ্ভুত ক্যাফেতে যেতেই পারেন সুযোগ হলে। খিদে পেলেও লাগবে না পয়সা। ছত্তিশগড়ের অম্বিকাপুর জেলায় এমনই এক অদ্ভুত ক্যাফে রয়েছে। সেখানে খাবার কিনতে পয়সা লাগে না। লাগে প্লাস্টিক বর্জ্য। আশ্চর্যজনক এই ক্যাফের নামটাও তেমনই, গারবেজ ক্যাফে! ধরা যাক, ৬ টা প্লাস্টিকের বোতল নিয়ে এলেন আপনি, বিনিময়ে পেলেন ১ প্লেট কাবাব! প্লাস্টিকের বোতল বা অন্যান্য বর্জ্য নিয়ে এলেই বিনামূল্যে খাবার পরিবেশন করা হয় গ্রাহকদের।
আরও পড়ুন- নাম রয়েছে গিনেস বুকেও, জানেন বিশ্বের প্রাচীনতম নিরামিষ রেস্তোরাঁটি কোথায় অবস্থিত?
প্লাস্টিক দূষণ মোকাবিলা এবং পরিবেশের ভারসাম্যকে আরেকটু দীর্ঘস্থায়ী করে তোলার লক্ষ্যেই এই ক্যাফে তৈরি। পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখার উদ্দেশ্যে ভারতে এমন উদ্যোগ এই প্রথম। অম্বিকাপুর এমনিও পরিচ্ছন্নতার জন্য বিখ্যাত। ইন্দোরের পাশাপাশিই ভারতের অন্যতম পরিচ্ছন্ন শহর হিসাবে জায়গা করে নিয়েছে অম্বিকাপুর। শহরটিকে প্লাস্টিক-মুক্ত করার প্রচেষ্টায় এই ক্যাফের যাত্রা শুরু।
এই গারবেজ ক্যাফেতে হাফ কেজি প্লাস্টিক বর্জ্যের বিনিময়ে আপনি পাবেন প্রাতঃরাশ। প্রাতঃরাশে কী কী মেলে এই ক্যাফেতে? আলুর চাপ, ইডলি, সমোসা এবং পাউরুটির চপ পাবেন মেনুতে। ১ কেজি প্লাস্টিক বর্জ্য নিয়ে এলে স্বাস্থ্যকর পেটভরা দুপুরের খাবার উপভোগ করতে পারবেন। পাবেন চারটি রুটি, দুই ধরনের সবজি, ডাল, হাফ প্লেট ভাত, স্যালাড, দই, আচার এবং পাঁপড় থাকে।
আসলে কেবল প্লাস্টিক দূষণের সমস্যার সমাধান করাই লক্ষ্য না। এই পৃথিবীতে কেউ যেন না খেয়ে থাকে সেই লক্ষ্যেও কাজ করছে ক্যাফেটি। যারা প্লাস্টিক বর্জ্য আনেন না তাঁদের জন্য ক্যাফেতে নামমাত্র মূল্যে খাবার পাওয়া যায়। ৪০ টাকা দিলেই একজন পেটভরে খেতে পারবেন সাধারণ শাকসবজি, ভাত, ডাল, আচার এবং স্যালাড। ৫০ টাকার থালিতে পাবেন দু'টি সাধারণ সবজি, চারটি রুটি, ডাল, ভাত, স্যালাড, পাঁপড় এবং আচার। ৭০ টাকার থালিতে পাওয়া যায় পনিরের তরকারি, দুই ধরনের সবজি, ভাত, ডাল, আচার এবং স্যালাড।
আরও পড়ুন- সুরা-মাংস-কবরখানার পথ! যেভাবে বদলে যাচ্ছে পার্কস্ট্রিটের সড়ক বাস্তবতা
ভারতে প্রতিদিন ২৬,০০০ টন প্লাস্টিক বর্জ্য উৎপন্ন হয়। এই বর্জ্য পরিবেশের জন্য বিষাক্ত! প্লাস্টিক জলপথ আটকে দেয়, জমি দূষিত করে এবং বন্যপ্রাণীকেও বিপন্ন করে তোলে। পাশাপাশি, ভারতের ১৪০ কোটি নাগরিকের অর্ধেকেরও বেশি দারিদ্র্যের মধ্যেই বাস করে। খাবারের মতো মৌলিক চাহিদা মেটাতেও হিমশিম খায় মানুষ। বেলজিয়াম এবং কম্বোডিয়ায় ঠিক এমনই ক্যাফে রয়েছে। গারবেজ ক্যাফের অনুপ্রেরণাও সেখান থেকেই পাওয়া। ভারতের প্রথম এই গারবেজ ক্যাফেতে প্লাস্টিকের নির্দিষ্ট বর্জ্য নিয়ে এলেই বিনিময়ে কুপন দেওয়া হয়।
তারপর কুপনগুলি শহরের প্রধান বাস স্ট্যান্ডে অবস্থিত গারবেজ ক্যাফেতে নিয়ে যাওয়া হয়। এখানে, সকালের বা দুপুরের খাবার পাওয়া যায় কুপন দেখালেই। সংগৃহীত প্লাস্টিক রিসাইক্লিং প্ল্যান্টে পাঠানো হয়। সেখানে এগুলি প্লাস্টিকের কণায় রূপান্তরিত হয়। মজার বিষয় হচ্ছে, ভারত এখন রাস্তা নির্মাণে প্লাস্টিকের ব্যবহার করেছে। ৩৪,০০০ কিলোমিটারেরও বেশি প্লাস্টিকের রাস্তা ইতিমধ্যেই সারা দেশে, বিশেষ করে গ্রামীণ এলাকায় তৈরি হয়েছে।