শীত পড়তেই দেদার খাচ্ছেন কফি? যেভাবে অকাল বার্ধক্য ডেকে আনছেন অজান্তেই
Coffee and Skin Problem: যারা ক্যারামেল-হুইপড-ক্রিম-ভ্যানিলা-অ্যাফোগাটো-মোকাচিনো ভালোবাসেন, তারা সাবধান।
শীত মানেই কফিবেলা। সাধারণত অফিসে বসে যাদের কাজ, আধঘণ্টা-একঘণ্টা অন্তর বিরতিতে উঠলেই মন কফি-কফি ডাক দেয়। সকাল, সন্ধে চায়ের চেয়েও বেশি আরাম দেয় কফি। কফিপ্রেমিকদের কাছে ক্যাফিনজাত ক্ষয়ক্ষতির পাল্টা বিস্তর যুক্তিও আছে। তবে, তাতে সত্য বদলায় না। কফি সুদিন-দুর্দিনের সঙ্গী ঠিকই। কিন্তু সেই ক্যাফিনের কারণেই নষ্টও হয়ে যাচ্ছে আপনার ত্বক।কফিপ্রেমীরা, এ কথা কঠিন হলেও সত্য যে প্রিয় কফির চুমুক আপনাকে আনন্দ দিলেও, ধীরে ধীরে ত্বককে নিস্তেজ করে দিচ্ছে।
কফি এবং ডিহাইড্রেশন
দিনের শুরুতেই কফির প্রথম কাপে চুমুক দিলে মনে হয়, সমস্ত উদ্বেগ কেটে গেল, মনে হয় কাজে উদ্যম আসছে ভরপুর। কফি কি সত্যিই মানুষের উত্পাদনশীলতা বাড়ায়? কফি যতটা দেয় ততটাই নিয়েও নেয়! ক্যাফিন কিন্তু কুখ্যাত মূত্রবর্ধক। ফলে কিডনিকে আরও বেশি প্রস্রাব তৈরি করতে বাধ্য করে কফি, যার অর্থ ঘন ঘন বাথরুমে যাওয়া বেড়ে যায়। অর্থাৎ শরীরের হাইড্রেশনের মাত্রা কমে যায়। ত্বক ক্রমেই ডিহাইড্রেটেড হয়। শুষ্ক ত্বক, সাদা দাগ ত্বকের বারোটা বাজিয়ে দেয়।
আরও পড়ুন- শীত শীত ভাব, দেদার চুমুক কফিতে, অজান্তেই ডেকে আনছেন না তো ভয়ানক বিপদ?
তাহলে কফি জীবন থেকে বাদ? না। তবে, গ্রীষ্ম বা শীত যাই হোক না কেন, কফি খাওয়ার আগে এক গ্লাস জল অবশ্যই খান। যত কাপ কফি, তত গ্লাস জল। এটি আপনার ত্বককে শুষ্ক হওয়া থেকে বাঁচাবে।
অ্যাসিডিটি আসে কফির ছায়াসঙ্গী হয়ে
ক্যাফেইনের অ্যাসিডিক প্রকৃতি আপনার হরমোনগুলিকে ঘেঁটে দিতে পারে। যার ফলে আপনার ত্বকের তেল গ্রন্থিগুলি বেশি সক্রিয় হয়ে যেতেও পারে। আপনি যত বেশি ক্যাফেইন খাবেন, আপনার ত্বকের তৈলাক্ত হওয়ার ঝুঁকিও তত বেশি। যার ফলে ব্রণ হওয়ার পরিমাণও বাড়বে। যারা ক্যারামেল-হুইপড-ক্রিম-ভ্যানিলা-অ্যাফোগাটো-মোকাচিনো ভালোবাসেন, তারা সাবধান। ব্রণ হওয়ার সমস্যার পিছনে মূল কারণ এটিই। দুধই হরমোন পরিবর্তনের মূল উপাদান, যার ফলে ব্রণ দেখা দেয়।
এর সঙ্গেই রয়েছে আরেকটি উপাদান, যা সার্বিকভাবে স্বাস্থ্যের ক্ষতি করে। চিনি। এটি গ্লাইকেশন নামক একটি প্রতিক্রিয়া শুরু করে, যা আপনার ত্বকের কোলাজেনকে দুর্বল করে দেয়। কোলাজেন আমাদের ত্বককে রক্ষা করে। তাই, বলিরেখা, ব্রণ আর দাগমুক্ত ত্বকের জন্য দুধ-চিনি-ক্রিম দেওয়া ঘন কফি বর্জন করুন!
অনেকেই রাতে কাজের সময় ঘুম তাড়াতে কফির শরণাপন্ন হন। হ্যাঁ, কফি এই কজে দুর্দান্ত পারদর্শী। কিন্তু ঘুমের অভাবে শরীরের অন্য ক্ষতিও করে দেয় কফি। এমনিতেই ইদানিং মানুষের ঘুমের ঠিক নেই। ঘুমের ধরণ জট পাকিয়ে জগাখিচুড়ি। ঘুমের অভাবে ত্বকের ক্ষতিও হয় বিপুল। ঘুমের অভাব তাড়াতাড়ি বার্ধক্য নিয়ে আসে, ডার্ক সার্কেলের কথা নয় বাদই রইল!
আরও পড়ুন- ১০ বছর ধরে একটি কফি মেশিনের দিকে তাক করা ছিল বিশ্বের প্রথম ওয়েবক্যাম! কেন?
সারাদিনের কাজ এবং চাপ থেকে ত্বকে আরাম দিতে কিছু নির্দিষ্ট সময় প্রয়োজন। এখানেই ঘুমের ভূমিকা অপরিসীম। সঠিক আর পর্যাপ্ত ঘুম না হলে সবচেয়ে বড় ক্ষতি হয় ত্বকের। তাই ত্বকের ভালো চাইলে দুপুরের পরে আর ক্যাফিন জাতীয় কিছু না খাওয়াই ভালো। ভেষজ চা খেতে পারেন।
ক্যাফিন দিনের শুরুতে দুর্দান্ত মনে হতেই পারে। তবে মাথায় রাখবেন, স্ট্রেস বাড়ানোর জন্যও ক্যাফিনের জুড়ি মেলা ভার। এটি আমাদের দেহে চাপের নানা প্রতিক্রিয়াগুলিকে উস্কে দেয়। যার ফলে কর্টিসলের মাত্রা বাড়ে। কর্টিসল হচ্ছে সেই হরমোনটি যা ত্বকে তেলের উৎপাদন বাড়াতে পারে। কফি কিন্তু সরাসরি ব্রণ সৃষ্টি করতে পারে না, তবে এটি আপনার ত্বককে তৈলাক্ত করে তুলতে পারে, যা ব্রণ হওয়ার আশঙ্কা আরও বেশি বাড়িয়ে তোলে। সাধারণত যদি বেশিই চাপ অনুভব করেন তাহলে কফি খাওয়া কমান। জীবনের অন্য সব কিছুর মতোই কফির ক্ষেত্রেও সংযম গুরুত্বপূর্ণ। প্রতি কাপ কফির আগে এক গ্লাস জল খান এবং দুধ-চিনিমুক্ত কফি খান।