বৈধ ভিসা থাকা সত্ত্বেও ভারতে ঢুকতে বাধা বিশ্ববন্দিত হিন্দি গবেষককে
Renowned Hindi Scholar Francesca Orsini: এই ঘটনাকে ঘিরে এখনও পর্যন্ত ভারত সরকার বা দিল্লি বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন বিভাগ কোনো ব্যাখ্যা দেয়নি। কেন তাঁকে দেশে ঢুকতে দেওয়া হয়নি, সে নিয়েও সরকারের তরফে কোনো মন্তব্য আসেনি।
বিশ্ববন্দিত হিন্দি ভাষা ও সাহিত্য গবেষক ফ্রান্সেসকা অরসিনি (Francesca Orsini)-কে দিল্লি বিমানবন্দর থেকে ফিরিয়ে দেওয়া হলো। অথচ তাঁর কাছে ভারতের বৈধ পাঁচ বছরের ভিসা ছিল। কেন তাঁকে পত্রপাঠ বিদায় জানানো হচ্ছে, তার কোনো সদুত্তর মেলেনি। এই ঘটনায় দেশের শিক্ষা ও গবেষণার স্বাধীনতা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে।
অরসিনি হংকং থেকে দিল্লি আসেন ২১ অক্টোবর রাতে। বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশন কাউন্টারে কর্মকর্তারা তাঁর ভিসা দেখেও প্রবেশের অনুমতি দেননি। তাঁকে শুধু জানানো হয়, "আপনাকে ভারতে ঢুকতে দেওয়া হবে না, আপনাকে ফেরত পাঠানো হচ্ছে।” তিনি নিজেই পরে বলেন, “আমাকে কোনো কারণ জানানো হয়নি।” অরসিনি এর আগেও বহুবার ভারতে এসেছেন। গত বছরও তিনি দিল্লি ও অন্যান্য শহরে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছিলেন। তাই এবার এমন আচরণে তিনি নিজেও অবাক।
এই ঘটনাকে ঘিরে এখনও পর্যন্ত ভারত সরকার বা দিল্লি বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন বিভাগ কোনো ব্যাখ্যা দেয়নি। কেন তাঁকে দেশে ঢুকতে দেওয়া হয়নি, সে নিয়েও সরকারের তরফে কোনো মন্তব্য আসেনি।
আরও পড়ুন
সংখ্যার রাজনীতিতে জাভেদ আখতাররাই চিরশত্রু
ফ্রান্সেসকা অরসিনি লন্ডনের SOAS University of London-এর অধ্যাপক (Professor Emeritus)। তিনি হিন্দি সাহিত্য, ভারতীয় ভাষা ও উপনিবেশ– পরবর্তী সংস্কৃতি নিয়ে গবেষণার জন্য বিশ্বজুড়ে খ্যাতি অর্জন করেছেন। তাঁর লেখা ও গবেষণা ভারতের অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠ্য হিসেবেও ব্যবহৃত হয়।
এই প্রথম নয়। সাম্প্রতিক কয়েক বছরে আরও কয়েকজন বিদেশি গবেষক ও অধ্যাপককে ভারতে প্রবেশে বাধা দেওয়া হয়েছে।
•২০২২ সালে, ব্রিটিশ অধ্যাপক ফিলিপো ওসেলা (Filippo Osella)-কে কোচি বিমানবন্দর থেকে ফেরত পাঠানো হয়, কোনো কারণ না জানিয়ে।
•লিন্ডসে ব্রেমনার (Lindsay Bremner) নামের আরেক ব্রিটিশ স্থাপত্যবিদকেও একই রকম ভাবে ফিরিয়ে দেওয়া হয়।
•২০২৪ সালে, কাশ্মীরি–ব্রিটিশ অধ্যাপক নিতাশা কৌল (Nitasha Kaul) কর্নাটকে এক সম্মেলনে যোগ এসেছিলেন, তাঁকেও বিমানবন্দরে আটকে দেওয়া হয়। পরে তাঁর OCI কার্ডও বাতিল করা হয়।
আরও পড়ুন
মুক্তমনা বলেই বাতিল করতে হলো জাভেদ আখতারের অনুষ্ঠান?
অরসিনি-কে ফিরিয়ে দেওয়ার ঘটনায় শিক্ষাবিদ ও গবেষক মহলে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। তাঁদের মতে, এ ধরনের ঘটনা আন্তর্জাতিকভাবে ভারতের একাডেমিক স্বাধীনতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। বিদেশি পণ্ডিতদের যদি আসতেই না দেওয়া হয়, তবে ভারতের বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা ক্ষেত্র ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এতে দেশের ভাবমূর্তিও নষ্ট হচ্ছে। এখানে বলা জরুরি, ভারত বহুদিন ধরেই বিদেশি শিক্ষাবিদ ও গবেষকদের কাছে আকর্ষণের জায়গা ছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক ঘটনাগুলি সেই চিত্র পাল্টে দিচ্ছে। এখন অনেকেই ভাবছেন— ভারত কি সত্যিই মুক্তভাবে গবেষণার জায়গা হিসেবে নিরাপদ?
উল্লেখ্য, ফ্রান্সেসকা অরসিনির এই ঘটনা শুধু একজন ব্যক্তির অপমান নয়, এটি ভারতের শিক্ষা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার সংকটের প্রতিচ্ছবি। সরকারের উচিত এ বিষয়ে স্পষ্ট ব্যাখ্যা দেওয়া এবং ভবিষ্যতে যেন কোনো গবেষককে এমনভাবে ফেরত যেতে না হয়, তা নিশ্চিত করা। শিক্ষাবিদদের জন্য উন্মুক্ত ও স্বাধীন পরিবেশ বজায় রাখা একটি সভ্য সমাজের দায়িত্ব— সেই দায়িত্বে ভারতের অবস্থান এখন প্রশ্নের মুখে।

Whatsapp
