কলকাতা জুড়ে কম্পন, বাংলাদেশে নিহত ৩! সবচেয়ে ভয়াবহ ৬টি ভূমিকম্পের ঘটনা

Worlds Biggest Earthquakes: আধুনিক ভূকম্পবিজ্ঞানের সূচনা (১৯০০ সাল) হওয়ার পর থেকে থেকে আজ পর্যন্ত পাঁচটি ভূমিকম্প ৮.৮ মাত্রার কম্পনের চেয়ে বেশ ছিল।

কলকাতা জুড়ে শুক্রবার অনুভূত হয় মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্প। রিখটার স্কেলে কম্পনের মাত্রা ছিল ৫.৭, যার উৎসস্থল বাংলাদেশের নরসিংদি; ঢাকা থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার দূরে এবং মাত্র ১০ কিলোমিটার গভীরতায়। ইউএসজিএস জানিয়েছে, বাংলাদেশে ভূমিকম্প আঘাত হানার পর এর প্রভাব স্পষ্টভাবে টের পাওয়া যায় কলকাতার উত্তর-দক্ষিণের বিভিন্ন অংশে। কোচবিহার, মালদা, নদিয়া ও দক্ষিণ দিনাজপুরেও কম্পন অনুভূত হয়েছে। এখনও পর্যন্ত কোনো ক্ষয়ক্ষতি বা হতাহতের খবর নেই। তবে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য দফতরের তথ্য অনুযায়ী, আজকের ভূমিকম্পে বাংলাদেশে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। ঢাকা, নরসিংদি ও গাজীপুরে আহত হয়েছেন আরও অন্তত পঞ্চাশজন। দেখে নেওয়া যাক, বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী ভূমিকম্প কোনগুলো?

আধুনিক ভূকম্পবিজ্ঞানের সূচনা (১৯০০ সাল) হওয়ার পর থেকে থেকে আজ পর্যন্ত পাঁচটি ভূমিকম্প ৮.৮ মাত্রার কম্পনের চেয়ে বেশ ছিল।

• সবচেয়ে শক্তিশালী ছিল ১৯৬০ সালের চিলির ভালডিভিয়া ভূমিকম্প (মাত্রা ৯.৫)। এতে ১,৬৫৫ জনের প্রাণহানি ও প্রায় ২০ লাখ মানুষের ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়।

• দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ১৯৬৪ সালের আলাস্কার ভূমিকম্প (মাত্রা ৯.২)।

• ২০১১ সালের জাপানের গেট তোহোকু ভূমিকম্পের ফলে ভয়ংকর সুনামি ও ফুকুশিমা পারমাণবিক বিপর্যয় ঘটে; মাত্রার দিক থেকে বিশ্বে তৃতীয় স্থানে রয়েছে।

আরও পড়ুন

সুনামির ‘ T’ কেন উচ্চারিত হয় না?

• ২০০৪ সালের সুমাত্রা ভূমিকম্প (৯.১ মাত্রা) রয়েছে চতুর্থ স্থানে।

• ২০১০ সালের চিলির ও ১৯০৬ সালের ইকুয়েডরের উপকূলে হওয়া ৮.৮ মাত্রার ভূমিকম্প ছিল তালিকার পরবর্তী নাম।

• রাশিয়ার ক্যামচাটকা উপদ্বীপের কাছে চলতি বছরের ৩০ জুলাই আঘাত হানা ৮.৮ মাত্রার ভয়াবহ ভূমিকম্পটি বিশ্বের ষষ্ঠ শক্তিশালী ভূমিকম্প হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়েছে। এর আগেও ক্যামচাটকা এই মাত্রার একটি ভয়াবহ ভূমিকম্পের সাক্ষী ছিল ১৯৫২ সালে ৯ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানে; সেবার সুনামিতে হাওয়াইয়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল।

কেন হয় এত শক্তিশালী ভূমিকম্প?

শক্তিশালী ভূমিকম্প হওয়ার মূল কারণ পৃথিবীর টেকটোনিক প্লেটগুলোর নড়াচড়া। সহজভাবে বলা যায়, টেকটোনিক প্লেটের সংঘর্ষ। পৃথিবীর বাইরের অংশ কয়েকটি ছোট-বড় প্লেটে ভাগ করা। এই প্লেটগুলো বছরে কয়েক সেন্টিমিটার হারে নড়ে। কিন্তু কখনও কখনও প্লেটগুলো একে অপরের দিকে সরে এসে আটকে যায়। এতে বছরের পর বছর প্রচুর চাপ সৃষ্টি হয়। একসময় প্লেটগুলো সহ্যক্ষমতার বাইরে চলে গেলে হঠাৎ পিছলে যায় বা ভেঙে যায়। এর ফলেই ভূমিকম্পগুলো হয়।

আবার সামুদ্রিক প্লেট যখন মহাদেশীয় প্লেটের (সাবডাকশন) নিচে ঢুকে যায়, তখন বিশাল এলাকার তলদেশ নড়ে। পৃথিবীর বেশিরভাগ শক্তিশালী ভূমিকম্প (৯ মাত্রার কাছাকাছি) এই অঞ্চলেই ঘটে। প্লেট যত বড়, ভূমিকম্পের মাত্রাও তত বেশি হয়। তাছাড়া ভূমিকম্প যদি খুব অগভীর জায়গায় হয় (১০–৩০ কিমি গভীরতায়), তাহলে উপরিভাগে তার প্রভাব অনেক বেশি তীব্র হয়। 

আরও পড়ুন

NISAR: ভূমিকম্প থেকে জলবায়ুর পরিবর্তনের কথা জানাবে স্যাটেলাইট! ‘নিসার’-র থেকে কী কী জানা যাবে?

সব ভূমিকম্প কি সুনামি তৈরি করে?

বিশ্লেষকরা বলছেন, সব ভূমিকম্প সুনামি তৈরি করে না। সুনামির মূল কারণ হলো ভূমিকম্পের অবস্থান ও তলের স্থানচ্যুতি। সাধারণত সমুদ্রের নিচে বড় মাত্রার (৭ বা তার বেশি) ভূমিকম্প হলে তলদেশ হঠাৎ উঠে বা নেমে যায়। এই আকস্মিক অবস্থান পরিবর্তন অনেকটা পরিমাণ জল সরিয়ে দেয়, যা পরে ঢেউ আকারে উপকূলের দিকে ধেয়ে আসে এবং সুনামি তৈরি করে। সমুদ্রের গভীরতা, ভাঙা এলাকার আয়তন ও প্লেটের নড়াচড়ার দিক এই সব মিলেই নির্ধারণ করে সুনামি কতটা বড় হবে। বিশ্লেষকরা বলেন, সুনামির ঢেউ সাধারণত জেট বিমানের গতিতে ছুটে যায়। এক দেশ থেকে আরেক দেশে প্লেনে যে সময় লাগে, সুনামিও ঠিক সেই সময়েই দূরবর্তী উপকূলে পৌঁছে যায়।

যুক্তরাষ্ট্রের NOAA–র ব্যাখ্যা অনুসারে, সুনামি তৈরি করতে ভূমিকম্পের মাত্রা সাধারণত ৮-এর বেশি হতে হয়। সমুদ্র তলের স্থানচ্যুতির পরিমাণ, ভূমিকম্পের কেন্দ্রের আকার, এবং উপরের জলের গভীরতা— এই তিনটি বিষয় সুনামির শক্তি নির্ধারণ করে। বড় সুনামির ৮৯%-ই সৃষ্টি হয় সমুদ্রতলে শক্তিশালী ভূমিকম্প কিংবা ভূমিকম্প-সৃষ্ট ভূমিধস থেকে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভূমিকম্প বন্ধ করা সম্ভব নয়, কিন্তু আগে থেকে প্রস্তুতি, মানুষকে সচেতন করা আর আধুনিক সতর্কবার্তা ব্যবস্থার সাহায্যে ক্ষতি অনেকটাই কমানো যেতে পারে। এখন যেহেতু বিভিন্ন অঞ্চলে ভূমিকম্পের ঝুঁকি বাড়ছে, তাই সতর্ক থাকা এবং বিজ্ঞানভিত্তিক তথ্যকে গুরুত্ব দেওয়াই সবচেয়ে জরুরি।

More Articles