বারাণসী থেকে এক ক্রুজেই বাংলাদেশ, যে ভ্রমণপথে তাকিয়ে সারাবিশ্ব
Longest Cruise journey in World: একটি ক্রুজেই বারাণসী থেকে পৌঁছে যাবেন বাংলাদেশ। আপাতত এইদিকেই মুখিয়ে আছে বিশ্ব
অবশেষে দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী বছরের ১০ জানুয়ারি থেকেই ভারতের উত্তর প্রদেশের বারাণসী থেকে নদী ক্রুজের (বিলাসবহুল প্রমোদতরী) যাত্রা শুরু হতে চলেছে। প্রায় ৫০ দিনের দীর্ঘ এই যাত্রাপথে বারাণসী থেকে বাংলাদেশ হয়ে অসমের ডিব্রুগড় পর্যন্ত পাড়ি দেবে এই ক্রুজ। গত শুক্রবার বারাণসীর রবিদাস ঘাটে এই যাত্রার টাইমটেবিল প্রকাশ করেন কেন্দ্রীয় জাহাজ ও নৌ-পরিবহন মন্ত্রী সর্বানন্দ সানোয়াল এবং উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। প্রকল্পটি পূর্ণাঙ্গ রূপ পেলে এটিই হবে বিশ্বের দীর্ঘতম যাত্রা পথের ক্রুজ। সেক্ষেত্রে এই ভ্রমণ ভারতের অভ্যন্তরীণ জলপথ উন্নয়ন ও পর্যটনের মানচিত্রে নতুন দিগন্ত আনতে পারে বলে মনে করছে ভারত সরকার।
জানা গিয়েছে, বারাণসী থেকে ১০ জানুয়ারি এই ক্রুজ যাত্রা শুরু করবে। গাজীপুর-বক্সার হয়ে ১৭ জানুয়ারি বিহারের পাটনায় পৌঁছবে। এরপর বৌদ্ধগয়া-নালন্দা-ফারাক্কা-মুর্শিদাবাদ হয়ে ২৯ জুন কলকাতায় পৌঁছবে। একদিন বিরতি নিয়ে পরদিনই পশ্চিমবঙ্গের সুন্দরবন অংশের নামখানা-সজনেখালি হয়ে তা সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশে প্রবেশ করবে। পরে সেটি মংলা বন্দর-বাগেরহাট-মোড়েলগঞ্জ-বরিশাল-সোনারগাঁও হয়ে ৯ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় পৌঁছবে। এরপর আরিচা-টাংগাইল-সিরাজগঞ্জ-চিলমারী-অসমের ধুবরি-গোয়ালপাড়া হয়ে ২০ ফেব্রুয়ারি গোয়াহাটিতে পৌঁছবে। পরে তা ২৬ ফেব্রুয়ারি মাজুলী আইল্যান্ড পৌঁছবে এবং ১ মার্চ অসমের ডিগ্ৰুগড়ে গিয়ে তার যাত্রা শেষ করবে। বিলাসবহুল এই ক্রুজটি বাংলাদেশে ১৫ দিন অবস্থান করবে এবং এইসময় দেশটিতে ১১০০ কিলোমিটার যাত্রা পথ অতিক্রম করবে। সব মিলিয়ে দীর্ঘ ৪০০০ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করবে এই ক্রুজ। গোটা পথটি সম্পূর্ণ করতে সময় লাগবে প্রায় ৫০ দিন। এই সফরে প্রায় ২৭ টি নদী প্রণালীর মধ্যে দিয়ে যাবে এবং যাত্রাপথে ৫০ টিরও বেশি স্টপেজে দাঁড়াবে এই ক্রুজটি। যার মধ্যে রয়েছে সুন্দরবন ডেল্টা, গঙ্গারতি, অসমের মায়ংয়ের কালো জাদু এবং কাজিরাঙা জাতীয় উদ্যানের মতো জায়গা।
আরও পড়ুন : নদীর গর্ভে লুকিয়ে আছে সোনা! আজও কিংবদন্তি আর রহস্যে মোড়া সুবর্ণরেখা
গঙ্গা বিলাস এই ক্রুজের দৈর্ঘ্য হবে ৬২.৫ মিটার, প্রস্থ ১২.৮ মিটার। এতে ১৮ টি স্যুট থাকবে। থাকবে এলইডি টিভি, স্মোক ডিটেক্টর, লাইফ জ্যাকেট, ফ্রেঞ্চ ব্যালকনি, ৪০ আসন বিশিষ্ট রেস্তোর, স্পা, সানডেক ইত্যাদি। এটি সম্পূর্ণ নিরাপদ হবে এবং এই দৃষ্টিকোণ থেকেই এটি প্রস্তুত করা হয়েছে। দীর্ঘ এই ভ্রমণে যাত্রীদের বিনোদনের জন্য থাকছে সংগীত এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। ফিটনেসপ্রিয় মানুষদের জন্য জিমের সুযোগ সুবিধাও থাকছে।
সরকারি ও বেসরকারি যৌথ ব্যবস্থাপনা মডেলের উপর ভিত্তি করেই বারাণসী-বাংলাদেশ-ডিব্রুগড়গামী এই ক্রুজ চালানো হবে। এই সফরের জন্য সরকারের তরফ থেকে 'ইনল্যান্ড ওয়াটারওয়েজ অথরিটি অফ ইন্ডিয়া' (আই.ডব্লিউএ.আই)-এর দুই জনপ্রিয় ক্রুজ সংস্থা অন্তরা লাক্সারি রিভার এবং জে.এম.বক্সী রিভার ক্রুজের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। যদিও এই যাত্রার জন্য টিকিটের দাম কত হবে তা এখনো পর্যন্ত ধার্য করা হয়নি। কেন্দ্রের কোনো হস্তক্ষেপ ছাড়াই অপারেটররাই লাভ খরচের ভিত্তিতে টিকিটের মূল্য নির্ধারণ করবে।
আরও পড়ুন : সুন্দরী প্রকৃতিতে মৃত্যুর অলৌকিক হাতছানি! রোহিণী কেন খুনি নদী?
এই রোমাঞ্চকর নদী ক্রুজ যাত্রার সময়-সারণি প্রকাশ করে উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ জানান যে এতে আশ্চর্যজনক অ্যাডভেঞ্চার থাকবে। এ ব্যাপারে কেন্দ্রীয় জাহাজ ও নৌপরিবহন মন্ত্রী সর্বানন্দ সানোয়াল জানিয়েছেন 'গঙ্গা বিলাস' নামক এই ক্রুজ বারাণসী থেকে ডিব্রুগড় পর্যন্ত নদী যাত্রায় ২৭ টি নদী প্রণালীর ভিতর দিয়ে যাবে এবং ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ স্থান সহ ৫০ টিরও বেশি পর্যটন স্থান পরিদর্শন করবে। এটি হবে একটি জাহাজেই বিশ্বের বৃহত্তম একক নদী যাত্রা এবং এটি ভারত ও বাংলাদেশ উভয়কেই বিশ্বের নদী ক্রুজ মানচিত্রে অন্তর্ভুক্ত করবে।"
তিনি আরও বলেন "ক্রুজ পরিষেবা সহ উপকূলীয় এবং নদী পরিবহনের উন্নয়ন সরকারের অন্যতম অগ্রাধিকার এবং দেশের বিপুল সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে এই অঞ্চলে এই জাতীয় আরও পরিষেবা চালু করা হবে। নদীতে যাত্রী পরিবহনের পাশাপাশি, অভ্যন্তরীণ নৌপথ ব্যবস্থার উন্নয়ন বাণিজ্য ও পণ্যবাহী পরিষেবাকে সহজতর করবে এবং এর রুটের আশেপাশের এলাকার পর্যটনকে উৎসাহিত করবে।"
সনোয়াল আরো জানান "ক্রুজগুলি বিভিন্ন ধরণের হয়। আবার পর্যটকরাও বিভিন্ন মানসিকতা নিয়ে আসেন। কেউ কেউ সম্পূর্ণ ভ্রমণের জন্য থাকতে চান, আবার কেউ কেউ এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যেতে পারেন। এই পরিসেবাটি সব ধরনের পর্যটকদের সুবিধা দেবে।"