নেহরুর প্রতিধ্বনি নিউইয়র্কে! ঐতিহাসিক বিজয়ভাষণে মামদানি যা বললেন
Zohran Mamdani's powerful victory speech: তাঁর কাছে এই জয় শ্রমজীবী মানুষের জয়। তিনি বলেন, এতদিন যারা কেবল ভোট দিয়েছেন, এবার ক্ষমতা থাকবে তাঁদের হাতেই।
নিউইয়র্কের রাজনীতিতে এক নতুন ইতিহাস লেখা হলো। ভারতীয় বংশোদ্ভূত জোহারান মামদানি জয়ী হলেন নিউইয়র্ক সিটির মেয়র নির্বাচনে। তিনিই এই শহরের ইতিহাসে প্রথম মুসলিম মেয়র। তাঁর বিজয়ভাষণে ফিরে এল ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর সেই ঐতিহাসিক উক্তি:
“A moment comes but rarely in history when we step out from the old to the new.”
মামদানি বলেন, “আমার মনে পড়ছে জওহরলাল নেহরুর সেই কথা, 'ইতিহাসে খুব কমই এমন মুহূর্ত আসে, যখন আমরা পুরনোকে পেরিয়ে নতুনের পথে এগিয়ে যায়'। আজ রাতে, আমরা সেই পথেই এগোচ্ছি।” এই উদ্ধৃতি ব্যবহার করেই তিনি বুঝিয়ে দিলেন— তাঁর বিজয় শুধু কোনো দলের নয়, বরং মানসিকতারও। রাজনীতির পুরনো ধারা ভেঙে নিউইয়র্ক এখন এগোচ্ছে এক নতুন পথে— নেতৃত্বে এখন অভিবাসীর সন্তান, মুসলিম, এবং এক ‘ডেমোক্র্যাটিক সোশ্যালিস্ট’ নেতা।
আরও পড়ুন
ট্রাম্প-মাস্কের হুঙ্কারকে দুয়ো! ইতিহাস গড়লেন জোহরান মামদানি
নিজের ভাষণে মামদানি সরাসরি বলেন, “মনে পড়ে, নিউইয়র্কের শ্রমজীবী মানুষরা সবসময় বলতেন— ক্ষমতা তাদের হাতে নেই। কিন্তু আজ, সব বাধা পেরিয়ে আমরা সেই ক্ষমতাই নিজেদের হাতে তুলে নিয়েছি।” অর্থাৎ, তাঁর কাছে এই জয় শ্রমজীবী মানুষের জয়। তিনি বলেন, এতদিন যারা কেবল ভোট দিয়েছেন, এবার ক্ষমতা থাকবে তাঁদের হাতেই। ‘নিউইয়র্ক এখন কেবল ধনীদের শহর নয়— এটি শ্রমিক, শিক্ষার্থী, অভিবাসী, সব নাগরিকের শহর।’
ভাষণের মাঝেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে উদ্দেশ্য করে মামদানি তীক্ষ্ণ মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, “ডোনাল্ড ট্রাম্প, জানি তুমি দেখছ, তাই তোমার জন্য চারটে শব্দ বলছি— আওয়াজ একটু বাড়িয়ে নাও!”
এরপর তিনি বলেন, “যে শহর ট্রাম্পকে জন্ম দিয়েছে, সেই নিউইয়র্কই এখন দেখাবে কীভাবে তাঁকে পরাস্ত করা যায়। অন্ধকারাচ্ছন রাজনীতি থেকে নিউইয়র্ক হয়ে উঠবে আশার আলো।”
জয়ের পর তিনি কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পরিকল্পনার কথা ঘোষণা করেন, শিশু দেখাশোনা কেন্দ্র (Universal Child Care), বিনামূল্যে বাস পরিষেবা (Free City Buses), ভাড়া নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা করা (Rent Freeze for Tenants)। তিনি বলেন, “আমাদের সাফল্য বুঝতে পারবেন সেই ভাড়াটে মানুষরা, যাঁরা প্রতিমাসে জানতে পারবেন— এই মাসেও তাঁদের বাড়ি ভাড়া বাড়েনি।” এই প্রতিশ্রুতিগুলি নিউইয়র্কের শ্রমজীবী ও মধ্যবিত্ত নাগরিকদের জীবনযাত্রায় প্রভাব ফেলবে বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।
আরও পড়ুন
মীরা নায়ারের পুত্র, মোদি সমালোচক— নিউ ইয়র্ককে দিশা দেখাবেন ভাবী মেয়র মামদানি?
নিজের পরিচয় নিয়ে ভাষণে তিনি উল্লেখ করেছেন, “আমি তরুণ। আমি মুসলিম। আমি একজন গণতান্ত্রিক সমাজতান্ত্রিক। আর সবচেয়ে বড় কথা— এর কোনো কিছুর জন্যই আমি ক্ষমা চাই না।” মামদানির এই জয় শুধু নিউইয়র্ক শহরের নয়, বরং পুরো মার্কিন রাজনীতিতে এক নতুন দিশা দেখাতে পারে, বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
এক অভিবাসীর সন্তান, পরিচয়ে মুসলিম, ট্রাম্পের শহরেই জয়ের পতাকা তুলেছেন। ভাষণে স্পষ্ট বলেছেন, “আজ আমরা পুরনোকে পেরিয়ে নতুনের পথে হাঁটছি— এমন এক শহর গড়ব, যা সবার।" জোহারান মামদানির এই বিজয়ভাষণ শুধু রাজনৈতিক বক্তব্যই নয়, বরং সমাজের প্রান্তিক ও সাধারণ মানুষদের ক্ষমতা ফিরিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি। তিনি বললেন, 'আমাদের ভবিষ্যৎ এখন আমাদের হাতেই।' এই বার্তা নিয়েই তিনি নিউইয়র্ককে এমন এক শহর হিসেবে গড়তে চান, যেখানে সবার জন্য সমান সুযোগ আর ন্যায়বিচার থাকবে।

Whatsapp
