রাষ্ট্রপুঞ্জে প্যালেস্টাইন রাষ্ট্রের পক্ষে ভোট ভারত-সহ ১৪২টি দেশের! বাস্তব কি বদলাবে?
India votes in favour of Palestine: তবে সমালোচকরা বলছেন, ২০১৫ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে দেড়শোর বেশি প্রস্তাব গৃহীত হলেও ইজরায়েলের নীতি বা গাজার প্রতি আচরণে কোনো বাস্তব পরিবর্তন আসেনি।
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে প্যালেস্টাইন প্রশ্নে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে। এই প্রস্তাবে যুদ্ধবিরতি, গাজায় মানবিক সহায়তা, বন্দিদের মুক্তি এবং ইজরায়েল ও প্যালেস্টাইনের দ্বন্দ্ব মেটাতে দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধানের কথা বলা হয়েছে।
ভোটাভুটিতে ১৪২টি দেশ প্রস্তাবের পক্ষে, ১০টি দেশ বিপক্ষে এবং ১২টি দেশ ভোটদান থেকে বিরত থাকে। প্যালেস্টাইনকে রাষ্ট্রের স্বীকৃতির পক্ষে ভোট দিয়েছে ভারত। এদিনের ভোটে যারা বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছে তাদের মধ্যে আমেরিকা ও ইজরায়েল ছাড়াও রয়েছে আর্জেন্টিনা, হাঙ্গেরি, পাপুয়া নিউ গিনি, প্যারাগুয়ের মতো দেশগুলি।
প্রস্তাবে কী কী বলা হয়েছে
•গাজার যুদ্ধ অবিলম্বে শেষ করতে হবে
•সব বন্দিকে মুক্তি দিতে হবে
•প্যালেস্টাইনদের জন্য একটি স্বাধীন ও স্থায়ী রাষ্ট্র গড়ে তুলতে হবে
•হামাসকে গাজার প্রশাসন থেকে সরিয়ে দেওয়া ও নিরস্ত্র করা প্রয়োজন
•প্যালেস্টাইন ও ইজরায়েল— দুই রাষ্ট্রের ভিত্তিতে শান্তিপূর্ণ ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার আহ্বান জানানো হয়েছে
আরও পড়ুন- ‘হামাস হঠাও’! কেন প্যালেস্টাইন জুড়ে ছড়াচ্ছে হামাসবিরোধী বিক্ষোভ?
প্যালেস্টাইন এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে। অন্যদিকে, ইজরায়েল জানিয়েছে, এতে হামাসের লাভ হয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও সমালোচনা করে বলেছে, এই প্রস্তাব কার্যকর নয়, বরং পরিস্থিতিকে আরও জটিল করতে পারে।
ভারত বহুবার জাতিসংঘে প্যালেস্টাইন প্রশ্নে নিরপেক্ষ থেকেছে। তবে এবার ভারত সরাসরি পক্ষে ভোট দিয়ে জানিয়ে দিল, নতুন দিল্লি দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধানকেই ভবিষ্যতের একমাত্র পথ হিসেবে দেখছে। বিশ্লেষকদের মতে, এর মাধ্যমে ভারত আরব দেশগুলির সঙ্গে সম্পর্ক মজবুত করতে চাইছে, পাশাপাশি শান্তিপ্রক্রিয়ায় সক্রিয় ভূমিকা রাখার ইঙ্গিতও দিয়েছে।
উল্লেখ্য, ২০২২ সালের ৭ অক্টোবর হামাস ইজরায়েলে হামলা চালায়। এর পরেই ইজরায়েলি সেনা গাজা ভূখণ্ডে পাল্টা আক্রমণ শুরু করে। প্রায় তিন বছর পেরিয়ে গেলেও এই সংঘাত থামেনি। ইজরায়েল নির্বিচারে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। এখনও পর্যন্ত ইজরায়েলের হামলায় ৬০ হাজারেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। গাজার সাধারণ মানুষ অনাহার ও অপুষ্টিতে ভুগছে, শিশুদের মৃত্যুহার বেড়ে চলেছে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলির অভিযোগ— ত্রাণের লাইনে দাঁড়ানো সাধারণ প্যালেস্টাইনদের উপরও গুলি চালাচ্ছে ইজরায়েলি সেনা। ইজরায়েলের লাগাতার বিমান হামলায় গোটা গাজা আজ প্রায় ধ্বংসস্তূপ। হাসপাতাল, স্কুল, আশ্রয়কেন্দ্র— কোনো জায়গাই রক্ষা পায়নি।
আরও পড়ুন- গাজায় গণহত্যার দলিল হাতে আন্তর্জাতিক আদালতে দক্ষিণ আফ্রিকার সওয়াল, ন্যায়বিচার পাবে প্যালেস্টাইন?
এই পরিস্থিতিতে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে সম্প্রতি গৃহীত প্রস্তাবে গাজাকে হামাসের নিয়ন্ত্রণমুক্ত করার কথা বলা হয়েছে। পাশাপাশি দুই-রাষ্ট্র সমাধানের মাধ্যমে স্থায়ী শান্তির আহ্বান জানানো হয়েছে। যদিও জাতিসংঘের এই প্রস্তাব বাধ্যতামূলক নয়, তবুও এর রাজনৈতিক ও নৈতিক গুরুত্ব অনেক। ভারত বার্তা দিয়েছে, তারা প্যালেস্টাইনের রাষ্ট্র গঠনের অধিকার ও ইজরায়েলের নিরাপত্তা— দুই দিককেই গুরুত্ব দিয়ে একটি স্থায়ী সমাধান চায়।
তবে সমালোচকরা বলছেন, ২০১৫ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে দেড়শোর বেশি প্রস্তাব গৃহীত হলেও ইজরায়েলের নীতি বা গাজার প্রতি আচরণে কোনো বাস্তব পরিবর্তন আসেনি। বরং হামাস নিধনের নামে ইজরায়েলের সামরিক অভিযান আরও ভয়ঙ্কর রূপ নিয়েছে।
নতুন প্রস্তাব কার্যকর হলে হয়তো প্যালেস্টাইন-ইজরায়েল সংঘাতের একটা শান্তিপূর্ণ পথ খুঁজে পাওয়া যাবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত বাস্তব পরিস্থিতি বলছে, গাজার সাধারণ মানুষের জন্য প্রতিদিনই নতুন মৃত্যু, ক্ষুধা আর ধ্বংস বয়ে আনছে।

Whatsapp
