আজও কীভাবে তৈরি হয় নবদ্বীপের ঐতিহ্যবাহী শিবের মুখোশ?
Shiva's Mask in Nabadwip : শিবের মাথায় পরিহিত থাকে সোনালি টোপর। টোপরের দু-পাশে সাপ লাগানো থাকে। প্রথমে মাটির ছাঁচ শুকিয়ে গেলে তার ওপর তুলির নিপুন টানে মুখোশে চোখ-নাক আঁকা হয়।
পশ্চিমবঙ্গের বহু গ্রামে আজও প্রচণ্ড গরমের সময়ে স্কুল-ফিরতি পথে ছোটো ছেলেমেয়েরা হঠাৎ বিকেলের দিকে বৃষ্টি আরম্ভ হলে বলে ওঠে,
বৃষ্টি পড়ে টাপুর টুপুর
নদে এলো বান,
শিব ঠাকুরের বিয়ে হলো,
তিন কন্যা দান
চৈত্র মাসে বাসন্তী পুজোর শেষ দিন শিবের বিয়ে অনুষ্ঠিত হয়। নবদ্বীপের এক ঐতিহ্য 'শিবের বিয়ে'। আর পাত্রী স্বয়ং দেবী পার্বতী। উৎসবের সময় এখানে এক ধরনের মুখোশ তৈরি করা হয়, যা আসলে শিবের মুখোশ। সারা রাত ধরে বিয়ের অনুষ্ঠান পালিত হয়। সাজানো হয় বাসর। বিবাহ অনুষ্ঠানে বর ও কনের জন্য থাকে নতুন পোশাক।

শিবের মুখোশ
শিবের মাথায় পরিহিত থাকে সোনালি টোপর। টোপরের দু-পাশে সাপ লাগানো থাকে। প্রথমে মাটির ছাঁচ শুকিয়ে গেলে তার ওপর তুলির নিপুন টানে মুখোশে চোখ-নাক আঁকা হয়। ছোটো শিশুরা পালকিতে করে মুখোশ নিয়ে পথে বের হয়। শিবের বিয়েতে গ্রামে বরযাত্রী বের হয়। প্রতিটি মুখোশ অনন্য।
আরও পড়ুন-
কৃষ্ণনগরের মনসামূর্তির ভেতর যেভাবে বেঁচে রয়েছে বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতি
শিল্পকর্মটি ব্রিটিশ মিউজিয়ামে জায়গা করে নিয়েছে। তবে নবদ্বীপ ছাড়া আর অন্য কোথাও এই মুখোশ তৈরি হয় না। নবদ্বীপে বুড়োশিবের আদলে এই মুখোশটি তৈরি। অবতার শ্রীচৈতন্যদেবের জন্মস্থান ও লীলাভূমি হয়েও নবদ্বীপ এক বিশেষ শৈবক্ষেত্র। যিনি প্রথম কালীরূপের দর্শন পান, সেই অন্যতম কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশের জন্ম নবদ্বীপেই। বহু প্রাচীন এই বুড়োশিব, যা চৈতন্য মহাপ্রভুর আমল থেকে পুজো হয়ে আসছে। বিরাট এক নবরত্ন মন্দিরে তিনি প্রতিষ্ঠিত।
বুড়োশিবের মন্দির নবদ্বীপের মানুষের কাছে এক তীর্থসম। বহু দূর দূরান্ত থেকে মানুষ বুড়োশিবের দর্শনে আসেন। নবদ্বীপের মৃৎ শিল্পীরা এই আশ্চর্য মুখোশটি তৈরি করেন। শিবের বিয়ে উপলক্ষ্যে নাচগান, ঢাকের বাজনা, পটকা ফাটানো ও বিভিন্ন আচার অনুষ্ঠান পালন করা হয়। জেলার বাইরে থেকেও বহু পুণ্যার্থী এই লৌকিক উৎসবে আসেন। আপনি যদি ঐতিহ্যবাহী উৎসব ভালোবাসেন, তবে শিবের বিয়ে একবার এখানে এসে দর্শন করা উচিত।
আরও পড়ুন-
কেবল রথের মেলাতেই কেন পাওয়া যায় মুর্শিদাবাদের এই মাটির পুতুল?
Whatsapp
