ডিজিটাল ডিটক্সের মাঝেই নোবেল জয়! নির্জন যাপনের মধ্যেই জুটল সেরার শিরোপা

Fred Ramsdell: লরা ফোন চালু করতেই অনেক অভিনন্দন মেসেজ দেখে চিৎকার করতে শুরু করেন। প্রথমে র‍্যামসডেল ভাবেন, হয়ত কোনো ভাল্লুক দেখেছেন! এরপরই বুঝতে পারেন— তিনি সত্যিই নোবেল পেয়েছেন।

একজন বিজ্ঞানী যখন প্রকৃতির মাঝে শান্তিতে ছিলেন, ঠিক তখনই তিনি পেলেন জীবনের এক বড় স্বীকৃতি। ফ্রেড র‍্যামসডেল, একজন ইমিউনোলজিস্ট, তিন সপ্তাহ ধরে যুক্তরাষ্ট্রের পাহাড়ি অঞ্চলে “ডিজিটাল ডিটক্স” করেছিলেন। মোবাইল ফোন ছিল ফ্লাইট মোডে। কোনো ইমেল বা কল আসার সুযোগ ছিল না। পরে জানতে পারেন— ২০২৫ সালের চিকিৎসা বিজ্ঞানের নোবেল পুরষ্কারের দাবিদার তিনিই।

র‍্যামসডেল এবং তাঁর স্ত্রী লরা ও’নিল, হাইকিং ও ক্যাম্পিং করছিলেন আইডাহো, ওয়াইওমিং এবং মন্টানার পাহাড়ি অঞ্চলে। যখন নোবেল কমিটি তাঁকে ফোন করার চেষ্টা করে, কোনো সিগন্যাল ছিল না। পরে তাঁরা একটি ছোট হোটেলে কিছুক্ষণের জন্য থামে। লরা ফোন চালু করতেই অনেক অভিনন্দন মেসেজ দেখে চিৎকার করতে শুরু করেন। প্রথমে র‍্যামসডেল ভাবেন, হয়ত কোনো ভাল্লুক দেখেছেন! এরপরই বুঝতে পারেন— তিনি সত্যিই নোবেল পেয়েছেন। র‍্যামসডেল পরে বলেন, “আমি একেবারেই আশা করিনি যে আমি এই পুরস্কার পাব।”

র‍্যামসডেল-সহ এই পুরষ্কার পেয়েছেন মেরি ব্রাঙ্কো (যুক্তরাষ্ট্র) এবং শিমন সাকুরাগুচি (জাপান)। পুরষ্কারের অর্থমূল্য ১১ মিলিয়ন সুইডিশ ক্রোনার, যা প্রায় ৮৭১,৪০০ পাউন্ডের সমান। তাঁরা যৌথ ভাবে আবিষ্কার করেছেন কীভাবে মানবদেহের টি‑সেল (T-cell) কাজ করে। টি‑সেল আমাদের শরীরকে সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে এবং ভালো কোষে আক্রমণ করতে বাধা দেয়। এই গবেষণা চিকিৎসা বিজ্ঞানে বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে।

আরও পড়ুন

চিকিৎসা বিজ্ঞানে নোবেল: যে অসাধ্যসাধন করে পুরস্কৃত হলেন ত্রয়ী

র‍্যামসডেল ও তাঁর সহকর্মীদের এই আবিষ্কার বহু রোগের চিকিৎসা ও ইমিউন থেরাপিতে নতুন দিশা দেখিয়েছে। বিশেষ করে ক্যান্সার এবং অটোইমিউন রোগ নিয়ে গবেষণায় এটি বড় অবদান রেখেছে।

নোবেল কমিটির পুরস্কারপ্রাপ্তদের সঙ্গে যোগাযোগ করা সব সময় সহজ হয় না। অনেকেই এমন স্থানে থাকেন যেখানে ফোন বা ইন্টারনেট নেই। র‍্যামসডেলের ঘটনাও তাই। কমিটি প্রথমে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ না করতে পেরে শিমন সাকুরাগুচিকে ফোন করে। পরে মেরি ব্রাঙ্কোর সঙ্গে যোগাযোগ করেন। অবশেষে র‍্যামসডেলের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়।

এর আগে এমন ঘটনা ঘটেছে ২০১৬ সালে, যখন বিখ্যাত গায়ক বব ডিলান সাহিত্যে নোবেল পেয়েছিলেন। তাঁর সঙ্গেও যোগাযোগ করা যাচ্ছিল না। ২০২০ সালে অর্থনীতিতে নোবেল জয়ীদের সঙ্গে যোগাযোগ করার ক্ষেত্রেও একই সমস্যা হয়েছিল। 

উল্লেখ্য, র‍্যামসডেলের গল্প আমাদের শেখায়, বড় সাফল্য সবসময় প্রত্যাশিত সময়ে আসে না। কখনও তা সবচেয়ে অপ্রত্যাশিত মুহূর্তে আমাদের কাছে আসে।

More Articles