১৯৬৮ থেকে ২০২৫: যেভাবে বারবার বন্যায় লণ্ডভণ্ড উত্তরবঙ্গ

North Bengal Flood History: শনিবারের বিপর্যয় মনে করাচ্ছে ১৯৬৮ সালের ভয়াবহ রাতের কথা। ৪ অক্টোবর রাতের একটানা বৃষ্টি বন্যা ডেকে আনে উত্তরবঙ্গে। সেবারের বন্যায় ২১৬ জন (সরকারি হিসাবে)-এর মৃত্যু হয়।

শনিবার রাতের ভারী বৃষ্টিতে বন্যা পরিস্থিতি উত্তরবঙ্গে। বিপর্যস্ত জনজীবন, বন্যপ্রাণ। জলদপাড়া অভয়ারণ্য থেকে গণ্ডার ভেসে এসেছে জনবসতিতে, ভেঙে গিয়েছে বহু বাড়ি। জলবায়ু পরিবর্তন, নির্বিচারে গাছ কাটা, অবৈধ নির্মাণ এর অন্যতম কারণ। তারই সঙ্গে নদী সংস্কার না হওয়ায়, নাব্যতা হারিয়েছে নদীগুলি। ফলে অতিবৃষ্টিতে জলের চাপ বেড়েছে নদীতে। ইতিহাসের পাতায় চোখ রাখলে দেখা যাবে বছরের পর বছর ধরে বন্যায় কাহিল উত্তরের জেলাগুলি।

১৯৬৮ সালের বন্যা
শনিবারের বিপর্যয় মনে করাচ্ছে ১৯৬৮ সালের ভয়াবহ রাতের কথা। ৪ অক্টোবর রাতের একটানা বৃষ্টি বন্যা ডেকে আনে উত্তরবঙ্গে। বৃষ্টির জলে ফুলেফেঁপে ওঠে তিস্তা, রায়ডাক, জলঢাকা নদী। সেবারের বন্যায় ২১৬ জন (সরকারি হিসাবে)-এর মৃত্যু হয়। তবে স্থানীয়দের দাবি, মৃতের সংখ্যা তার থেকেও ছিল অনেক বেশি। ঘর-বাড়ি, থেকে গরু-বাছুর, বন্যপ্রাণ সব জলের তোড়ে ভেসে গিয়েছিল। শনিবার রাতের ভারী বৃষ্টিতেও পাহাড় ও ডুয়ার্স মিলিয়ে এখনও পর্যন্ত ২৮ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেলেও, এবারও স্থানীয়দের দাবি প্রাণহানির সংখ্যাটা এর থেকে আরও অনেক বেশি। ক্রমেই সেই সংখ্যা বাড়তে পারে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে।

২০১৭ সালের বন্যা
২০১৭ সালে জুলাই, অগাস্ট মাসের ভারী বৃষ্টিতে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় বন্যা দেখা দেয়। বানভাসি হয় উত্তরবঙ্গও। উত্তরের পাঁচ জেলায় প্রায় এক লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়— এর মধ্যে আলিপুরদুয়ার ও জলপাইগুড়ি জেলারই ৬০ হাজার মানুষ। জলপাইগুড়ি জেলার ফলাকাটা ও মাদারিহাটের মানুষ ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হয়, বহু মানুষ ত্রাণ শিবিরে আশ্রয় নেন।

আরও পড়ুন- বন্যার মাঝে কার্নিভালে মুখ্যমন্ত্রী! অমানবিক রাজনীতির কৈফিয়ত কী?

লোনাক হ্রদের বিপর্যয়, ২০২৩
২০২৩ সালের অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে সেই চেনা ছবি ফিরে আসে উত্তরবঙ্গে। উত্তর সিকিমের চুংথামে দক্ষিণ লোকান হ্রদের বাঁধ ভেঙে ভয়াবহ বন্যা দেখা দেয় পশ্চিমবঙ্গে উত্তরে। তিস্তার জলের তোড়ে ভেঙে যায় জাতীয় সড়ক ১০ (NH 10), ভেসে যায় সেনা ছাউনি। মৃত্যু হয় কমপক্ষে ৫৫ জনের। তিস্তার জলে প্লাবিত হয় জলপাইগুড়ি, কোচবিহারের বহু গ্রাম। 

২০২৫-এর শেষে ফিরে এল সেই ভয়ঙ্কর স্মৃতি। এক রাতের বৃষ্টিতেই ফুঁসছে উত্তরের নদীগুলি— তিস্তা, তোর্ষা, রায়ডাক, জলঢাকা, বালাসন। নদীর বাঁধ ভেঙে জলের তলায় বহু গ্রাম। নাগরাকাটা, বানারহাট, রামসাই, দিনহাটা— জলমগ্ন বহু এলাকা, ভেঙে গিয়েছে ঘর-বাড়ি। শনিবারের বিপর্যয়ের পর সোমবার উত্তরবঙ্গে পৌঁছেছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মৃতদের পরিবারকে পাঁচ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ ও পরিবারের একজনকে হোমগার্ডের চাকরি দেওয়ার ঘোষণা করেছেন। এরই সঙ্গে এই বন্যাকে ‘ম্যান মেড’ বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর কথায়, ভুটান ও অসম থেকে জল ঢুকেছে উত্তরবঙ্গে। ভুটান, সিকিমের ছাড়া জলে নাগরাকাটা ধূপগুড়ির এই ভয়ঙ্কর অবস্থা। মুখে মুখে বাঁধ বলা হয়, কিন্তু কাজের কাজ হয় না বলে অভিযোগ মুখ্যমন্ত্রীর।

More Articles