দিল্লি বিস্ফোরণ | ৬ অভিযুক্তই চিকিৎসক, যা জানা যাচ্ছে

Six doctors linked to the Delhi blast: ইতিমধ্যেই ৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকিদের খোঁজে তল্লাশি চলছে কাশ্মীর, হরিয়ানা ও উত্তরপ্রদেশে।

দিল্লির লালকেল্লার সামনে ভয়াবহ বিস্ফোরণের পর দিন যত যাচ্ছে, ততই সামনে আসছে নতুন তথ্য। প্রথমে মনে করা হয়েছিল এটি কোনো প্রযুক্তিগত ত্রুটিজনিত দুর্ঘটনা। কিন্তু এখন তদন্তকারীদের হাতে এসেছে এমন সব তথ্য, যা রীতিমতো শিহরণ জাগাচ্ছে। এই বিস্ফোরণের নেপথ্যে নাকি রয়েছে ছ’জন চিকিৎসক। অভিযোগ, তারা এক আন্তর্জাতিক সন্ত্রাস নেটওয়ার্কের সঙ্গে। অভিযুক্ত ছ’জন চিকিৎসক কারা?

তদন্তে জানা গিয়েছে, এই ছ’জন চিকিৎসক দেশের বিভিন্ন জায়গায় কর্মরত ছিলেন— কেউ দিল্লিতে, কেউ ফারিদাবাদে, কেউ বা কাশ্মীরে। বাইরে থেকে তাঁরা সাধারণ চিকিৎসক হিসেবেই পরিচিত ছিলেন। কিন্তু গোপনে তাঁরা গড়ে তুলছিলেন এক ভয়ঙ্কর ‘মেডিক্যাল টেরর মডিউল’। এই মডিউলের মূল উদ্দেশ্যই ছিল— চিকিৎসা পেশার আড়ালে থেকে অর্থ, ওষুধ এবং প্রযুক্তিগত জ্ঞান ব্যবহার করে বোমা তৈরি ও পরিকল্পনা করা।

তদন্ত সংস্থা এনআইএ জানিয়েছে, সন্দেহভাজনদের মধ্যে রয়েছে —

• ড. উমর উন নবি, কাশ্মীরের পুলওয়ামার বাসিন্দা, ফারিদাবাদের একটি বেসরকারি হাসপাতালে কর্মরত ছিল। বিস্ফোরণের আগে শেষবার তাকে দেখা গিয়েছিল সেই হুন্ডাই আই টোয়েন্টি গাড়ির কাছেই।

• ড. মুজাম্মিল আহমেদ গনাই, একই নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত, বিস্ফোরণের পরিকল্পনায় তাঁর ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ বলে সন্দেহ করা হচ্ছে।

• ড. আদিল আহমেদ রাঠার, ড. শোয়েব লোন, ড. আরিজ খান ও ড. তারিক বশির— এদের নামও তদন্তের তালিকায় আছে।

তদন্তকারীরা মনে করছেন, এই দলটি একসঙ্গে কাজ করত, আর মূল পরিকল্পনা তৈরি হত কাশ্মীরে বসেই।

আরও পড়ুন

২০২৫ প্রথম নয়, বারবার গাড়ি বিস্ফোরণে ছিন্নভিন্ন হয়েছে ভারতাত্মা

তিন সপ্তাহ আগে, অক্টোবরের শেষ দিকে, কাশ্মীর পুলিশ খবর পায়— একটি বিশেষ গোষ্ঠী কাশ্মীরে হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে। সেই তথ্যের ভিত্তিতেই শুরু হয় তল্লাশি অভিযান। এই অভিযানে গ্রেফতার হয় চিকিৎসক আদিল আহমেদ রাঠর। অভিযোগ, তিনি শ্রীনগরে পাকিস্তানি জঙ্গিগোষ্ঠী জইশ-ই-মহম্মদ (JeM)-এর সমর্থনে পোস্টার সাঁটিয়েছিল। আদিলকে জিজ্ঞাসাবাদের পর আরও দু’জনের নাম সামনে আসে। তাঁদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন ডা. মুজাম্মিল আহমেদ। মুজাম্মিলকে জেরা করেই পুলিশ জানতে পারে, দিল্লির কাছে হরিয়ানার ফরিদাবাদে বিস্ফোরক মজুতের তথ্য। তল্লাশি চালিয়ে ফরিদাবাদ থেকে উদ্ধার হয় প্রায় ৩৬০ কেজি আরডিএক্স তৈরির কাঁচামাল। পরবর্তীতে জম্মু-কাশ্মীর পুলিশ জানায়, গত কয়েক দিনে দেশের বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে মোট ২,৯০০ কেজি বিস্ফোরক উপকরণ উদ্ধার করা হয়েছে। এই বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক উদ্ধারের পর গোটা তদন্তের মোড় ঘুরে যায়।

আদিল ও মুজাম্মিলের গ্রেফতারের পর থেকে পুলিশের নজরে আসে উমর নবি। তদন্তকারীদের দাবি, এই বিস্ফোরণের মূল সন্দেহভাজন হতে পারেন হারিয়ানার ফরিদাবাদের আল-ফালাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক উমর নবি। তদন্তকারীদের ধারণা, সহকর্মীদের গ্রেফতারের পর তিনি ভয় পেয়ে ফরিদাবাদ থেকে পালিয়ে আসেন। ১০ নভেম্বর সন্ধ্যা ৬টা ৫২ মিনিটে, লালকেল্লার কাছে সুভাষ মার্গ সিগন্যালে একটি হুন্ডাই আই টোয়েন্টি গাড়ি হঠাৎ গতি কমিয়ে দাঁড়ায়। ঠিক তখনই ঘটে ভয়াবহ বিস্ফোরণ। মুহূর্তের মধ্যে আগুনে পুড়ে যায় পুরো গাড়ি, মৃত্যু হয় ১২ জনের।

উমর নবি পেশায় একজন শিক্ষাবিদ, কাশ্মীরের পুলওয়ামা জেলার লেথপোরা এলাকার কৈল গ্রামের বাসিন্দা। উমর বিশ্ববিদ্যালয়ে প্যারামেডিক্যাল বিভাগের শিক্ষক হিসেবে পরিচিত। সহকর্মীদের কথায়, উমর ছিল একেবারেই অন্তর্মুখী ও চুপচাপ স্বভাবের মানুষ। খুব বেশি বন্ধু ছিল না, ক্লাস শেষে বেশিরভাগ সময় নিজের মধ্যেই থাকত। তার পরিবারও বলেছে, উমর কখনও রাজনীতি বা ধর্মীয় উগ্রতায় জড়িত ছিল না। পরিবারের সদস্যদের কথায়, “আমরা বিশ্বাসই করতে পারছি না, এমন কোনো ঘটনায় তাঁর নাম জড়াতে পারে।”

১০ নভেম্বর সন্ধ্যায় দিল্লির লালকেল্লা সংলগ্ন এলাকায় হুন্ডাই আই টোয়েন্টি গাড়িতে প্রবল বিস্ফোরণ হয়। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় ১২ জনের, আহত হন আরও বহু মানুষ। পরে জানা যায়, গাড়িটি উমর নবির নামে রেজিস্টার্ড ছিল। সিসিটিভি ফুটেজেও দেখা গিয়েছে, বিস্ফোরণের আগে উমর প্রায় তিন ঘণ্টা গাড়িটি সুাহিরি মসজিদের পার্কিং এলাকায় রেখে দেন। এরপর গাড়িটি শহরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে লালকেল্লা অঞ্চলে পৌঁছায়। তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, গাড়ির ধ্বংসস্তূপ থেকে অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট ও অন্যান্য রাসায়নিকের চিহ্ন মিলেছে। ধারণা করা হচ্ছে, গাড়িতে কোনো ভাবে বিস্ফোরক বহন করা হচ্ছিল— তা দুর্ঘটনাবশত বিস্ফোরিত হয়েছে, নাকি পরিকল্পিত হামলা, তা এখনও নিশ্চিত নয়। ঘটনার পর থেকেই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও শিক্ষার্থীরা হতবাক।

আরও পড়ুন

বিস্ফোরণের পর কীভাবে কাজ করেন ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞরা?

বিস্ফোরণে ব্যবহৃত গাড়ির রেজিস্ট্রেশন ছিল হরিয়ানার মহম্মদ সলমনের নামে। পুলিশ তাঁর কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করে জানতে পারে, গাড়িটি সলমন প্রথমে দেবেন্দ্র নামে এক ব্যক্তির কাছে বিক্রি করেন। এরপর তা আমির, পরে তারিক, এবং সবশেষে উমর মহম্মদের হাতে পৌঁছায়। তবে গাড়ির নথিতে মালিকানার কোনো আনুষ্ঠানিক পরিবর্তন হয়নি— এই তথ্যও দিয়েছেন সলমন।

চিকিৎসকদের জড়িয়ে থাকা এই সম্ভাব্য জঙ্গি নেটওয়ার্ক এখন দেশের গোয়েন্দা সংস্থাগুলির নজরের কেন্দ্রে। লালকেল্লা বিস্ফোরণ হয়ত ছিল সেই বড় ষড়যন্ত্রেরই অংশ, যা কাশ্মীর থেকে ফরিদাবাদ হয়ে পৌঁছেছে রাজধানী দিল্লির বুকে।

সোমবার সন্ধ্যায় লালকেল্লা মেট্রো স্টেশনের সামনে একটি হুন্ডাই আই টোয়েনটি গাড়িতে ভয়ঙ্কর বিস্ফোরণ হয়। তাতে অন্তত ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে, আহত হয়েছেন বহু মানুষ। পুলিশ জানিয়েছে, গাড়ির ভেতর ছিল অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট, ডেটোনেটর ও রিমোট কন্ট্রোল মেকানিজম। গাড়িটি ফারিদাবাদ থেকে আসে এবং ঘটনাস্থলে ঘণ্টাখানেক দাঁড়িয়ে ছিল। এই ঘটনায় এখন দেশের নিরাপত্তা বাহিনীর কাছে উঠে আসছে নতুন আতঙ্কের নাম— “হোয়াইট কলার টেররিজম।” অর্থাৎ, শিক্ষিত পেশাজীবীরা যখন সন্ত্রাসবাদের ছদ্মবেশ নেয়, তখন তাদের শনাক্ত করা আরও কঠিন হয়ে পড়ে। চিকিৎসকদের মতো সম্মানজনক পেশার মানুষ এমন নকশায় জড়িত থাকতে পারেন, তা কেউ ভাবতেও পারেনি।

এখন তদন্তের দায়িত্ব নিয়েছে এনআইএ ও দিল্লি পুলিশ স্পেশাল সেল। ইতিমধ্যেই ৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকিদের খোঁজে তল্লাশি চলছে কাশ্মীর, হরিয়ানা ও উত্তরপ্রদেশে। প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছে, এই মডিউলটি বিদেশি এক সংগঠনের অর্থায়নে পরিচালিত হচ্ছিল। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ জানিয়েছেন, “দেশের ভেতর কোনো ভাবেই সন্ত্রাসবাদী নেটওয়ার্ককে টিকতে দেওয়া হবে না। এই ঘটনায় জড়িত প্রত্যেককে খুঁজে বের করা হবে।”

চিকিৎসা মানে যেখানে প্রাণ বাঁচানো, সেখানে সেই পেশাই যদি মৃত্যুর অস্ত্র হয়ে ওঠে, তাহলে সমাজের নিরাপত্তা কতটা ভঙ্গুর হয়ে গেছে, সেটাই স্পষ্ট করে দিল লালকেল্লা বিস্ফোরণ।

More Articles