হেনস্থাকারীদের সংবর্ধনা শুভেন্দু অধিকারীর, কলকাতায় আর ফিরতে চান না আতঙ্কিত রিয়াজুল
Seikh Riyajul: ব্রিগেডে হেনস্থায় তিনি মানসিকভাবেও বিপন্ন বোধ করছেন। পরিবার চাইছে না রিয়াজুল আর কলকাতায় কাজে ফিরুক।
গণতন্ত্র রক্ষায় বড় ভূমিকা থাকে বিরোধী দলের। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের বিরোধী দলনেতা কি রাজ্যের সমস্ত ধর্মাবলম্বীদের দলনেতা নন? তিনি যে ভোটে জিতে ক্ষমতায় এসেছেন, সব ধর্মের, সব জাতির মানুষেরই প্রতিনিধি নন নাকি একটি গোষ্ঠীরই প্রতিনিধি? ৭ ডিসেম্বর ব্রিগেডে গীতা পাঠের অনুষ্ঠানে চিকেন প্যাটি বিক্রেতাকে মারধরের ঘটনায় হেনস্থকারীদের তিনজনকে ১১ ডিসেম্বর গ্রেফতার করে পুলিশ। এরপর জামিনে মুক্ত হলে তাঁদের উত্তরীয়, ফুলের মালা পরিয়ে সংবর্ধনা দিতে দেখা যায় রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকে। আর এই ঘটনাতেই প্রশ্ন উঠছে, বিরোধী দলনেতার ভূমিকা নিয়ে।

রিয়াজুলের হেনস্থকারীদের সংবর্ধনা শুভেন্দু অধিকারীর।
অন্যদিকে প্যাটি বিক্রেতা শেখ রিয়াজুল ফিরে গিয়েছেন তাঁর গ্রাম হুগলির পূর্ব কেশবপুরে। ইনস্ক্রিপ্টের সঙ্গে কথপোকথনে রিয়াজুল জানান, তিনি অসুস্থ। ব্রিগেডে হেনস্থায় তিনি মানসিকভাবেও বিপন্ন বোধ করছেন। পরিবার চাইছে না রিয়াজুল আর কলকাতায় কাজে ফিরুক। “যদি আবার কেউ মারতে আসে? দেখি, শরীর ভালো হলে কলকাতা যাওয়ার কথা ভাববো। গ্রামে তো তেমন কাজও নেই। আমার ইনকামেই সংসার চলতো। ছোট ছেলেটা দর্জির কাজ শিখছে। বড় ছেলে হায়দরাবাদে সোনার কাজ শিখতে গেছে। এখন সংসার কী ভাবে চলবে সেটাও বুঝতে পারছি না।” বলেন শেখ রিয়াজুল।
বিরোধী দলনেতা হেনস্থাকারীদেরই সংবর্ধনা জানিয়েছেন, এই ঘটনায় হতাশার সুর শোনা গেল রিয়াজুলের কণ্ঠে। একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে তিনি বলেন, “কী আর বলবো, আমার তো যা ক্ষতি হওয়ার হয়েই গেছে। মান-সম্মান সব গেছে, আর কোনো হকারের সঙ্গে যেন এমন না হয়, সেটাই চাই। শুনছি পাল্টা আমার নামে কেস করেছে শুনছি, আমার আর এসব ভালো লাগছে না।”
আরও পড়ুন- Fact Check: ব্রিগেডে প্যাটি বিক্রেতা ভেজ বলে চিকেন প্যাটি বিক্রি করছিলেন?
ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা গিয়েছিল, প্যাটি বিক্রেতাকে নাম বলার জন্য চাপ দেওয়া হচ্ছে। নাম বলতেই মারধোর, কান ধরে উঠবস পর্যন্ত করানো হয়। সে ভিডিও সমাজমাধ্যমে সবাই দেখেছে, যা রিয়াজুলের কাছে অস্বস্তির বলে জানা যায় তাঁর কথায়। “নাম বলতেই মার খেলাম”, বলেন রিয়াজুল। কেন? প্যাটি বিক্রেতার নাম রিয়াজুল বলে নাকি আমিষ খাবার বিক্রি করছিলেন বলে? কারণ যাই হোক না কেন দুটোই গণতান্ত্রিক ভারতবর্ষের ইতিহাসে লজ্জার। কে কী খাবে, তা ঠিক করে দেবে কে? যা পরিবেশ, তৈরি হয়েছে পশ্চিমবঙ্গে তা স্বাভাবিকভাবেই ভাবাচ্ছে, আমিষ খাবার বিক্রেতাদের কি তবে এবার আতঙ্কের সঙ্গে ব্যবসা করতে হবে?
তবে শুধু পশ্চিমবঙ্গ নয়। এই ঘৃণার পরিবেশ তৈরি হচ্ছে দেশব্যাপী। বিহারের নওয়াদা জেলার ঘটনা। ৫০ বছর বয়সি পোশাক বিক্রেতা মহম্মদ আতহার হুসেন সাইকেলে চেপে জামাকাপড় ফেরি করতেন। গগন দিওয়ান গ্রামের বাসিন্দা মহম্মদ আতহার ৫ ডিসেম্বর বাড়ি ফিরছিলেন ভট্টাপার গ্রাম হয়ে। সাইকেলের চাকা পাংচার হওয়ায়, তিনি সাইকেল সারাইয়ের দোকানের খোঁজ করছিলেন। এমন গ্রামের কয়েকজন তাঁকে ঘিরে ধরে, তাঁর নাম এবং পেশা জানতে চায়। আতহারের থেকে কেড়ে নেওয়া হয় আঠারো হাজার টাকা। এরপর তাঁকে মারধর করা হয়। জামা-কাপড় খুলে পুরুষাঙ্গে আঘাত এবং লোহার রড গরম করে ছ্যাঁকা দেওয়া হয়। একটি ভিডিওতে তাঁকে হেনস্থা করার ঘটনার কথা তুলে ধরেন আতহার। যা সমাজমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
In Bihar's Nawada, a Muslim vendor Athar Hussain was brutally tortured by a mob when he had gone to sell goods. He died during the treatment on Friday but he narrated how he was tortured in a closed room. The mob checked his Muslim identity after removing his pant. pic.twitter.com/SW3rjRyYuT
— Waquar Hasan (@WaqarHasan1231) December 13, 2025
আতহারকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলেও, শেষরক্ষা হয়নি। শুক্রবারই মারা যান তিনি। ওড়িশায় এমনই এক ঘটনা ঘটেছিল মুর্শিদাবাদের পরিযায়ী শ্রমিকের সঙ্গে। এতদিন বাংলাভাষী হলেই বাংলাদেশি সন্দেহে আক্রমণ করা হচ্ছিল, এবার সরাসরি নাম জানতে চাওয়া হচ্ছে! তবে কি ধর্মের ভিত্তিতে আক্রমণ শুরু হলো?

Whatsapp
