গৌরী লঙ্কেশ হত্যায় অভিযুক্তদের মালা পরিয়ে বরণ! বিচার পাবেন দেশের নির্ভীক সাংবাদিক?

Gauri Lankesh Murder: পরশুরাম ওয়াঘমোর এবং মনোহর যাদভে, ছয় বছর জেল খেটেছেন। অবশেষে গত ৯ অক্টোবর বেঙ্গালুরু দায়রা আদালত এই দু'জনকে জামিন দেয়।

নির্ভীক সমাজকর্মী-সাংবাদিক গৌরী লঙ্কেশকে বাড়ির সামনে গুলি করে হত্যা করা হয়েছিল। অপরাধ? 'অপরাধ' যে তিনি এই রাষ্ট্রের কেন্দ্রে আসীন সরকারের ঘৃণার রাজনীতি নিয়ে কথা বলেছিলেন। দেশকে ধর্ম দিয়ে ভাগ করার বিরুদ্ধে নিরন্তর কথা বলে গেছেন, কথা বলে গেছেন ইসলামোফোবিয়ার বিরুদ্ধে। সেই গৌরী লঙ্কেশ নেই ৭ বছর হলো। তবে তাঁর হত্যাকারীরা আছে এই পৃথিবীতে, এই দেশে। শুধু আছে তাই নয়, সম্মানিত হচ্ছে গৌরীকে হত্যার জন্য। গৌরী লঙ্কেশকে হত্যার দায়ে অভিযুক্ত দুই ব্যক্তিকে ৯ অক্টোবর একটি বিশেষ আদালতে জামিন দিয়েছে। তারপরে হিন্দুত্ববাদী গোষ্ঠীগুলি এই দুই ব্যক্তিকে সাদরে স্বাগত জানিয়েছে।

পরশুরাম ওয়াঘমোর এবং মনোহর যাদভে, ছয় বছর জেল খেটেছেন। অবশেষে গত ৯ অক্টোবর বেঙ্গালুরু দায়রা আদালত এই দু'জনকে জামিন দেয়। ১১ অক্টোবর আনুষ্ঠানিকভাবে পারাপ্পানা অগ্রহারা কারাগার থেকে মুক্তি পায় এই দুই অভিযুক্ত।

বিজয়পুরায় তাদের নিজ শহরে ফিরে আসার পর, স্থানীয় হিন্দুত্ববাদী গোষ্ঠীর সমর্থকরা মালা, গেরুয়া উত্তরীয় এবং উদযাপনের স্লোগান দিয়ে স্বাগত জানায় এই দুই জেলখাটা অভিযুক্তকে। দু'জনকে ছত্রপতি শিবাজির একটি মূর্তির কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে মাল্যদান চলে। তারপর গৌরী লঙ্কেশের হত্যায় অভিযুক্ত দুইজন কালিকা মন্দিরে প্রার্থনা করতে যান! অভিযুক্তদের বিজয়পুরায় স্বাগত জানানোর ধুম দেখে বিচারব্যবস্থার চোখে কালো কাপড় যেন আরও প্রকট হয়ে মনে পড়ে। কেন এই উদযাপন দুই হত্যাকারীকে ঘিরে? সমর্থকদের দাবি, বিনা দোষে তাঁদের জেল খাটানো হয়েছে। লাইভল রিপোর্ট বলছে, ওয়াঘমোর এবং যাদভে ছাড়াও, অমল কালে, রাজেশ ডি বাঙ্গেরা, বাসুদেব সূর্যবংশী, রুশিকেশ দেবদেকর, গণেশ মিসকিন এবং অমিথ রামচন্দ্র বাদ্দিকে ৯ অক্টোবর জামিন দেওয়া হয়েছিল।

আরও পড়ুন- স্বাধীন সাংবাদিকদেরই গৌরী লঙ্কেশের আদর্শকে বাঁচাতে হবে

এক বিশিষ্ট হিন্দুত্ববাদী নেতা সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, "আজ বিজয়াদশমী, আমাদের জন্য খুব তাৎপর্যপূর্ণ দিন। আমরা পরশুরাম ওয়াঘমোর এবং মনোহর যাদভেকে স্বাগত জানাই। এরা গৌরী লঙ্কেশলে হত্যার অভিযোগে অন্যায়ভাবে ছয় বছরের জন্য জেলে ছিলেন। প্রকৃত অপরাধীদের এখনও খুঁজে পাওয়া যায়নি, কিন্তু এই ব্যক্তিদের শুধু হিন্দুত্ববাদী কর্মী বলেই টার্গেট করা হয়েছে এবং এই অন্যায়ের গুরুতর বিচার প্রয়োজন।"

প্রবীণ সাংবাদিক গৌরী লঙ্কেশকে তাঁর বামপন্থী মতামত এবং চরম হিন্দুত্ববাদী মতাদর্শের তীব্র সমালোচনার জন্য বহুকাল থেকেই নিশানায় রেখেছিল স্থানীয় হিন্দুত্ববাদী দলগুলি। ২০১৭ সালের ৫ সেপ্টেম্বর বেঙ্গালুরুতে তাঁর বাড়ির বাইরে তিনজন মোটরসাইকেল চালক গুলি করে হত্যা করে গৌরীকে। গৌরীর হত্যাকে ঘিরে সারাদেশেই একাংশের মানুষের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ দেখা যায়। ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে, কর্ণাটকের মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়া গৌরী লঙ্কেশ হত্যা মামলায় অভিযুক্তদের বিচার ত্বরান্বিত করার জন্য বিশেষ আদালত গঠনের নির্দেশও দিয়েছিলেন। তারপর, ২০২৪ সালে দুর্গাপুজোয় গৌরীর আরাধনার মাঝে যে খবরটি আড়ালে চলে গেল, তা হলো এক রক্তমাংসের আদর্শবান গৌরীর মৃত্যুর বিচার হলো না এখনও। বিলকিসের ধর্ষকদেরও এভাবেই স্বাগত জানিয়েছিল বিজেপি। মালা পরিয়ে ধর্ষকদের বরণ করা হয়েছিল। গৌরীর হত্যাকারীদেরও মালা পরানো হলো। এই ভারতবর্ষে, এসব আকছার ঘটে!

More Articles