কেন পিকের সঙ্গে বৈঠক প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর?

Priyanka Gandhi Meet Prashant Kishor: ২০২২ সালে পিকের কংগ্রেসে যোগ দেওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল, এমনকি দলীয় কৌশল পুনর্গঠন নিয়ে একাধিক প্রস্তাবও তিনি রেখেছিলেন।

প্রায় দু'বছরের নীরবতা ভেঙে আবার রাজনৈতিক আলোচনার কেন্দ্রে উঠে এলেন প্রিয়াঙ্কা গান্ধী ও প্রশান্ত কিশোর। দিল্লিতে তাঁদের সাম্প্রতিক একান্ত বৈঠককে কেন্দ্র করে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, কংগ্রেস কি ফের নিজের রাজনৈতিক কৌশল নতুন করে সাজাতে চাইছে? নাকি দলের ভেতরের অন্তর্দ্বন্দ্ব ও সাংগঠনিক সংকট সামাল দিতে এক ভিন্ন পথের সন্ধান চলছে?

এই বৈঠকটি হয় অত্যন্ত গোপনীয়তার সঙ্গে। জানা গিয়েছে, প্রায় এক ঘণ্টা ধরে দু’জনের মধ্যে আলোচনা চলে, কিন্তু বৈঠকের বিষয়বস্তু নিয়ে কংগ্রেস বা প্রশান্ত কিশোর— কেউই প্রকাশ্যে কিছু বলতে চাননি। সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখে প্রিয়াঙ্কা গান্ধী বিষয়টি কার্যত এড়িয়ে যান। তাঁর সংক্ষিপ্ত মন্তব্য, সংসদে আরও গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু রয়েছে, রাজনৈতিক মহলে নতুন করে প্রশ্ন তৈরি করে, যদি বৈঠকটি গুরুত্বহীনই হয়, তাহলে তা নিয়ে এমন নীরবতা কেন?

এই নীরবতার কারণ খুঁজতে গেলে ফিরে যেতে হয় অতীতে। প্রশান্ত কিশোর এক সময় কংগ্রেসের জন্য সম্ভাব্য ‘গেম চেঞ্জার’ হিসেবেই বিবেচিত হচ্ছিলেন। ২০২২ সালে তাঁর কংগ্রেসে যোগ দেওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল, এমনকি দলীয় কৌশল পুনর্গঠন নিয়ে একাধিক প্রস্তাবও তিনি রেখেছিলেন। কিন্তু সেই প্রস্তাবগুলির অনেকটাই কংগ্রেসের পুরনো সাংগঠনিক কাঠামোর সঙ্গে সাংঘর্ষিক ছিল। সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা, নেতৃত্বের ভূমিকা ও রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি— এই তিনটি প্রশ্নে মতবিরোধ এতটাই গভীর হয় যে শেষ পর্যন্ত সেই সম্পর্ক আর এগোয়নি।

আরও পড়ুন

বিহারে শূন্য জন সুরজ! প্রশান্ত কিশোরের অঙ্ক কেন মিলল না?

তারপর থেকেই কংগ্রেস ও প্রশান্ত কিশোর কার্যত আলাদা পথে হাঁটতে শুরু করেন। প্রশান্ত কিশোর বিহারকে নিজের রাজনৈতিক পরীক্ষাগার হিসেবে বেছে নেন এবং ‘জন সুরাজ’ দলের মাধ্যমে সরাসরি রাজনীতিতে প্রবেশ করেন। কিন্তু বিহারের রাজনৈতিক বাস্তবতায় সেই উদ্যোগ আশানুরূপ সাফল্য পায়নি। অন্যদিকে, কংগ্রেসও পরপর রাজ্য নির্বাচনে ধাক্কা খেয়েছে। একাধিক রাজ্যে সংগঠন দুর্বল, নেতৃত্ব বিভ্রান্ত, আর ভোটব্যাঙ্ক ক্রমশ সরে যাচ্ছে, এই বাস্তবতা অস্বীকার করার জায়গা নেই।

এই প্রেক্ষাপটেই প্রিয়াঙ্কা গান্ধী ও প্রশান্ত কিশোরের বৈঠক নতুন তাৎপর্য পাচ্ছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ মনে করছেন, কংগ্রেস হয়ত আবারও নির্বাচনী কৌশল নিয়ে নতুন করে ভাবতে শুরু করেছে। বিশেষ করে ২০২৯ সালের লোকসভা নির্বাচন যত এগিয়ে আসছে, ততই দলের ভেতরে দীর্ঘমেয়াদি রণকৌশল নিয়ে চাপ বাড়ছে। রাহুল গান্ধীর ভারত জোড়ো যাত্রা কংগ্রেসের ভাবমূর্তিতে কিছুটা ইতিবাচক প্রভাব ফেললেও, তা নির্বাচনী সাফল্যে কতটা রূপান্তরিত হবে— সেই প্রশ্ন এখনও খোলা।

প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর ভূমিকাও এই জায়গায় গুরুত্বপূর্ণ। উত্তরপ্রদেশে একাধিক নির্বাচনে সক্রিয় ভূমিকা নেওয়া সত্ত্বেও প্রত্যাশিত ফল না পাওয়ার পড়েও তিনি এখনও কংগ্রেসের অন্যতম মুখ। সংগঠন ও মাঠপর্যায়ের রাজনীতিতে তাঁর সক্রিয়তা দলের একাংশের কাছে ভরসার জায়গা। ফলে তাঁর সঙ্গে প্রশান্ত কিশোরের বৈঠককে অনেকেই কংগ্রেসের নতুন কৌশল হিসেবেই দেখছেন।

তবে এই বৈঠক যে অবিলম্বে কোনো জোট বা রাজনৈতিক সমঝোতার দিকে এগোচ্ছে, এমন ইঙ্গিত এখনও নেই। কংগ্রেসের অন্দরমহলে একাংশ বরাবরই বাইরের কৌশলবিদদের উপর নির্ভরশীলতা নিয়ে অস্বস্তিতে ভুগেছে। প্রশান্ত কিশোরের আগের প্রস্তাবগুলিও সেই কারণেই পূর্ণ সমর্থন পায়নি। ফলে এবারও এই আলোচনা আদৌ কোনো বাস্তব সিদ্ধান্তে পৌঁছবে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ থাকছেই।

আরও পড়ুন

মোদি দিদির মন্ত্রণাদাতা থেকে নিজেই ভোটপ্রার্থী! কেন মিলল না প্রশান্ত কিশোরের অঙ্ক?

আরও একটি দিক উপেক্ষা করা যায় না। প্রশান্ত কিশোর বর্তমানে আর শুধুমাত্র একজন নির্বাচনী কৌশলবিদ নন, তিনি নিজেই একজন রাজনৈতিক নেতা। নিজের রাজনৈতিক পরিচয় গড়ে তোলার চেষ্টা করছেন তিনি। এই অবস্থায় কংগ্রেসের সঙ্গে তাঁর সম্ভাব্য সম্পর্ক কেমন হবে— সহযোগিতা, পরামর্শ, নাকি কৌশলগত সমঝোতা; তা এখনও স্পষ্ট নয়।

সব মিলিয়ে এই বৈঠক আপাতত প্রশ্নই বেশি তৈরি করেছে, উত্তর কম। কংগ্রেস কি নিজেদের পুরনো রাজনৈতিক ধারা থেকে সরে এসে নতুন করে নির্বাচনী রাজনীতির দিকে আরও এক ধাপ এগোতে চাইছে? নাকি এটি শুধুই মতবিনিময়ের একটি পর্ব, যার কোনো দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব পড়বে না? প্রিয়াঙ্কা গান্ধী ও প্রশান্ত কিশোরের নীরবতা এই প্রশ্নগুলিকে আরও জোরালো করে তুলেছে।

ভারতীয় রাজনীতিতে অনেক সময়ই নীরবতাই সবচেয়ে বড় ইঙ্গিত দেয়। এই বৈঠকও হয়ত তেমনই কোনো পরিবর্তনের পূর্বাভাস, অথবা নিছকই এক ব্যর্থ সম্ভাবনার পুনর্মূল্যায়ন। তবে এটুকু নিশ্চিত, কংগ্রেস যখন গভীর সংকটে, তখন এই ধরনের বৈঠককে হালকাভাবে দেখার সুযোগ নেই।

More Articles