ফিঙ্গারপ্রিন্ট, ফেসলক অতীত! জানেন আপনার নিঃশ্বাসেই খুলতে পারে মোবাইলের তালা?
Breath Fingerprint: আইআইটি মাদ্রাজের এক দল গবেষকজানিয়েছেন, এবার আর শুধু ফেসলক বা ফিঙ্গারপ্রিন্ট লকই নয়, এসে গিয়েছে এমন প্রযুক্তি যে আপনার নিঃশ্বাসেই আনলক হয়ে যাবে আপনার হাতের মোবাইলটি।
আপনার হাতের মোবাইলটি যে কোনও জায়গাতেই সুরক্ষিত। কারণ আপনার আঙুলের ছাপ বা মুখ ছাড়া অন্য কোনও কিছু দিয়েই তাকে খোলা কঠিন। আর নিউমারিক বা প্যাটার্ন লক, সেসব তো আছেই। তবে প্রযুক্তি এতটাই এগিয়ে গিয়েছে যে ফিঙ্গারপ্রিন্ট বা ফেসলক এখন অতীত। তেমনটাই বলছেন আইআইটি মাদ্রাজের এক দল গবেষক। তাঁরা জানিয়েছেন, এবার আর শুধু ফেসলক বা ফিঙ্গারপ্রিন্ট লকই নয়, এসে গিয়েছে এমন প্রযুক্তি যে আপনার নিঃশ্বাসেই আনলক হয়ে যাবে আপনার হাতের মোবাইলটি।
আশ্চর্য হলেও সত্যি! বায়োমেট্রিকের জগতে বৈপ্লবিক বদল আনতে চলেছে এই গবেষণা। শুধু স্মার্টফোনই নয়, স্মার্টফোনের মতো আরও নানা ডিভাইসও আনলক করার কাজে ব্যবহৃত হতে পারে নয়া এই প্রযুক্তি। এয়ারপ্রেশার সেন্সর দিয়ে রেকর্ড করা ডেটা নিয়ে নিছক কৌতূহলের বশেই পরীক্ষানিরিক্ষা শুরু করেছিলেন চেন্নাইয়ের ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি মাদ্রাজের গবেষক মহেশ পঞ্চাগনুলা ও তাঁর টিম। তবে এর নেপথ্যেও কিন্তু রয়েছে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার হাত। প্রাথমিক ভাবে বিজ্ঞানীদের কাজটা ছিল একটি এআই মডেল বানানো যা প্রতিটি ব্যক্তির শ্বাসযন্ত্রজনীত সমস্যাগুলোকে চিহ্নিত করতে পারে। ওষুধজনীত গবেষণার কাজের জন্যই বানানো হচ্ছিল ওই মডেল। তবে সেই পরীক্ষানিরিক্ষা করতে করতেই বিশাল এক তথ্যভাণ্ডারের সন্ধান পেয়ে যান বিজ্ঞানীরা।
আরও পড়ুন: আর সহজে মিলবে না মোবাইল সংযোগও! সিমকার্ডে কেন নিষেধাজ্ঞা সরকারের?
সাম্প্রতিক একটি রিপোর্টে জানা গিয়েছে, আইআইটি মাদ্রাজের ওই গবেষক দল মোট ৯৪ জনের প্রায় দশটি করে নিঃশ্বাস-প্রশ্বাস রেকর্ড করেন। আর সেই সবই করা হয়েছে এয়ার প্রেশার সেন্সরের মাধ্যমে, যা এক সেকন্ডে প্রায় ১০ হাজারটি রিডিং নিতে সক্ষম। গবেষকেরা দেখেন, ওই এআই মডেলটি ডেটা বিশ্লেষণের পর নির্ভুল ভাবে যে কোনও শ্বাস শনাক্ত করতে সফল হচ্ছে। অর্থাৎ ওই এআই মডেলের রেকর্ডে যদি কোনও ব্যক্তির ব্রিদ-ডেটা থেকে যায়, তাহলে ৯৭ শতাংশ ক্ষেত্রেই নির্ভুল ভাবে সেই ব্যক্তির যে কোনও শ্বাসকে শনাক্ত করতে পারে। অর্থাৎ নতুন শ্বাসটি যে সেই ব্যক্তির থেকেই আসছে তা যাচাই করতে সক্ষম।
ইতিমধ্যেই ওই এআই মডেলটির বেশ কয়েকটি ট্রায়াল দিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। আইআইটি মাদ্রাজের গবেষক পঞ্চাগনুলা জানাচ্ছেন, এআই মডেলটি প্রতিটি ব্যক্তির শরীরের এক্সট্রাথোরাসিক অঞ্চলের যে আলাদা আলাদা শারীরবৃত্তিয় গড়ন, যা আদতে মানুষের নিঃশ্বাস প্রশ্বাসের টারবিউল্যান্সের জন্য় দায়ী, সেটিকে আলাদা করে শনাক্ত করতে পারে। ফলে আলাদা আলাদা ব্যক্তির নিঃশ্বাসকে চিহ্নিত করতে সমস্যা হয় না মডেলটির।
প্রাথমিক ভাবে স্মার্টফোন যখন আত্মপ্রকাশ করল, তখন নিউমেরিক বা প্যাটার্ন লকই ছিল ভরসা। সেখান থেকে এল ফিঙ্গারপ্রিন্ট এবং আরও পরে ফেসলক। আর এই ধরনের বায়োমেট্রিক যে শুধুমাত্র স্মার্টফোন বা এই ধরনের ডিভাইসেই ব্যবহার হয়, তাই নয়। এখন তো বিভিন্ন নিরাপত্তা ব্যবস্থা থেকে শুরু করে অফিশিয়াল কাজেও ব্যবহৃত হয় বায়োমেট্রিক। ব্যাঙ্ক থেকে শুরু করে আধার কার্ড, সবেতেই এখন বায়োমেট্রিকের ব্যবহার।
আরও পড়ুন: নুনের দানাই নাকি আশ্চর্য ক্যামেরা! অসম্ভব কাণ্ডে তাজ্জব গোটা বিশ্ব
সত্যিই যদি এই নিঃশ্বাস-প্রশ্বাসকে বায়োমেট্রিক হিসেবে ব্যবহার করা যায়, তাহলে কিন্তু তা হতে চলেছে যুগান্তকারী। এর ফলে প্রতারণাও কমানো যাবে বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা। ফিঙ্গারপ্রিন্ট থেকে শুরু করে ফেসলক মৃত ব্যক্তির ক্ষেত্রেও ব্যবহার করা যায়। কিন্তু এই ব্রিদ-লকের ক্ষেত্রে কিন্তু তা সম্ভব নয়। বহু ক্ষেত্রেই দেখা যায়, মৃত ব্যক্তির মোবাইল তাঁর হাতের ছাপ বা মুখের ছবি ব্যবহার করে খুলে ফেলা যাচ্ছে। তবে ব্রিদ-লকের ক্ষেত্রে সে সম্ভাবনা একেবারেই নেই। তাছাড়া মানুষের ফিঙ্গারপ্রিন্ট বা মুখের ছবি সংগ্রহ করা সম্ভব। কিন্তু নিঃশ্বাস-প্রশ্বাসের অ্যালগরিদম সংগ্রহ করা কি সহজ হবে জালিয়াতদের পক্ষে। মনে তো হয় না।