সুপ্রিম কোর্টে জামিনের রায় স্থগিত! বিনা বিচারেই সর্বোচ্চ সাজা ভোগ করবেন উমর, সার্জিলরা?

Supreme Court hearing: উমর, সার্জিলরা পাঁচ বছরেরও বেশি সময় ধরে কারাগারে, অথচ মামলার বিচারই শুরু হয়নি। যেখানে মামলার সর্বোচ্চ সাজাই ৭ বছরের।

২০২০ সালে CAA-NRC নিয়ে শুরু হওয়া প্রতিবাদ আচমকা রূপ নিয়েছিল ভয়ঙ্কর দাঙ্গায়। সেই সময়ের রক্তক্ষয়ী ঘটনাগুলিকে ঘিরে তৈরি হওয়া ষড়যন্ত্র মামলা আজও চলছে। আর সেই মামলারই কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা ছাত্র নেতা উমর খালিদ, শারজিল ইমাম ও আরও কয়েকজনের জামিন আবেদনের শুনানি এবার সুপ্রিম কোর্টে শেষ হয়েছে। যদিও রায় শোনানো হয়নি, আদালত সিদ্ধান্ত ‘সংরক্ষণ’ করে রেখেছে।

অভিযুক্তদের আইনজীবীরা আদালতকে বারবার মনে করিয়ে দেন, এই তরুণরা পাঁচ বছরেরও বেশি সময় ধরে কারাগারে, অথচ মামলার বিচারই শুরু হয়নি। যেখানে মামলার সর্বোচ্চ সাজাই ৭ বছরের। তাঁদের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে, তা রাজনৈতিক মতের বিরোধীতা কিন্তু সহিংসতার প্রমাণ নয়। উমর খালিদের ভাষণ আদালতে পড়ে শোনানো হয়, সেখানে সরকারের নীতি নিয়ে কড়া সমালোচনা আছে ঠিকই, কিন্তু কোথাও নেই সহিংসতার আহ্বান বা প্ররোচনার ইঙ্গিত।

আরও পড়ুন

কেন উমর, শারজিলদের জামিন খারিজ করা হচ্ছে বারবার?

আইনজীবীরা আরও বলেন, যে বক্তৃতাকে ‘উসকানি’ বলা হচ্ছে, সেটি দাঙ্গার সময় দেওয়া হয়নি, আর যেদিন দিল্লি জ্বলছিল সেদিন উমর খালিদ শহরেই ছিলেন না। তাঁর বিরুদ্ধে প্রমাণ হিসেবে যা দেখানো হচ্ছে, সেগুলো আন্দোলনের স্বাভাবিক প্রস্তুতি— ব্যক্তিগত মতামত, পোস্টার, মিছিলের পরিকল্পনা। দেশের যে কোনো গণতন্ত্রেই এইসব কাজ আইনি বলয়ের মধ্যেই থাকে।

কিন্তু দিল্লি পুলিশ ও কেন্দ্রের অবস্থান সম্পূর্ণ আলাদা। তাদের যুক্তি, এটি কোনো স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিবাদ ছিল না, বরং একটি পরিকল্পিত নেটওয়ার্ক, যার উদ্দেশ্য ছিল গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক সফরের সময় রাজধানীতে অস্থিরতা তৈরি করা। পুলিশের দাবি, শারজিল ইমামের বক্তৃতাগুলি 'উগ্র', এবং এগুলো অন্যান্য অভিযুক্তদের সঙ্গে মিলে 'সমন্বিত ষড়যন্ত্রের' অংশ হিসেবে কাজ করেছে। ওয়াটস অ্যাপে বার্তা আদান-প্রদান, কয়েকটি মিটিং আর পথসভায় অংশ নেওয়াকেই পুলিশ বলছে দাঙ্গা ঘটানোর আগে প্রস্তুতি নেওয়ার অংশ।

আরও পড়ুন

তারিখ পে তারিখ! উমর খালিদদের জামিন শুনানি ফের স্থগিত

শুনানির সময় সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিরাও কিছু গুরুতর প্রশ্ন তোলেন, একটা বক্তৃতা কোন পরিস্থিতিতে ‘সন্ত্রাস’ বা ‘রাষ্ট্রবিরোধী কাজ’ বলে ধরা যেতে পারে? রাজনৈতিক বক্তব্য কি কখনও ইউএপিএ মতো কঠোর আইনের আওতায় আসতে পারে? আর একজন অভিযুক্তের কথাকে কি অন্যদের বিরুদ্ধে প্রমাণ হিসেবে ব্যবহার করা যায়?
এই সব প্রশ্নের মধ্যেই শেষ হলো শুনানি। বিচারপতিরা জানালেন, রায় এখনই নয়। আদালত চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেওয়ার আগে উভয় পক্ষকে তাদের লিখিত যুক্তি জমা দেওয়ার সুযোগ দিয়েছে।

উমর, সার্জিলরা পাঁচ বছরেরও বেশি সময় ধরে কারাগারে, অথচ মামলার বিচারই শুরু হয়নি। যেখানে মামলার সর্বোচ্চ সাজাই ৭ বছরের। এখন প্রশ্ন একটাই, উমর খালিদ ও শারজিল ইমামরা কি বিনা বিচারেই এই মামলার সবোর্চ্চ সাজা পাবেন? এই রায় ভারতের মত প্রকাশের অধিকার, পুলিশের তদন্তের মানদণ্ড এবং ইউএপিএ-র প্রয়োগ নিয়ে জাতীয় আলোচনাকেও নতুন করে ওলটপালট করে দিচ্ছে।

More Articles