অবশেষে হাতে পেলেন ভারতের পাসপোর্ট! দশ বছর আগে যে কারণে দেশ ছেড়েছিলেন অক্ষয় কুমার...

Akshay Kumar Indian Citizenship: মুখ পুড়ল নিন্দুকদের। দেশের ৭৬তম স্বাধীনতা দিবসে অক্ষয় কুমারের হাতে এসে পৌঁছল ভারতের নাগরিকত্ব।

জাতীয়তাবাদী সিনেমায় ভরা তাঁর ঝুলি। মাথায় মোদির আশীর্বাদী হাত, পিছনে ভক্তদের লাইন! চলনে-বলনে তিনি একেবারে 'দেশি বান্দা', অথচ এ হেন দেশি অভিনেতার নাকি নিজের দেশের নাগরিকত্বই নেই। এমন ভয়ঙ্কর 'বদনাম' নিয়েই তিন দশকের বলিউড কেরিয়ারের প্রায় এক দশক কাটিয়েই ফেললেন 'খিলাড়ি' অক্ষয়কুমার।  বলিউডে তাঁর শৃঙ্খলাবোধ, পরিশ্রম নিয়ে চর্চা প্রায় সর্বোত্র। তবে এত জনপ্রিয়তা সত্ত্বেও ভক্তদের খটকা একটাই, এ দেশের নাগরিকত্বটাই নেই তাঁর। নিন্দুকেরা এ নিয়ে শোরগোল করতেও ছাড়েন না। এতবড় জাতীয়তাবাদী অভিনেতা, অথচ তিনি সেই অর্থে ভারতীয়ই নন। তবে শেষপর্যন্ত সেই দুর্নাম দূর হল। মুখ পুড়ল নিন্দুকদের। দেশের ৭৬তম স্বাধীনতা দিবসে অক্ষয় কুমারের হাতে এসে পৌঁছল ভারতের নাগরিকত্ব।

আরও পড়ুন: পিছিয়ে টম ক্রুজও! বিশ্বের চতুর্থ ধনী অভিনেতা শাহরুখের কেনা সবচেয়ে দামি জিনিস কী?

বলিউডের জনপ্রিয়তম অভিনেতা অক্ষয় কুমার। তাঁর সিনেমা মুক্তি পেলে প্রেক্ষাগৃহে উপচে পড়ে ভিড়, উপচে পড়ে বক্স অফিসও। অ্যাকশন হিরো অক্ষয়কে একবার চোখের দেখা দেখতে লোকে হত্যে দেয়। এমনই মহিমা তাঁর। পঞ্জাবের অমৃতসরে জন্ম অভিনেতা অক্ষয়ের। ভালো নাম রাজীব হরি ওম ভাটিয়া। বাবা ছিলেন সেনাবাহিনীতে। ছোট থেকে খেলাধুলা, শারীরিক কসরতে ছিল বিশেষ আগ্রহ। কলেজ শেষ করে শিখতে শুরু করেন তায়কন্ডু। পেয়ে যান ব্ল্যাক বেল্টও। সেই সূত্রেই বলিউডে এসে পড়া। না, রাজীব নয়, অক্ষয়কুমার হিসেবেই লোকে চিনল তাঁকে। নামের মতোই অক্ষয় তাঁর চলচ্চিত্রের কেরিয়ারও। তিরিশ বছর ধরে বলিউডকে একই রকম ভাবে মোহিত করেছেন তিনি। আজও একই রকম উজ্জ্বল অক্ষয়। অ্যাকশন থেকে কমেডি, প্রায় সমস্ত ধরনের চরিত্রেই দাপিয়ে অভিনয় করে চলেছেন, বয়সের সঙ্গে সঙ্গে আরও ঝকঝকে হয়েছে তাঁর অভিনয়। ঝুলিতে রয়েছে দু'টি ফিল্মফেয়ার ও দু'টি জাতীয় পুরস্কার। শুধু কি তাই, ২০০৯ সালে ভারত সরকারের কাছ থেকে কিনি পান পদ্মশ্রী। এ হেন অক্ষয়ের এতদিন ভারতীয় নাগরিকত্ব ছিল না। বরং দেশের এই জনপ্রিয়তম অভিনেতা ছিলেন অ্যাদ্দিন ধরে কানাডার নাগরিক।

২০১১ সালে কানাডার নাগরিকত্ব পান অক্ষয়। এদিকে আবার বিজেপি ঘনিষ্ঠ বলে বিশেষ নামডাক রয়েছে অক্ষয়ের। মোদির হাত সর্বদাই তাঁর মাথায়। জাতীয়তাবাদী ছবিতে ঠাসা তাঁর কেরিয়ার। বিশেষত কেরিয়ারের দ্বিতীয় অর্ধে এসে বিশেষ ভাবে বিজেপিঘনিষ্ঠ হয়ে পড়েন তিনি। রাজ অনুগ্রহ মাথায় থাকা সর্বদাই ভালো প্রজাদের জন্য। অক্ষয় কুমারও ব্যাতিক্রম নন। তবে অক্ষয় যে প্রবল পরিশ্রমী ও শৃঙ্খলাপরায়ণ, তা নিয়ে দ্বিমত নেই। বলিউডের পার্টিগুলিতে কম দেখতে পাওয়া যায় তাঁকে। 'আর্লি টু বেড, আর্লি টু রাইজ'-এর মন্ত্রে দীক্ষিত অক্ষয়কুমারকে নিয়ে কাজ করতে গিয়ে মাঝেমধ্যেই সে কারণে বিপাকে পড়েন পরিচালক-প্রযোজকেরা। তিনি ভারতের অন্যতম চড়া বেতনপ্রাপ্ত অভিনেতাও বটে। এর জন্য ২০১৫ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত ফোর্বস তালিকাতেও জায়গা ধরে রেখেছিলেন অক্ষয়।

জীবন সহজ নয়। কথায় বলে ব্য়র্থতাই সাফল্যের স্তম্ভ। তা মিথ্যে নয়। এই যে দুর্দান্ত কেরিয়ার, বলিউডে একের পর এক বক্সঅফিস সফল ছবি, এ সব কিছুর আগেও একটা সময় ছিল, যে সময়টায় তাঁকে ঘিরে ধরেছিল ব্যর্থতা। যে সময় পরের পর ফ্লপের মুথ দেখেছেন অক্ষয়। সেটা নব্বইয়ের দশক। সময় দ্রুত পাল্টাচ্ছিল। পাল্টাচ্ছিল রুচি। মানুষ নতুন নতুন অভ্যাসে অভ্যস্ত হচ্ছিল। হাতে এসে পড়ছিল একের পর এক প্রযুক্তি। মানুষের মন, চাওয়া-পাওয়া বদলে যাচ্ছিল। কিন্তু সিনেমা! স্বাভাবিক ভাবেই সমস্ত সিনেমা, সমস্ত পরিচালক সেই পাল্টে যাওয়া সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিতে পারেননি। দর্শক খারিজ করেছেন একের পর এক ছবিকে। মুখ থুবড়ে পড়েছিল সেসব বক্স অফিসে। আর তেমন ছবিই সেসময় শিকেয় ছিঁড়ছিল বলিউড এঅ তারকার। একের পর এক ফ্লপ, ব্যর্থতা, স্বাভাবিক ভাবেই মনোবল ভেঙে দিয়েছিল অক্ষয়ের। কয়েক জন বন্ধু সেসময় পরামর্শ দিয়েছিলেন, ভারত ছাড়ার। সেই উপদেশ শুনেছিলেন অক্ষয়, ভারত ছেড়ে কানাডায় চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তিনি।

 

কিন্তু গোড়া থেকেই আদ্যপান্ত 'দেশি' মানুষ এই অক্ষয়। ফলে বিদেশের হাওয়া বেশিদিন সহ্য হয়নি তাঁর। দেশে ফিরে আসেন অভিনেতা। ফের কাজ শুরু করেন তিনি। এবার আর দর্শক খালি হাতে ফেরাননি তাঁকে। বরং তাঁর ঝুলি ভরিয়ে দিয়েছেন একের পর এক হিট ছবিতে। বলিউডের অ্যাকশন হিরো অক্ষয় কুমার থেকে আজকের অক্ষয় কুমার হওয়ার পথে সম্ভবত দেশ ছাড়ার ওই পর্বটুকু ছিল তাঁর জীবনের বড় মোড়। কিন্তু তা সত্ত্বেও নিন্দুকরা পিছু ছাড়েননি তাঁর। বারবার তাঁকে শিনতে হয়েছে নানা বিদ্রূপ, ভারতীয় না হওয়ার জন্য নানা উপহাস। এরই মধ্যে হইহই করে এসে পড়ল করোনা অতিমারি। যা মানুষকে বুঝিয়ে দিল কার্যত বেঁচে থাকার দাম। আর এই করোনা পরিস্থিতিতেই অক্ষয় সিদ্ধান্ত নেন, তিনি ভারতীয় নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করবেন। যেমন বলা তেমন কাজ। কানাডার নাগরিকত্ব অবিলম্বে ছেড়ে ভারতের নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করেন।

আরও পড়ুন: বলিউডের প্রথম ‘কেচ্ছা’! যে ঘটনা টেকনিশয়ান থেকে তারকা করে তোলে অশোক কুমারকে

অবশেষে বলিউডের খিলাড়ির হাতে এসে পৌঁছেছে তাঁর ভারতীয় নাগরিকত্বের সংশাপত্র। দেশের ৭৬তম স্বাধীনতা দিবসের ঠিক আগেই তাঁর হাতে এসে পৌঁছয় ভারতীয় পাসপোর্ট। সেই পাসপোর্টের ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে অক্ষয় জানান, "তাঁর দিল এবং সিটিজেনশিপ দু'টোই এখন হিন্দুস্তানি।" নিজের রেজিস্ট্রেশন ডকুমেন্টের ছবিও সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করতে ভোলেননি তিনি। পাশাপাশি জানিয়েছেন, এ দেশই তাঁর কাছে সবকিছু। যে মান-সম্মান-খ্যাতি-ভালোবাসা তিনি পেয়েছেন তার জীবনে, তার সবটাই এখানে। আর সেই ভালোবাসা তিনি ফিরিয়ে দেওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন, তার জন্য তিনি কৃতজ্ঞ। বেশ দীর্ঘসময় ধরেই অক্ষয়কুমারের সঙ্গে বিতর্ক হাত ধরাধরি করে হেঁটেছে। আর সেই আলোচনার সিংহভাগেই ছিল অক্ষয়ের নাগরিকত্ব বিতর্ক। দেশের ৭৬তম স্বাধীনতা দিবসে অবশেষে সেই বিতর্কে ইতি পড়ল বলেই মনে করা হচ্ছে। সম্প্রতি মুক্তি পেয়েছে অক্ষয় কুমার অভিনীত 'ওএমজি টু'। ইতিমধ্যেই বক্স অফিসে আলোর মুখ দেখেছে ছবিটি। এই স্বাধীনতা দিবস তাঁর জীবনে যে একের পর এক সৌভাগ্যের সিন্দুক নিয়ে হাজির হচ্ছে, তা মানতে দ্বিধা নেই।

More Articles