"আবার নিগ্রহ করতে এলেন স্যার!" ওমপ্রকাশকে নিয়ে কী অভিযোগ যাদবপুরের পড়ুয়াদের?
Om Prkaash Mishra Jadavpur University: ছাত্রছাত্রীদের অভিযোগ, ১ তারিখ ওমপ্রকাশ মিশ্র পড়ুয়াদের উপর অতর্কিতে হামলা করেছিলেন। একজন ছাত্রীকে ঘুঁষি মারেন।
মার্চ মাসের শুরুর দিনেই মর্মান্তিক এক দৃশ্য দেখেছিল পশ্চিমবাংলা। রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রীর গাড়ির তলায় পড়ে গিয়ে আহত হন এক পড়ুয়া। এই ঘটনা ঘিরে দিন কয়েক চরম উত্তাল থাকে বাংলা। ঘটনার পর ৯ দিন পেরিয়ে গিয়েছে, তবে যাদবপুর ক্যাম্পাসের উত্তাপ এখনও কমেনি। এক সপ্তাহেরও বেশি সময় পার করে ক্যাম্পাসে এসে আবারও বিক্ষোভের মুখে পড়লেন যাদবপুরের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক তথা তৃণমূল প্রভাবিত অধ্যাপক সংগঠন ওয়েবকুপার সদস্য ওমপ্রকাশ মিশ্র। তাঁর নিজস্ব বিভাগে ঢোকার মুখেই ওমপ্রকাশকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখান পড়ুয়ারা। এবার অভিযোগ আরও ভয়াবহ! পড়ুয়াদের দাবি, ১ মার্চ, ওই ঘটনার দিন দুই ছাত্রীর শ্লীলতাহানি করেছেন ওমপ্রকাশ মিশ্র।
ওমপ্রকাশ মিশ্র বিশ্ববিদ্যালয়ে এলেই যে আবারও বিশৃঙ্খলা হবে, তা আন্দাজ ছিল আগেই। সোমবার সকাল থেকেই তাই ক্যাম্পাসে কড়া পুলিশি নিরাপত্তা ছিল। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের চারপাশে সাদা পোশাকেও পুলিশ ছিল। এই নিয়ে ইতোমধ্যেই বিতর্ক শুরু হয়েছিল কারণ, ঘটনার দিনই শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু জানিয়েছিলেন তিনি শিক্ষাঙ্গনে পুলিশি নিরাপত্তা চান না। ঘটনার রেশ এখনও কাটেনি, অথচ ওমপ্রকাশ মিশ্রর বিশ্ববিদ্যালয়ে আসার দিনই ব্যাপক পুলিশি নিরাপত্তা চোখে পড়ল। এখানে উল্লেখ্য, অচলাবস্থা কাটানোর জন্য পড়ুয়ারা সোমবার দুপুর ১টার মধ্যে এগজিকিউটিভ কাউন্সিলের (ইসি) বৈঠক ডাকার দাবি জানিয়েছিলেন। নাহলে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন স্তব্ধ করে দেওয়ার হুঁশিয়ারিও দিয়েছিলেন। সময়ের আগেই সোমবার কর্তৃপক্ষ বৈঠক ডাকে।এই বৈঠকে ডাকা হয়েছিল পড়ুয়াদের দুই প্রতিনিধিকেও। তবে প্রশাসনিক তরফে এই বৈঠকে সহ-উপাচার্য অমিতাভ দত্ত, রেজিস্ট্রার কণিষ্ক সরকার, ডিন অফ স্টুডেন্টস রজত রায়-সহ বিভিন্ন বিভাগীয় প্রধানরা থাকলেও পড়ুয়াদের প্রতিনিধিরা আসেননি। জানা গিয়েছে, তাঁরা পরীক্ষা দেওয়ার পর বিকেলে বৈঠকে আসবেন।
আরও পড়ুন- ঠিক কী কী দাবি ছাত্রদের? অগ্নিগর্ভ যাদবপুরের নেপথ্যে পুঞ্জীভূত যেসব ক্ষোভ
ছাত্রছাত্রীদের অভিযোগ, ১ তারিখ ওমপ্রকাশ মিশ্র পড়ুয়াদের উপর অতর্কিতে হামলা করেছিলেন। একজন ছাত্রীকে ঘুঁষি মারেন। এসএফআই কর্মী, অভিনব বসু নাকি ওমপ্রকাশ মিশ্রের গাড়িতেই আহত হয়েছিলেন। পড়ুয়াদের দাবি, ছাত্রছাত্রীরা ব্রাত্য বসুর সঙ্গে কথা বলতে গেলে ওমপ্রকাশই তাঁদের বাধা দেন। তারপরেই তিনি ছাত্রদের ঠেলে বেরিয়ে যান। অভিযোগ অস্বীকার করে অধ্যাপক ওমপ্রকাশ মিশ্র বলেছিলেন, ‘‘আমি বর্ষীয়ান একজন অভিজ্ঞ অধ্যাপক। আমাকে ঘটনার দিন আটকানোর চেষ্টা করা হয়েছিল। কেন তাঁরা একজন অধ্যাপককে মারধর করেছিলেন, আটকানোর চেষ্টা করেছিলেন, তার জবাব ওঁদের দিতে হবে। আমাকে কালিমালিপ্ত করতে এই ধরনের ঘটনা ঘটানো হচ্ছে।’’
সোমবার, বিভাগে ঢোকার সময় পড়ুয়ারা প্ল্যাকার্ডে "আবার নিগ্রহ করতে এলেন স্যার" লিখে বিক্ষোভ দেখাচ্ছিলেন। তাঁদের বক্তব্য ছিল, বিভাগে ওমপ্রকাশকে তাঁরা ঢুকতে দেবেন না। ঢুকতে গেলে তাঁদের মেরে ঢুকতে হবে। অভিযোগ, এদিনও ছাত্রদের ঠেলে সরিয়েই তিনি ঢুকে যান। জানা গিয়েছে, ওমপ্রকাশ মিশ্র আগেই বিভাগের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে ভয়েস মেসেজ পাঠিয়ে জানান দিয়েছিলেন যে তিনি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে কখন আসবেন। তিনি ওই ভয়েস মেসেজে স্পষ্ট বলেন, “আগামিকাল ১২টার সময় আমি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে যাচ্ছি। এর আগে আমি উপাচার্য ভাস্কর গুপ্তকে জানিয়েছিলাম যে তিনি আমার অফিস রুমে আর বিভিন্ন দেওয়ালে আমার বিরুদ্ধে যা যা পোস্টার লেখা রয়েছে তা সরাবেন। আমাকে জানানো হয়েছে যে কাজটি সম্পন্ন হয়েছে। আমি তাঁকে এটাও বলেছিলাম যাতে আমি আমার অফিসে বিনা বাধায় যেতে পারি সেটাও তিনি সুনিশ্চিত করবেন। আমি জেনেছি যে এই বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় যথাচিত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। এই পরিপ্রেক্ষিতে আমি সবাইকে জানিয়ে দিতে চাই যে, আমার ছাত্রছাত্রীরা, আমার রিসার্চ স্কলাররা, সহকর্মীর আগামিকাল থেকে এতবছর যেভাবে দেখে এসেছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার উপস্থিতি আবার সেভাবেই সুনিশ্চিত করা হবে।’’