যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজা থেকে মুনাফা লুটছে মাইক্রোসফট, অ্যালফাবেট?
Gaza: প্রতিবেদনে আরও লেখা হয়, মাইক্রোসফট, অ্যালফাবেট ও অ্যামাজন ইজরায়েলকে তাদের ক্লাউড ও এআই-এর বিভিন্ন প্রযুক্তি ব্যবহারের সুযোগ করে দিচ্ছে।
প্যালেস্টাইনে নিযুক্ত জাতিসংঘের বিশেষ দূত ফ্রানচেসকা আলবানিজ একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছেন। প্রতিবেদনটিতে ইজরায়েলকে সহায়তা করা একাধিক সংস্থার নাম উঠে এসেছে। ইজরায়েলকে প্যালেস্টাইনের নাগরিকদের বাস্তুচ্যুত করতে এবং গাজার গণহত্যা চালাতে মদত দিচ্ছে সংস্থাগুলি, এমনটাই দাবি করা হয়েছে ওই প্রতিবেদনে। কী বলা হয়েছে প্রতিবেদনটিতে তা খোলসা হওয়া দরকার।
প্রতিবেদনটিতে ৪৮টি প্রতিষ্ঠানের নাম রয়েছে। তার মধ্যে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তি সংস্থা মাইক্রোসফট, অ্যালফাবেট ইনকরপোরেটেড (গুগলের মূল প্রতিষ্ঠান) ও অ্যামাজনের মতো সংস্থার নাম। তদন্ত পরিচালিত করতে এক হাজারেরও বেশি কর্পোরেট সংস্থার একটি তালিকা করা হয়েছিল।
তার মধ্যে প্রধান বিনিয়োগকারী সংস্থা হলো ব্রিটেনের ব্ল্যাকরক ও ভ্যানগার্ড। ব্ল্যাকরকের ইজরায়েলের সঙ্গে হাত মেলান যেসব সংস্থায় বিনিয়োগ করেছে তা হলো— পালানটিয়ার (৮.৬%), মাইক্রোসফট (৭.৮%), অ্যামাজন (৬.৬%), অ্যালফাবেট (৬.৬%), আইবিএম (৮.৬%), লকহিড মার্টিনে (৭.২%) ও ক্যাটারপিলার (৭.৫%)। ভ্যানগার্ড বিনিয়োগ করেছে— ক্যাটারপিলার (৯.৮%), শেভরন (৮.৯%), পালানটিয়ার (৯.১%), লকহিড মার্টিন (৯.২%) এবং ইজেরায়েলি অস্ত্র নির্মাতা প্রতিষ্ঠান এলবিট সিস্টেমস (২%)।
আরও পড়ুন-নতুন রাজনৈতিক দল গড়বেন এলন মাস্ক! কেন এই হুমকি ট্রাম্পকে?
প্রতিবেদনে ইজরায়েলের অবৈধ ভাবে প্যালেস্টাইনকে দখল করে রাখার বিষয়টিকে ‘ঔপনিবেশিক ভাবে বর্ণবাদী পুঁজিবাদ’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এতে বলা হয়, কর্পোরেট সংস্থাগুলি অবৈধভাবে দখল নিয়ে রাখা এলাকায় টানা মুনাফা করছে। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় ইজরায়েলের নির্বিচার হামলা শুরুর পর থেকে এই প্রবণতা দিন দিন বেড়েই চলেছে। বর্তমানে বিশ্বে অস্ত্রের সবচেয়ে বড় খদ্দের ইজরায়েল। ইজরায়েলের এফ-৩৫ যুদ্ধবিমানটির সঙ্গে ৮টি দেশের ১ হাজার ৬০০-রও বেশি সংস্থা যুক্ত রয়েছে। এর প্রধান হল যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক লকহিড মার্টিন সংস্থা। তবে যুদ্ধবিমানটির সরঞ্জাম বিভিন্ন দেশ থেকে আসে।
প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, ইজরায়েল দীর্ঘদিন প্যালেস্টাইন দখল করে রাখায় অস্ত্র প্রস্তুতকারক ও বড় প্রযুক্তি সংস্থাগুলি তাদের বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাতে পারছে এখানেই। এখানে যেমন অস্ত্রের চাহিদা রয়েছে, তেমনই নজরদারির ঘাটতিও রয়েছে। ফলে কোনো জবাবদিহি করতে হয় না। বিনিয়োগকারী ও সরকারি-বেসরকারি সংস্থাগুলি কোনো রকম বাধা বিপত্তি ছাড়াই লাভ করার সুযোগ পাচ্ছে। এই সংস্থাগুলি এখন আর শুধু ইজরায়েলের সঙ্গেই যুক্ত নয়, তারা এখন গণহত্যার অর্থনৈতিক কাঠামোরও অংশ বলে দাবি করা হয়েছে ওই প্রতিবেদনে।
প্রতিবেদনে আরও লেখা হয়, মাইক্রোসফট, অ্যালফাবেট ও অ্যামাজন ইজরায়েলকে তাদের ক্লাউড ও এআই-এর বিভিন্ন প্রযুক্তি ব্যবহারের সুযোগ করে দিচ্ছে। সংস্থাগুলি প্যালেস্তাইনদের বায়োমেট্রিক তথ্য সংগ্রহ, সংরক্ষণ করে সহায়তা করছে ইসরায়েলকে। এছাড়া ইতালির লিওনার্দো এসপিএ সংস্থাটি সামরিক ক্ষেত্রে সাহায্য করছে। এবং জাপানের এফএএনইউসি কর্পোরেশন অস্ত্র নির্মাণের জন্য রোবোটিক যন্ত্রপাতি সরবরাহ করে। অন্যদিকে, মার্কিন সফটওয়্যার সংস্থা আইবিএম ইজরায়েলের সামরিক ও গোয়েন্দা বাহিনীকে প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। আরও একটি ব্রিটেনের সফটওয়্যার সংস্থা পালানটির টেকনোলজিস যুদ্ধ শুরু থেকেই ইজরায়েলি সেনাবাহিনীকে প্রযুক্তিগত সহায়তা করে চলেছে। এই প্রতিষ্ঠান ‘উন্নত পুলিশি প্রযুক্তি’ সরবরাহ করেছে। এতে যুদ্ধের সময় এআই-এর সাহায্যে টার্গেট করে আক্রমণ করতে পারে ইজরায়েল। এখানে রয়েছে ‘লেভেন্ডার’, ‘গোসপেল’ ও ‘হোয়ার ইজ ড্যাডি’ নামের এআই সিস্টেম।
আরও পড়ুন-কেন ইরানের ১৪ জন বিজ্ঞানীকে টার্গেট করল ইজরায়েল?
তালিকায় ক্যাটারপিলার, রাডা ইলেকট্রনিক ইন্ডাস্ট্রিজ (লিওনার্দোর মালিকানাধীন), দক্ষিণ কোরিয়ার এইচডি হুন্দাই, সুইডেনের ভলভো সংস্থারও নাম রয়েছে। বাড়িঘর ভাঙচুর করতে এরা যন্ত্রপাতি সরবরাহ করে। এছাড়া ট্রেজারি বন্ড (রাষ্ট্রীয় ঋণপত্র) গাজার যুদ্ধে অপরিসীম অর্থ সাহায্য করেছে। বিশ্বের বৃহত্তম ব্যাংক, যেমন ফ্রান্সের বিএনপি পারিবাস ও মার্কিন যুক্তরাজ্যের বার্কলেস ইজরায়েলকে ঋণ-এ সুবিধা দিয়েছে।
এখানে বলে রাখা দরকার, ইজরায়েলের সামরিক ব্যয় ২০২৩-২৪ সালে ৬৫ শতাংশ বেড়ে গিয়ে হয়েছে ৪ হাজার ৬৫০ কোটি মার্কিন ডলার। দেখা যাচ্ছে, বিভিন্ন অস্ত্র, প্রযুক্তি সংস্থায় শেয়ারমূল্য বেড়েছে। তেল আবিব স্টক এক্সচেঞ্জ ১৭৯ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে গিয়েছে। বর্তমানে এই স্টটএক্সচেঞ্জের বাজারমূল্য ১৫ হাজার ৭৯০ কোটি মার্কিন ডলার।
উল্লেখ্য, সব প্রতিষ্ঠানেরই মানবাধিকার রক্ষার দায়িত্ব রয়েছে। তা না মানা হলে সংস্থার উচ্চপদস্থ ব্যক্তিদের আন্তর্জাতিক আদালতে যেতে হতে পারে। প্রতিবেদনটিতে সংস্থাগুলিকে বলা হয়েছে যেন তারা দ্রুত ইজরায়েলের অবৈধ কার্যক্রমে বিনিয়োগ করা বন্ধ করে দেয়। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ ইজরায়েলকে ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বরের মধ্যে দখলদারিত্ব তুলে নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। সংস্থাগুলি কি ইজরায়েলকে সহায়তা করা বন্ধ করবে? আর কত দিন চলবে এই নিসংসতা? সেই প্রশ্ন থাকছেই।