পাকিস্তানে ক্ষমতাকেন্দ্রে আসীম মুনির! অভূতপূর্ব ক্ষমতার উৎস কী?
Asim Munir: এখন থেকে সেনা, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী— সমস্ত বাহিনীর সরাসরি নিয়ন্ত্রণ এককভাবে থাকবে মুনিরের হাতে। আগে এই সমন্বয়ের দায়িত্ব ছিল Joint Chiefs of Staff Committee-র উপর।
পাকিস্তানের সেনাপ্রধান জেনারেল আসিম মুনিরকে ঘিরে গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই জোর জল্পনা শুরু হয়েছে রাজনীতি ও আন্তর্জাতিক মহলে। ইমরান খানের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ, বিরোধীদের দমন, প্রশাসনের উপর বাড়তি সেনা নিয়ন্ত্রণ করেছেন তিনি। প্রশ্ন হলো, কেন আসিম মুনির প্রায় ‘অ্যাকশন-প্রুফ’? কেন তাঁর বিরুদ্ধে কোনো জবাবদিহি বা আইনি প্রক্রিয়া কার্যত অসম্ভব হয়ে গেছে? এই প্রশ্নের উত্তর লুকিয়ে আছে পাকিস্তানের সর্বশেষ সংবিধান সংশোধনী—২৭তম সংশোধনীতে। এই সংশোধনী দেশটির ক্ষমতার গঠন পুরোপুরি বদলে দিয়েছে। দেখা যাক, কী বদল হলো এই সংশোধনীর ফলে?
২০২৫ সালের নভেম্বরে পাকিস্তান পার্লামেন্ট তড়িঘড়ি করে পাস করে 27th Constitutional Amendment। এই সংশোধনীর মধ্যেই লুকিয়ে আছে মুনিরকে দেওয়া অভূতপূর্ব ক্ষমতার সূত্র।
১. নতুন পদ: Chief of Defence Forces (CDF)
এখন থেকে সেনা, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী— সমস্ত বাহিনীর সরাসরি নিয়ন্ত্রণ এককভাবে থাকবে মুনিরের হাতে। আগে এই সমন্বয়ের দায়িত্ব ছিল Joint Chiefs of Staff Committee-র উপর। সেই পদ এখন অকার্যকর।
২. মুনির পেলেন ‘লাইফটাইম’ সুরক্ষা
এই আইনের সবচেয়ে শক্তিশালী অংশ— মুনির এখন আজীবন নিরাপত্তা পাবেন আইনি দায়বদ্ধতা থেকে। অর্থাৎ তাঁর বিরুদ্ধে সাধারণ আদালত, তদন্তকারী সংস্থা বা বিচারব্যবস্থা আর কার্যকরভাবে ব্যবস্থা নিতে পারে না।
আরও পড়ুন
ভারতের বিরুদ্ধে সাফল্যের পুরস্কার! কেন সেনাপ্রধান মুনিরের পদোন্নতি ঘটাল পাকিস্তান?
৩. ‘ফাইভ-স্টার’ জেনারেলের র্যাঙ্ক
পাকিস্তানের সামরিক কাঠামোয় এ এক নজিরবিহীন উন্নতি। এই র্যাঙ্ক নিশ্চিত করে—
তাঁর পদ শেষ হবে না, সরকার পরিবর্তন হলেও অবস্থান বদলাবে না এবং সবচেয়ে বড় কথা সেনাবাহিনীর অভ্যন্তরে তাঁকে চ্যালেঞ্জ করার অবকাশ নেই।
সহজভাবে বললে, আসিম মুনির এখন পাকিস্তানের সামরিক কাঠামোর শীর্ষে, এবং আইনগতভাবে প্রায় অপ্রতিরোধ্য। তিনি এমন ক্ষমতা পেয়েছেন যা আদালত, রাজনৈতিক দল, এমনকি সরকারের কোনো মন্ত্রীও তাঁর বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে পারবেন না। এর জন্যই বিশ্লেষকরা বলছেন, পাকিস্তানের ইতিহাসে এই প্রথমবার কোনো সেনা প্রধানকে এমন একচ্ছত্র ক্ষমতা আইনের মাধ্যমে দেওয়া হলো।
ইমরান খান প্রসঙ্গে কেন মুনির আলোচনায়?
ক্ষমতাচ্যুত প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বহুবার অভিযোগ করেছেন, সেনাবাহিনী, বিশেষ করে আসিম মুনির, তাঁর বিরুদ্ধে ‘রাজনৈতিক অভিযানে’ নেতৃত্ব দিচ্ছেন। ইমরান খানের গ্রেফতার হওয়া, তাঁর দলের উপর দমন-পীড়ন, আদালতের হস্তক্ষেপ সবকিছুর জন্যই তিনি সেনা নেতৃত্বকে দায়ী করেছেন।
আরও পড়ুন
যে ১১টি শর্তে পাকিস্তানকে ৮ হাজার কোটি টাকা ঋণ দিল আইএমএফ
প্রশ্ন উঠছে, মুনিরের ভূমিকা নিয়ে এত অভিযোগ উঠলেও, তাঁর বিরুদ্ধে কি তদন্ত হবে? উত্তর হলো, না। কারণ আইন এখন তাঁকে তা থেকে সম্পূর্ণ সুরক্ষা দিয়েছে। ঠিক এই কারণেই আন্তর্জাতিক মহল থেকে শুরু করে পাকিস্তানের নাগরিকসমাজ পর্যন্ত বলছে, এ এক ধরনের আইনি চাল, যার আড়ালে মুনিরকে কার্যত জবাবদিহি থেকে মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে।
২৭তম সংশোধনীর মাধ্যমে সেনাপ্রধান প্রথমবার সাংবিধানিকভাবে সবচেয়ে শক্তিশালী ব্যক্তি হয়ে উঠলেন। অনেক আইনজ্ঞ বলছেন, কাউকে আইনের ঊর্ধ্বে তোলা মানে বিচারব্যবস্থার ভারসাম্য নষ্ট হওয়া। নির্বাচিত সরকার পার্লামেন্টে থাকলেও আসল ক্ষমতার উৎস এখন সামরিক নেতৃত্ব। এতে সরকারের সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া আরও সীমিত হবে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। আজ মুনিরকে ক্ষমতা দেওয়া হয়েছ—আগামী দিনে কোনো মিলিটারি অফিসারকেও একই ক্ষমতা দেওয়া হতে পারে। এটি পাকিস্তানের রাজনৈতিক পথকে আরও অনিশ্চিত করে তুলেছে। আইন, প্রশাসন ও রাজনীতিকে পাশ কাটিয়ে এই যে নতুন ক্ষমতার কাঠামো তৈরি হয়েছে, এটি পাকিস্তানের ভবিষ্যৎ রাজনীতিকে কীভাবে বদলে দেবে, সেটাই এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন।

Whatsapp
