টয়লেট পেপার নয়, এক সময়ে ভুট্টাই ছিল মানুষের শৌচাগারের অন্যতম সঙ্গী
Before Toilet Paper: মার্কিনরা নাকি নিজেকে পরিষ্কার রাখার অন্যতর বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করত শুকনো ভুট্টার কাণ্ডকে।
বিদেশ বিভুঁইয়ে জলের বড়ই অভাব। তার উপর শীতের দেশ, যেসব জায়গায় বেশির ভাগ সময়েই তাপমাত্রা থাকে শূন্যের কাছেপিঠে, সেখানে জল থাকা, না-থাকা প্রায় সমান। কারণ জলের অপর নাম সেখানে জীবন কম, বরফ বেশি। ফলে জীবনের যাবতীয় ছোট এবং বড় 'সেরে আসা'র ক্ষেত্রে এক এবং একমাত্র সমাধান টিস্যু পেপার। কিন্তু এই টিস্যু পেপার তো সেদিনের ছোকরা। টিস্যু বা টয়লেট পেপারের আগে এবং বহুদিন আগে থেকেই তো বরফের দেশে মানুষ যাবতীয় শৌচকর্ম সেরে আসছে। নিশ্চয়ই এটা ভাবলে কৌতূহল হয়, সেসময় অর্থাৎ যে টিস্যু পেপার আবিষ্কারের আগে কীভাবে নিজেদের পরিষ্কার রাখতেন মানুষ!
আরও পড়ুন: যৌনতার খেলনা নয়, উন্মাদনার চিকিৎসায় ব্যবহৃত হতো ‘রেক্টাল ডাইলেটর’?
বর্তমান সময়ে টয়লেট পেপার বা টিস্যু ছাড়া শৌচাগার ব্যবহারের কথা ভাবতেও পারবে না পশ্চিমের দেশগুলি। তবে উনিশ শতকের আগে টয়লেট পেপারের এই রমরমা ছিল না। বরং টয়লেট পেপারের বিকল্প হিসেবে নানা ধরনের জিনিসপত্র ব্যবহার করত তখনকার মানুষ। গাছের পাতা, শ্যাওলা, পাথর থেকে শুরু করে কী ছিল না সেই তালিকায়। তবে মার্কিনদের হাতে একটা সময় ছিল আরও চমকপ্রদ একটা বিকল্প, যা শুনে চোখ কপালে উঠতে পারে অনেকেরই।

ভুট্টা শুধু ভারতবর্ষেরই নয়, গোটা বিশ্বেরই একটি জনপ্রিয়তম খাবার। কতরকম ভাবে যে খাওয়া যায় এই ভুট্টার দানা বা কর্নকে, তার হিসেব নেই। সব্জি হিসেবে বেবি কর্ন, ভুট্টোর দানা সিদ্ধ করে খাওয়ার প্রথা রয়েছে বহু জায়গাতেই। পপকর্ন থেকে শুরু করে রাস্তার পাশের ঠেলা থেকে পোড়া ভুট্টা খাওয়ার মজাই আলাদা। এমনকী কর্ন স্টার্চ থেকে শুরু করে ভুট্টার অনেক অংশই মানুষের পেটে যায়। তবে এর বাইরেও মানবজীবনে ভুট্টার এক বিরাট ভূমিকা ছিল উনিশ শতকের আগের পৃথিবীতে। মার্কিনরা নাকি নিজেকে পরিষ্কার রাখার অন্যতর বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করত শুকনো ভুট্টার কাণ্ডকে। হ্যাঁ, শুনতে ব্যাপারটা অবিশ্বাস্য মনে হলেও সত্যিই এমন কাজ করতেন আমেরিকানরা।

কিন্তু এত কিছু থাকতে ভুট্টার কাণ্ডই বা কেন! তার সবচেয়ে স্পষ্ট উত্তর সম্ভবত ভুট্টার সহজলভ্যতা। উত্তর আমেরিকা ও তার সংলগ্ন এলাকায় সবচেয়ে বেশি পরিমাণে উৎপাদিত হয় এই ভুট্টা ফসলটি। আর ভুট্টা হল সেসব গাছেদের একটি, যার কোনও অংশ ফেলা যায় না। স্বাভাবিক ভাবেই এই ফসলটিকে নিজেদের জীবনের সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে নিয়েছিল আমেরিকানরা। রান্নাবান্নায় ব্যবহারের পরে বেচে যাওয়া ওই শুষ্ক কাণ্ডটি পড়ে থাকত অনাদরে। কিন্তু এই 'জুগাড়' শব্দটি বোধহয় জন্মলগ্ন থেকেই মানুষের শিকড়ে অর্বুদের মতো লেগে রয়েছে। তাই ভুট্টার ওই বাতিল কাণ্ডকেও বুদ্ধি করে কাজে লাগিয়ে ফেলল মানুষ। ভুট্টার কাণ্ডের মতো এমন যথাযথ, পরিবেশ বান্ধব এবং সবচেয়ে বড় ব্যাপার বিনামূল্যের টয়লেট পেপারের বিকল্প আর কী-ই বা পেত তাঁরা। তাছাড়া ভুট্টার কাণ্ডের আকার ও গঠন এমনই, যে তা হাতে ধরতেও সহজ, এবং নিজেকে পরিষ্কার করার ক্ষেত্রেও একেবারে যথাযথ। এরপর সেগুলিকে পুড়িয়ে বা পচিয়ে ফেলেলই ল্যাঠা চুকে গেল। ফলে সে সময় টয়লেট পেপারের বিকল্প হিসেবে দারুণ জনপ্রিয় হয়ে উঠল এই শুষ্ক ভুট্টার কাণ্ড।
আরও পড়ুন:যৌনতার সঙ্গে নিবিড় যোগ! জানেন, কেন তৈরি হয়েছিল স্টিলেটো?
দীর্ঘ দিন পর্যন্ত এই ভুট্টার কাণ্ডের ভরসায় প্রতিদিনের শৌচকর্ম সেরেছেন আমেরিকার মানুষেরা। পরে সভ্যতার আশীর্বাদের মতোই আবিষ্কার হল টয়লেট পেপার, যা পৃথিবীর সাড়া জাগানো আবিষ্কারগুলির মধ্যে অন্যতম। মানুষের শৌচালয় ব্যবহারের ব্যকরণকেই পুরোপুরি বদলে দিল এই একটি আবিষ্কার। শুধু শারীরিকই নয়, মানসিক সুস্থতার পক্ষেও এক দুর্দান্ত কাজের জিনিস হয়ে উঠল এই টয়লেট পেপার, যা ক্রমে পাশ্চাত্য থেকে ছড়িয়ে পড়ে প্রাচ্যেও। এবং ফের বেকার হয়ে পড়ে ভুট্টার কাণ্ডেরা। যদিও পশুখাদ্য এবং জ্বালানি হিসেবে আজও বিভিন্ন জায়গায় ব্যবহৃত হয় এই ভুট্টাকাণ্ড। তবে টয়লেট পেপারের বিকল্প হয়ে ওঠার প্রয়োজন হয় না তার আর আধুনিক বিশ্বে।

Whatsapp
