এক নম্বর ধনকুবের এলন মাস্ককে টেনে নামিয়েছেন ইনি, এই ফরাসি ব্যবসায়ীকে চেনেন?
World's Richest man : ৭৩ বছর বয়সী এই ধন কুবের বরাবরই বিশ্বের ধনীতম ব্যক্তিদের তালিকায় প্রথম দিকে থাকেন। এমনকী দ্বিতীয় ধনীতম ব্যক্তিও হয়েছিলেন তিনি।
বিপুল কর্মী ছাঁটাই হোক কিংবা টাকা দিয়ে ভেরিফিকেশনের নীল টিক কেনা – টুইটার (Twitter) এবং এলন মাস্ক (Elon Musk) এখন শিরোনামে। প্রায় প্রতিদিনই কোনও না কোনও বিষয়ে ট্রেন্ডিং তালিকায় থাকছেন বিশ্বের এই ধনকুবের। তাঁর একের পর এক সিদ্ধান্তের যেতে দানা বাঁধছে বিতর্কও। কিন্তু এলন মাস্ক আছেন বিন্দাস মেজাজে। বিশ্বের সবথেকে ধনী ব্যক্তি বলে কথা!
তবে তাঁর মাথা থেকে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তির ‘তাজ’ এখন সরে গিয়েছে। তাঁর জায়গায় সেই সিংহাসনে হাজির হয়েছেন বার্নার্ড আর্নল্ট। ৭৩ বছর বয়সী এই ধন কুবের বরাবরই বিশ্বের ধনীতম ব্যক্তিদের তালিকায় প্রথম দিকে থাকেন। এমনকী দ্বিতীয় ধনীতম ব্যক্তিও হয়েছিলেন তিনি। কিন্তু এবার একেবারে শীর্ষস্থানে। বৃহস্পতিবার ফোর্বসের ‘রিয়েল টাইম বিলিওনেয়ার’-এর তালিকায় টুইটারের বর্তমান কর্ণধারকে সরিয়ে এক নম্বর স্থানে উঠে আসেন বার্নার্ড আর্নল্ট।
কে এই বার্নার্ড আর্নল্ট? সাধারণ মানুষদের কাছে এই নামটি কম পরিচিত হলেও, আন্তর্জাতিক ব্যবসায়ী মহলে ইনি রীতিমতো সেলেব্রিটি। বিলাসবহুল পণ্য, প্রসাধনী সামগ্রী যেমন ফ্যাশন অ্যাকসেসরিজ, জুয়েলারি, অ্যালকোহল ইত্যাদির বেতাজ বাদশা মনে করা হয় বার্নার্ড আর্নল্টকে। তাঁর কোম্পানি এলভিএমএইচের বেশকিছু ব্র্যান্ড গোটা পৃথিবীতেই নিজেদের জনপ্রিয়তা অটুট রেখেছে। লুই ভিতোঁ, ডম পেরিগনন, ক্রিশ্চিয়ান ডিওর, ট্যাগ হিউরের মতো অজস্র ব্র্যান্ড নিয়ে বার্নার্ডের বিশ্বজোড়া সাম্রাজ্য। এই মুহূর্তে তিনি ইউরোপের ধনীতম ব্যক্তিও। আজ থেকে নয়, বহু বছর ধরে তাঁর সংস্থার প্রসাধনী সামগ্রী গোটা বিশ্বে এক অন্যহ জায়গা ধরে রেখেছে।
১৯৪৯ সালের ৫ মার্চ ফ্রান্সের রুবইক্সে জন্মগ্রহণ করেন বার্নার্ড আর্নল্ট। তাঁর পরিবারও ছিল শিল্পপতি, ব্যবসায়ীদের। তাঁর বাবা জঁ আর্নল্টের একটি সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের কোম্পানি ছিল। ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করার পর বার্নার্ডও বাবার সঙ্গে সেখানে যোগ দেন। ১৯৭১ সালে সংস্থার রাশ হাতে নিয়ে তড়িঘড়ি ব্র্যান্ডের নাম বদলে ফেলেন। নতুন নাম হয় ফেরিনেল ইনকর্পোরেট। তখন থেকেই একটু একটু করে ইঞ্জিনিয়ারিং ছেড়ে ব্যবসার দিকে মন দিতে শুরু করেন।
এরপর ধীরে ধীরে বিভিন্ন কোম্পানি কিনতে শুরু করেন বার্নার্ড আর্নল্ট। ১৯৮৪ সালে আগাশে-উইলট-বুসাক নামে একটি কোম্পানি কিনে নেন। সেই সময় সংস্থাটির অবস্থা খুব একটা ভালো ছিল না। অথচ এরাই ফ্যাশন হাউজ ক্রিশ্চিয়ান ডিওর ও ডিপার্টমেন্টাল স্টোর বন মার্সের মতো ব্র্যান্ডের মালিক ছিল। বার্নার্ড আর্নল্ট অধিগ্রহণ করে প্রথম দু’বছরে ৭০০০ কর্মীকে ছাঁটাই করেন। অনেকটা এলন মাস্কের মতোই পদক্ষেপ, তাই না? ক্রিশ্চিয়ান ডিওর আর বন মার্স বাদ দিয়ে কোম্পানির বাকি সম্পত্তি স্রেফ বেচে দেয়। ফ্রান্সের বাজারে অনেকেই ‘হায় হায়’ রব তোলেন। তবে বার্নার্ড আর্নল্ট যে ভুল ছিলেন না, প্রমাণ পাওয়া যায় তিন বছর পর, ১৯৮৭ সালে। ফের ঘুরে দাঁড়ায় বুসাক, ১১২ মিলিয়ন ডলার উপার্জনও করে এবং নিজের সাম্রাজ্য বিস্তারের দিকে আরও একধাপ এগিয়ে যান বার্নার্ড আর্নল্ট।
ফরাসি মহলে জনপ্রিয়, শিল্পবোদ্ধা বার্নার্ড আর্নল্টের আর্ট কালেকশনও যথেষ্ট মূল্যবান। পিকাসো, হেনরি মুরের মতো বিশ্ববিস্খ্যাত চিত্রশিল্পীদের আঁকা ছবি তাঁর সংগ্রহে। এতদিন ইউরোপের ধনীতম ব্যক্তির স্থানটি সযত্নে অধিকার করে রেখেছিলেন। এলন মাস্কের কোম্পানি টেসলার শেয়ার দর পড়তে শুরু করায় প্রমাদ গোনেন তিনি। পাশাপাশি টুইটার নিয়ে প্রায় প্রতিদিনই বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকেন মাস্ক। কর্মী ছাঁটাই, ইউরোপীয় ইউনিয়নের হুঁশিয়ারি, বিতর্কের জোয়ার যেন লেগেই ছিল। সেই সুযোগেই সোজা ছক্কা হাঁকালেন বার্নার্ড আর্নল্ট। ফরাসি অভিজাত সাম্রাজ্যের অধীশ্বর এখন বিশ্বের শীর্ষস্থানেও।