বিহারের মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী তেজস্বী যাদবের সমস্যা, সংকট, সম্ভাবনা
Tejashwi Yadav: তবে, লালু প্রসাদ যাদবের বিরুদ্ধে আইআরসিটিসি হোটেল কেলেঙ্কারি মামলার অভিযোগ তেজস্বীর বিরুদ্ধে রাজনৈতিক হাতিয়ার হতে পারে।
বিহারের আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে তেজস্বী যাদবের নেতৃত্বাধীন মহাগঠবন্ধন (INDIA) রাজনৈতিক মহলে নতুন দিশা দেখাচ্ছে।মহাগঠবন্ধন আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করেছে, তেজস্বী যাদবই তাঁদের মুখ্যমন্ত্রী প্রার্থী। মহাগঠবন্ধনের এই ঘোষণা যেন বিহারে প্রজন্ম বদলের ইঙ্গিত। লালু প্রসাদ যাদবের পুত্র তেজস্বী, বয়স মাত্র ৩৫। তবে রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা ও নেতৃত্বের গুণে তিনি ইতোমধ্যেই বিহারের তরুণ প্রজন্মের মধ্যে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন।
তেজস্বী যাদব রাগহোপুর কেন্দ্র থেকে নির্বাচন লড়ছেন। এই কেন্দ্র লালু পরিবারের শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। ২০০০ সাল থেকে এই কেন্দ্রের প্রায় সব নির্বাচনে লালু পরিবারের প্রার্থী জয়ী হয়েছেন, একমাত্র ২০১০ সালে জেডিইউ প্রার্থী সতীশ কুমার রাবরি দেবীকে পরাজিত করেছিলেন।
তবে, লালু প্রসাদ যাদবের বিরুদ্ধে আইআরসিটিসি হোটেল কেলেঙ্কারি মামলার অভিযোগ তেজস্বীর বিরুদ্ধে রাজনৈতিক হাতিয়ার হতে পারে। তাছাড়া মহাগঠবন্ধনের মধ্যে মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী নিয়ে বিতর্কও বিরোধীদের আক্রমণের সুযোগ তৈরি করছে। এসব পরিস্থিতিতে তেজস্বীকে শুধু ভোটারদের মন জয় করলেই হবে না, বরং নিজের রাজনৈতিক ভাবমূর্তি এবং পরিবারের সমর্থনও ধরে রাখতে হবে।
আরও পড়ুন
কেন নির্বাচনে প্রার্থী হতে চান না প্রশান্ত কিশোর?
তেজস্বী যাদব বিহারের যুবসমাজ ও নারীদের জন্য বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তিনি 'জীবিকা দিদি'দের জন্য স্থায়ী সরকারি চাকরি, মাসিক বেতন ৩০,০০০ টাকা এবং ২০২৭ সাল পর্যন্ত সুদমুক্ত ঋণ প্রদানের ঘোষণা করেছেন। এছাড়া, প্রতিটি পরিবারে একজনকে সরকারি চাকরি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এই প্রতিশ্রুতিগুলো তাঁকে সাধারণ মানুষের মধ্যে জনপ্রিয় করে তুলেছে।
তাছাড়া, তেজস্বী যাদব রাহুল গান্ধীর সঙ্গে মিলিত হয়ে 'ভোটার অধিকার যাত্রা' করেন। এই যাত্রার মূল উদ্দেশ্য ছিল ভোটারদের সচেতন করা এবং নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় তাদের অধিকার সম্পর্কে জানানো। তেজস্বী রাহুলের সঙ্গে বিজেপির বিরুদ্ধে ভোট চুরির অভিযোগ তুলেছেন, যাতে জনমত একত্রিত করে বিরোধী শক্তিকে শক্তিশালীভাবে চ্যালেঞ্জ করা যায়। ওয়াকিবহাল মহল বলছে, এতে তিনি যুব ভোটার ও সাধারণ মানুষকে অনেকটাই নিজের দিকে আনতে পেরেছেন। তাঁর দাবি, ভোটের আগে জনমত গড়া এবং সামাজিক সচেতনতা তৈরি করাই তাঁর মূল লক্ষ্য।
আরও পড়ুন
বিহারের রাজনীতিতে প্রশান্ত কিশোর! নির্বাচনের সমস্ত সমীকরণ তছনছ করে দেবেন?
তেজস্বী যাদবের জন্য মুসলিম ও যাদব ভোটারদের সমর্থন গুরুত্বপূর্ণ, তবে শুধুমাত্র এই দুই গোষ্ঠীর উপর নির্ভর করলেই হবে না। ২০২০ সালের নির্বাচনে এই ভোটব্যাংকের উপর নির্ভর করে থাকা সত্ত্বেও দুই মুসলিম প্রার্থী পরাজিত হন, তাই এখন সমর্থনের স্থায়িত্ব নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। এখন তেজস্বী পিছিয়ে পড়া শ্রেণি (EBC), দলিত এবং অন্যান্য ওবিসি গোষ্ঠীর সমর্থন পেতে নানা পদক্ষেপ নিচ্ছেন। বিহারের সবচেয়ে বড় সামাজিক গোষ্ঠী হলো EBC, যাদের ভোট প্রায় ৩৬%। তেজস্বী এখন আরজেডিকে শুধুমাত্র মুসলিম-যাদব এর উপর ভরসা না করে পিছিয়ে পড়া ও দলিতদের সমর্থন পাওয়ারও চেষ্টা করছেন। এই কৌশল সফল হলে তাঁর জয়ের সম্ভাবনা আরও বাড়বে।
বিহারের মানুষ চাইছেন চাকরি, উন্নয়ন এবং নির্ভরযোগ্য সরকার। তেজস্বী যাদবের প্রতিশ্রুতিগুলো যদি বাস্তবায়িত হয়, তবে বিহারের জনগণের প্রত্যাশা পূরণ হতে পারে। তবে, বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজন সঠিক পরিকল্পনা ও কার্যকরী পদক্ষেপ। তেজস্বী যাদবের নেতৃত্বে মহাগঠবন্ধন যদি এই চ্যালেঞ্জগুলো সফলভাবে মোকাবিলা করতে পারে, তবে বিহারে রাজনীতিতে পরিবর্তন আসতে পারে বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকদের একাংশ।

Whatsapp
