অনৈতিক মন্ত্রীদের সরাতে বিল! বিজেপির এই নেতারা নৈতিকতার পথে হেঁটেছেন?
Trigger chaos in Lok Sabha: একজন জনপ্রতিনিধির বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠা যে ঠিক কতটা লজ্জাজনক, তা একটি শিশুও জানে। তবুও একের পর এক ঘটনা ঘটলেও সাংসদ, বিধায়কদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করা হয়নি।
২০ অগাস্ট কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ সংসদে পেশ করলেন সংবিধান সংশোধনী বিল। সেই কাগজই ছিঁড়ে শাহের দিকে ছোড়েন বিরোধীরা। উত্তাল হয় অধিবেশনকক্ষ। সত্যি কি নৈতিক মূল্যবোধ ফেরাতেই এই বিল আনা হচ্ছে?
এই বিল অনুসারে, প্রধানমন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রী বা মন্ত্রীরা ৩০ দিনের বেশি বিচারবিভাগীয় হেফাজতে থাকলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে তাঁদের পদ থেকে সরে যেতে হবে। এমনকি দোষী সাব্যস্ত না হলেও, যদি অপরাধের শাস্তি পাঁচ বছর বা তার বেশি হওয়ার সম্ভাবনা হয়, তবে গদি থেকে সরতে হবে। সরকারের যুক্তি, এই বিল রাজনীতির জগতকে অপরাধমুক্ত করার পদক্ষেপ হিসেবে উপস্থাপন করছে। নৈতিকতার উদ্দেশ্যেই এই বিল আনা। সত্যিই কি নৈতিকতার জন্যই এই বিল?
বিরোধীদের দাবি, এই বিল 'অগণতান্ত্রিক' ও 'সংবিধানবিরোধী'। বিরোধীরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, এই বিল বিরোধী শাসিত রাজ্যের সরকারকে অস্থিতিশীল করতে নির্বাচনী পরাজয় ছাড়াই নেতাদের অপসারণ করতে ব্যাবহার করা হতে পারে।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন, "সংবিধানের মৌলিক কাঠামোকেই ধসিয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর হাতেই যাবতীয় ক্ষমতা তুলে দেওয়া হচ্ছে।’’ সংশোধনী বিল পেশ হওয়ার পরেই মমতা এক্স-পোস্ট করেন, ‘সুপার-ইমার্জেন্সির থেকেও বেশি কিছু যদি থাকে, তা হল এই বিল টেবিল করা। এর অর্থ, চিরকালের মতো যুক্তরাষ্ট্রীয় পরিকাঠামো ও ভারতের গণতন্ত্র শেষ হয়ে যাওয়া।’
যদিও কংগ্রেস সাংসদ শশী থারুর বিলের মূল ধারণাকে সমর্থন করেছেন, বলেছেন, ৩০ দিন জেলে থাকা মন্ত্রীর পদে থাকা উচিত নয়, এবং এটি সংসদীয় কমিটিতে আলোচনার জন্য উপযুক্ত।
আরও পড়ুন- উপরাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী ঘোষণা এনডিএ-র! কেন রাধাকৃষ্ণণকে বাছল বিজেপি?
তবে বিলটির সাংবিধানিক বৈধতা নিয়ে ব্যাপক প্রশ্ন উঠছে। কারণ, বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী দীর্ঘ দিন ধরেই দাবি করছেন যে, শিল্পপতি আদানির নির্দেশে পরিচালিত হন প্রধানমন্ত্রী মোদি। মার্কিন আদালতে আদানিদের বিরুদ্ধে ‘প্রমাণ-সহ অভিযোগপত্র’ (ইনডিক্টমেন্ট) জমা পড়েছে আগেই। সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পের বরাত পাওয়ার বিনিময়ে ভারতের সরকারি আধিকারিকদের (মন্ত্রী এবং আমলা) ঘুষ দেওয়ার অভিযোগে গৌতম আদানি এবং তাঁর ভাইপো সাগর-সহ সাত জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে তাতে। ইডি কিন্তু কখনই আদানির বিরুদ্ধে তদন্ত করেনি বলে অভিযোগ উঠেছে বারবার।
আবার কেন্দ্রের রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণবের থেকে একাধিকবার ইস্তাফা চাওয়া হয়েছে। মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রীকেও বহুবার পদত্যাগ করার কথা বলা হয়েছে কিন্তু তবুও দু'বছর তিনিই ক্ষমতায় ছিলেন। ললিত মোদির দেশ ছেড়ে যাওয়া নিয়ে তৎকালীন বিদেশমন্ত্রী সুষমা সরাজের পদত্যাগের দাবি উঠেছিল। তখন বিজেপি নেতা রাজনাথ সিং পদত্যাগে বারণ করে বলেছিলেন- এটা এনডিএ সরকার ইউপিএ নয়, মন্ত্রীরা পদত্যাগ করবেন না।
নোটবন্দির সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধেও একাধিক অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও কখনও তদন্তই করা হয়নি।
গত লোকসভা ভোটের আগেও বিজেপির প্রাক্তন সাংসদ তথা কুস্তি ফেডারেশনের প্রাক্তন সভাপতি ব্রিজভূষণ সিং-এর বিরুদ্ধে যৌন নিগ্রহের অভিযোগ তুলে দিল্লির যন্তর মন্তর-এ প্রতিবাদ করেছিলেন কুস্তিগিরেরা। তাঁদের মধ্যে ছিলেন- সাক্ষী মালিক, বিনেশ ফোগট, বজরং পুনিয়ারা। বিজভূষণের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের কারণে তাঁকে কুস্তি সংস্থার দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। যদিও পরে ব্রিজভূষণেরই ঘনিষ্ঠ সঞ্জয় সিং দায়িত্ব পান। ব্রিজভূষণ শরণ সিং-কে কয়েক মাস আগে পকসো মামলা থেকেও রেহাই দিয়েছে আদালত।
আরও পড়ুন- কেন স্বাধীনতা দিবসের মঞ্চ আরএসএস প্রশস্তির জন্য বেছে নিলেন মোদি?
একজন জনপ্রতিনিধির বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠা যে ঠিক কতটা লজ্জাজনক, তা একটি শিশুও জানে। তবুও একের পর এক ঘটনা ঘটলেও সাংসদ, বিধায়কদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করা হয়নি। গুরুতর অভিযোগে অভিযুক্ত নেতানেত্রীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রশ্নে বহু সময়ই ক্ষমতাসীন দল উদাসীনতা দেখিয়েছে। প্রমাণ উন্নাও কাণ্ড। উন্নাওয়ের বিধায়ক কুলদীপ সিঙ্গারের বিরুদ্ধে অনেক আগেই ব্যবস্থা নেওয়া উচিত ছিল বিজেপি নেতৃত্বদের। কিন্তু এমনটা হয়নি। অভিযুক্ত বিধায়কের গতিবিধির উপর সতর্ক নজর রাখা হয়নি। ধর্ষণের অভিযোগকারী মেয়েটির বাবাকে পুলিসের হেফাজতেই মেরে ফেলা হয়েছিল। ওই বিধায়কের বিরুদ্ধে অনেক দেরিতে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল।
প্রশ্ন উঠছে, অতীতের এই অভিযোগগুলির তদন্ত করা হল না কেন? আজ যে বিজেপি নৈতিকতার পাঠ দিচ্ছে অতীতে ব্রীজভূষণ কুলদীপদের প্রশ্নে কেন মুখে কুলুপ এঁটেছিল? অন্যদিকে আবার সংবিধানের ১৩০তম সংশোধনী বিলে মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীরও নাম জোড়া হয়েছে। কিন্তু দেশবাসী কখনও কি সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে আইনি মামলা করবে? করলেও সেটা কি গ্রেফতারি অবধি যাবে? কেন এই লোক দেখানো? কী উদ্দেশ্য এর পেছনে?

Whatsapp
