রাহুল আর প্রিয়াঙ্কা গান্ধির সম্পর্ক আসলে কেমন? যা প্রমাণে মরিয়া বিজেপি...

Rahul Gandhi Priyanka Gandhi : মহাভারতের ট্র্যাডিশন মেনেই তেজস্বী যাদব আর তেজ প্রতাপের মধ্যে লড়াই হয়েছে, সুপ্রিয়া শুলে আর অজিত পাওয়ারের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা বিশাল।

সম্পর্কে ভাই বোন। বয়স গড়িয়েছে ঢের যমুনার জল! তবু ভাই বোনের মধ্যেকার যে নিশ্চিত টান, ক্ষয় হয়নি। প্রকাশ্যে হামেশাই ভাইবোনের ভালোবাসা ছলকে ওঠে। মঞ্চে বসেই বোনের গাল টিপে চুমু খান, বরফ ছুঁড়ে মারেন। মিছিলে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে হাঁটেন। ঘৃণার ভারতবর্ষে এমন ভালোবাসার দৃশ্য প্রকাশ্যে আসে না বেশি। রাহুল গান্ধি আর প্রিয়াঙ্কা গান্ধির সহজ সম্পর্ক ভাই বোন থেকে যোগ্য সৈনিক হয়ে ওঠার এক গল্প। সত্যিই কি তাই? যা দেখা যায় বাস্তবে, অন্য বাস্তবেও কি সেটাই সত্যি? এই প্রশ্ন উস্কে দিচ্ছে ভারতীয় জনতা পার্টি। বিজেপি রাহুল এবং প্রিয়াঙ্কার মধ্যে এই ভাই-বোনের সম্পর্ক আদৌ ঠিক আছে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে একটি ভিডিও প্রকাশ করেছে। বিজেপি খুব পরিকল্পনামাফিকই যে কাজটি করেছে তাতে সন্দেহ নেই। ইন্ডিয়া জোট সদ্য বৈঠক সেরেছে। ২০২৪ বেশি দেরি নেই। সারা দেশে কংগ্রেসই যে বিজেপির বিরুদ্ধে একমাত্র বড় দল এ নিয়েও সন্দেহ নেই। এই অবস্থায় মোক্ষম চালটি দিয়েছে বিজেপি। বিজেপির দাবি, প্রিয়াঙ্কাকে কংগ্রেস কেবল নির্বাচনের আগে আগেই ব্যবহার করে। ফলে প্রিয়াঙ্কা এবং রাহুলের মধ্যে এক তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা রয়েছে। কী রয়েছে ওই ভিডিওতে?

ভিডিওতে ভাইবোনের মধ্যেকার সেই ভালোবাসা খুনসুটির মুহূর্তগুলি ধরা আছে। এই নির্ভেজাল খুনসুটির মধ্যে কতখানি ভেজাল তা বের করাই ভিডিওটির মূল উদ্দেশ্য। ভাই ও বোনের সুস্থ সম্পর্কের সত্যতা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছে বিজেপির ভিডিওটি। ভিডিওর ক্যাপশনে বিজেপি লিখেছে, "রাহুল গান্ধি এবং প্রিয়াঙ্কা গান্ধির সম্পর্ক একজন সাধারণ ভাই-বোনের মতো নয়। প্রিয়াঙ্কা রাহুলের চেয়ে বেশি দ্রুত, কিন্তু দল রাহুলের সুরে নাচছে, এবং সনিয়া গান্ধিও তাতে সম্পূর্ণ যোগ দিয়েছেন! এই কারণেই প্রিয়াঙ্কাকে জোটের বৈঠকে দেখা যাচ্ছে না! বোনকে শুধুমাত্র নির্বাচনী প্রচারের জন্যই ব্যবহার করা হচ্ছে।”

আরও পড়ুন- বোনকে আদর, মোদিকে আলিঙ্গন! প্রকাশ্যে ভালোবেসেই তবে ভারতকে জুড়বেন রাহুল?

বিজেপির এক্ষেত্রে মূল বিষয়টি হচ্ছে ইন্ডিয়া জোটকে বিপাকে ফেলা। তাই ইন্ডিয়া জোটের বৈঠকে প্রিয়াঙ্কার অনুপস্থিতিকে প্রবলভাবে তুলে ধরা হচ্ছে আর তুলে ধরতে গিয়ে পরিবারের মধ্যে দ্বন্দ্ব উস্কে দেওয়াই মোক্ষম হাতিয়ার। বিজেপি প্রমাণ করতে চাইছে, রাহুল প্রিয়াঙ্কা ঠিক ততটা ঘনিষ্ঠ ভাই বোন নন, ভেতরে ভেতরে চরম রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী। রাখিবন্ধনের দিনেও রাহুল নাকি হাতে রাখি পরেননি!

 

ভিডিওতে বিজেপি বলছে, হিমাচল প্রদেশ এবং কর্ণাটকে প্রিয়াঙ্কা গান্ধি বঢরা ২৮ টিরও বেশি সমাবেশ করেছেন এবং দলের জয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। কিন্তু রাহুল গান্ধি ৩৯ টি নির্বাচনে দলের পরাজয় নিশ্চিত করেছিলেন। তবুও রাহুলকেই সমস্ত কৃতিত্ব দেওয়া হয়। প্রিয়াঙ্কাকে বারাণসীর মতো আসনে লড়তে বলা হয় যেখানে নরেন্দ্র মোদির বিরুদ্ধে তিনি কখনই জিততে পারবেন না। আমেথিতে স্মৃতি ইরানির বিরুদ্ধে রাহুল জিততে পারবেন না জেনেই তাঁকে ওয়ানাড়ের আসন দেওয়া হয়। অথচ প্রিয়াঙ্কার বেলায় লবডঙ্কা! রাহুল গৃহ লক্ষ্মী প্রকল্পও চালু করেছিলেন। এই কারণেই সম্ভবত প্রিয়াঙ্কা গান্ধি কর্ণাটক জয়ের পরে প্রকাশ্য মঞ্চে নিজেকে রাহুলের থেকে দূরে সরিয়ে নিয়েছিলেন।

আরও পড়ুন- রাহুল অতীত? এবার দেশে কংগ্রেসের মুখ কি প্রিয়াঙ্কা গান্ধিই?

কংগ্রেস এই দাবি নস্যাৎ করে দিয়েছে। শিবসেনার উদ্বব ঠাকরে শিবিরের নেতা প্রিয়াঙ্কা চতুর্বেদী বলছেন, বিজেপির টুইট করা এই ভিডিওটির ভাষা এবং বিষয়বস্তু স্পষ্ট বুঝিয়ে দিচ্ছে, ক্ষমতায় থাকার জন্য মরিয়া বিজেপি। ইন্ডিয়ার উত্থানে সামান্য 'হতাশ' তারা। তাই যেনতেন প্রকারেণ বিজেপি কংগ্রেসের অন্দরে চিড় ধরাতে চাইছে। দেশের সাধারণ মানুষের মনে বিষ ঢালতে চাইছে। তাই ভাইবোনের সম্পর্ককে এভাবে ব্যাখ্যা করছে গেরুয়া শিবির, দাবি কংগ্রেসের।

বিজেপিকে ভুল প্রমাণে উঠে পড়ে লেগেছে কংগ্রেস। রাখিবন্ধনের দিন রাহুল কর্ণাটকে গৃহলক্ষ্মী যোজনা চালু করতে গিয়েছিলেন। এই প্রকল্পে পরিবারের প্রধান নারীদের প্রতি মাসে ২,০০০ টাকা দেওয়া হবে। প্রিয়াঙ্কা রাহুলকে রাখি পরাননি বলে বিজেপি দাবি করার পরেই কংগ্রেস গৃহলক্ষ্মী যোজনার ঘোষণার দিনের একটি ভিডিও শেয়ার করেছে যেখানে দেখা যাচ্ছে রাহুলের হাতে একটি রাখি। পরিবার রাজনীতির বড় কেন্দ্র। একই পরিবারের ভাই-ভাইয়ের যুদ্ধ তো আজকের নয়। মহাভারতের ট্র্যাডিশন মেনেই তেজস্বী যাদব আর তেজ প্রতাপের মধ্যে লড়াই হয়েছে, সুপ্রিয়া শুলে আর অজিত পাওয়ারের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা বিশাল। সেই পথেই প্রিয়াঙ্কা আর রাহুলকে তুলে ধরতে চাইছে বিজেপি। প্রশ্নের ছায়াতে রয়েছে সন্দেহ। একবার যদি সন্দেহ যোগ্য নিশানায় বিঁধতে পারে, বিজেপির ইন্ডিয়া আশঙ্কা অনেকটাই লঘু হয়ে যাবে।

More Articles