যাদবপুরে ছাত্র ভোটের দাবিতেই সংঘর্ষ! কী বলছে পক্ষ ও বিপক্ষ?

Chaos in Jadavpur University during WBCUPA conference : প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ে ওয়েবকুপার সদস্যদের সঙ্গে ধস্তাধস্তি হয় এসএফআই, আইসা, ডিএসএফের সদস্যদের। ধস্তাধস্তিতে এক পড়ুয়ার মাথাও ফেটেছে।

হোক কলরব তো বটেই, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ নিয়ে এ শহর বাবুল সুপ্রিয়কে ঘিরে ছাত্রবিক্ষোভ ভোলেনি। সেসব স্মৃতিই টাটকা হয়ে গেল শনিবার বারবেলায়, শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর ক্যাম্পাসে প্রবেশকে কেন্দ্র করে সৃষ্টি হওয়া নৈরাজ্যে।

ঠিক কী ঘটেছিল?

ওয়েবকুপার সম্মেলন উপলক্ষ্যে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে যান শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু, বিক্ষোভ এড়াতে তিনি ঢুকেছিলেন অন্য গেট দিয়ে। কিন্তু সভা শুরু হতেই চরম বিশৃঙ্খলার পরিবেশ তৈরি হয়। শিক্ষামন্ত্রীকে ঘিরে প্রবল বিক্ষোভ দেখানো হয়। অভিযোগ, ব্রাত্যর কনভয়ে থাকা একটি গাড়ির চাকার হওয়া বার করে দেওয়া হয়। কনভয় লক্ষ্য করে ইটবৃষ্টি হয়। হেনস্থার জেরে তিনি আহত হয়েছেন। চিকিৎসার জন্য এসএসকেএম হাসপাতালে নিয়ে যেতে হয়েছে তড়িঘড়ি। যদিও সন্ধের দিকে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়। অন্যদিকে বামপন্থী ছাত্র সংগঠনের অভিযোগ, শিক্ষামন্ত্রীর গাড়ির ধাক্কায় এক ছাত্র গুরুতর আহত হয়েছেন। ধাক্কাধাক্কিতে আহত উভয় পক্ষেরই বেশ কয়েকজন।

তৃণমূলপন্থী অধ্যাপকদের সংগঠন ওয়েবকুপার বার্ষিক সম্মেলনের জন্য বেছে নেওয়া হয়েছিল যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপেন এয়ার থিয়েটার। এর ঠিক বাইরে বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রভোটের দাবিতে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন বাম ও অতি বাম ছাত্র সংগঠনের সদস্যরা। বিশ্ববিদ্যালয় প্রবেশের ফটক আটকে স্লোগানও দেওয়া চলছিল। ঝামেলা এড়াতে ৩ নম্বর গেট দিয়ে ঢোকেন শিক্ষামন্ত্রী। 'গো ব্যাক' স্লোগান ওঠে সে সময়ে।

সভাস্থলে যখন ব্রাত্য বসু বক্তব্য রাখছেন, এসএফআই-এর কিছু সমর্থক সেখানে পৌঁছে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের দাবি জানাতে শুরু করেন। ভাষণ দেওয়াতেও বাধা দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। বিক্ষোভকারীরা শিক্ষামন্ত্রীর সাথে দেখা করার আবেদন জানালে শিক্ষামন্ত্রী সভা শেষে কয়েকজনের সঙ্গে আলোচনা করতে রাজি হন। কিন্তু জানা যায়, বাম সংগঠনের প্রায় ৪০জনের একটি প্রতিনিধি দল ব্রাত্য বসুর সঙ্গে দেখা করার দাবি জানান। শিক্ষামন্ত্রী জানান, প্রতিটি সংগঠনের দু'জন বেশি সদস্যের সঙ্গে দেখা করবেন না। এরপরেই বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গন রণক্ষেত্রর চেহারা নেয়।

অভিযোগ, সভা শেষে শিক্ষামন্ত্রীকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বেরোতে বাধা দেওয়া হয়। গাড়িতে ভাঙচুর চালানো হয়। গাড়ির কাচে ঘুষি মারা হয়। ভেঙে দেওয়া হয় লুকিং গ্লাস। গাড়ির সামনে কয়েকজন বিক্ষোভকারী শুয়ে পড়েন। তাদের সরিয়ে দেন তৃণমূলের শিক্ষাকর্মীরা। চলতে থাকে ধস্তাধস্তি।

আরও অভিযোগ, যাদবপুরের অধ্যাপক তথা ওয়েবকুপার সদস্য ওমপ্রকাশ মিশ্রকে লাঠি হাতে তাড়া করেছে বাম ও অতিবাম ছাত্র সংগঠনের সদস্যরা। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তারক্ষীরা তাঁকে সরিয়ে নিয়ে যান। বিক্ষোভকারী পড়ুয়াদের বিরুদ্ধে এও অভিযোগ উঠছে যে, এক মহিলা অধ্যাপকের শাড়ি ছেঁড়া হয়েছে। আহত হয়েছেন আরও দুই অধ্যাপক।

বামপন্থী ছাত্র সংগঠন এসএফআই অভিযোগ করছে, বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রভোটের দাবি জানাতে গিয়ে আক্রান্ত হয়েছেন দলের কয়েকজন সদস্য। প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ে ওয়েবকুপার সদস্যদের সঙ্গে ধস্তাধস্তি হয় এসএফআই, আইসা, ডিএসএফের সদস্যদের। ধস্তাধস্তিতে এক পড়ুয়ার মাথাও ফেটেছে। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সংগঠন জুটার তরফে জানানো হয়েছে, মন্ত্রীর উপস্থিতিতে 'একদল গুন্ডা' শিক্ষার্থীদের উপর হামলা চালিয়েছে। এক ছাত্র শিক্ষামন্ত্রীর গাড়ির ধাক্কায় আহত হয়েছে বলেও অভিযোগ। তাঁদের তরফে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে পদক্ষেপ নেওয়ার আবেদন জানানো হয়েছে। গাড়ির ধাক্কায় আহত আহত পড়ুয়া বর্তমানে হাসপাতালে ভর্তি।

ব্রাত্য বসু জানান, গাড়িতে ইট ছোড়া এবং হেনস্থার জেরে তিনি আহত হয়েছেন। চিকিৎসার জন্য এসএসকেএম হাসপাতালে যেতে হয়েছে। সেখানে তাঁর প্রাথমিক চিকিৎসার পর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বেরোনোর আগে তিনি বলেন, 'এই গুন্ডামি চলতে পারে না। পড়ুয়াদের চারজন প্রতিনিধির সাথে কথা বলতে পারি। কিন্তু সবাই মিলে গুন্ডামি করলে মুশকিল। তবে আমি কোন প্ররোচনায় পা দেব না। যাঁরা এগুলি করেছেন তাঁদের বিরুদ্ধে উপাচার্য পদক্ষেপ নেবেন।' তিনি আরও বলেন, 'এটা যদি উত্তরপ্রদেশ হত কোন ছাত্র সংগঠন এই কাজ করতে পারত? আজকের যে ঘটনা, আমরা চাইলেই পুলিশ ডাকতে পারতাম। কিন্তু আমি বারণ করেছি। শিক্ষাঙ্গনে যেন একজনও পুলিশ না প্রবেশ করে।' তাঁর কোথায়, 'যাঁরা আজ অধ্যাপকদের উপর আক্রমণ করেছেন তাঁরা শিক্ষাক্ষেত্রে গৈরিকীকরণের বিরুদ্ধে ক'টা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন? তাঁরা তৃণমূলের অধ্যাপকদের উপর আঘাত করতে চান, কিন্তু বিজেপির ব্যাপারে নিশ্চুপ থাকেন।'

এক্স বার্তায় মহম্মদ সেলিম বলেন, 'কৃষক-বিক্ষোভে বিজেপি নেতার গাড়ি চাপা দিয়ে কৃষক হত্যার ঘটনা মনে করিয়ে দিল আজ যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভরত ছাত্রদের ওপর টিএমসি মন্ত্রীর গাড়ি চালিয়ে দেওয়ার ঘৃণ্য ঘটনা।'

রাজ্যের মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের গলায় স্পষ্ট হুঙ্কার, 'যদি মনে হয় এক মিনিট সময় লাগবে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় দখল করতে।' তাঁর কথায়, 'যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় আজ গণতন্ত্র বলে কিছু নেই যারা শিক্ষামন্ত্রীর গায়ে হাত দেয় অধ্যাপকদের গায়ে হাত দেয় তাদের আমরা ছাত্র বলে মনে করি না আজ শুধু শিক্ষামন্ত্রীর গাড়ি ভাঙা হয়নি শিক্ষামন্ত্রীকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়। এরা নিজেদের কি করে ছাত্র বলে দাবি করে যারা গণতন্ত্রকে মানে না এটা তৃণমূলকে ভয় পায়।' শিক্ষামন্ত্রীর গাড়ির ধাক্কায় এক পড়ুয়া জখম হয়েছে বলে অভিযোগ। অরূপ বিশ্বাসের দাবি, 'ওসব বাজে কথা ওরা মিথ্যে কথা বলছে।' তিনি আরও বলেন, 'গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি। মাও-মাকুদের বলতে চাই অশান্ত কোরো না। আমাদের প্রতিবাদ চলছে চলবে। যাদবপুরে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করব। সেই প্রতিষ্ঠার লড়াই চলবে। আগুন নিয়ে খেলতে যাবেন না। মানুষই ওদের যাদবপুর ছাড়া করেছে।'

দুপুর থেকে সন্ধে পেরিয়ে গেলেও শনিবার উত্তেজনা কমেনি। বরং বিশ্ববিদ্যালয়ের গণ্ডি ছাড়িয়ে তা যাদবপুর থানার সামনে চলে আসে। এসএফআই-এর সদস্যরা সন্ধে থেকে ৮বি মোড়েও অবরোধ শুরু করেন। সোমবার তাঁরা রাজ্যের সমস্ত কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ধর্মঘটের ডাক দিয়েছেন। এসএফআই জানিয়েছে, শনিবারের এই ঘটনা ছাত্র-ছাত্রীদের ওপর বিজেপির কায়দায় গাড়ি চালিয়ে খুনের চেষ্টা, ক্যাম্পাসে ভয়ভীতির পরিবেশ তৈরি করার অপচেষ্টার বিরুদ্ধে তাদের এই বিক্ষোভ। শনিবার সন্ধ্যায় যাদবপুরের সুকান্ত সেতু থেকে পাল্টা প্রতিবাদ মিছিল করেছে তৃণমূল। মিছিলে ছিলেন তৃণমূল কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক তথা রাজ্যের মন্ত্রী অরুপ বিশ্বাস, যাদবপুরের সাংসদ সায়নী ঘোষ, তৃণমূলের কাউন্সিলার অরুপ চক্রবর্তী-সহ দলের নেতা-কর্মীরা।

 

উল্লেখ্য এই ঘটনা নিয়ে এখনও কোনো বিবৃতি আসেনি তৃণমূলের এক্স হ্যান্ডেলে।

More Articles