১৬ বছর পর জনগণনা! আদমশুমারির কী কী প্রভাব পড়বে দেশে?

Census 2027: প্রথমে, জনসংখ্যা গণনা করা হবে, দ্বিতীয় পর্যায়ে জাতিগণনা করা হবে। ২০২৬ সালের ১ এপ্রিল থেকে ২০২৭ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ১১ মাস ধরে এই প্রক্রিয়া চলবে।

T

১৬ বছর পর দেশে শুরু হচ্ছে জনগণনা। গত মাসে জনগণনার সঙ্গে জাতভিত্তিক গণনার কথা ঘোষণা করেছিল কেন্দ্র। কবে থেকে শুরু হবে, তা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই জল্পনা ছিল। সরকারি সূত্রের উল্লেখ করে পিটিআই জানিয়েছে, ২০২৭ সালের ১ জুন শুরু হবে জনগণনা। লাদাখ, জম্মু ও কাশ্মীর, হিমাচল প্রদেশ এবং উত্তরাখণ্ডের হিমালয় ঘেরা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল ও রাজ্যের বিস্তীর্ণ এলাকা সে সময় তুষারবৃত্ত থাকায় ২০২৬-এর অক্টোবর থেকে এই এলাকায় জনগণনার কাজ শুরু হবে। কেন এই জনগণনা গুরুত্বপূর্ণ?

সেন্সাস অ্যক্ট ১৯৪৮ ও সেন্সাস রুলস ১৯৯০ অনুযায়ী, ১০ বছর অন্তর জনগণনা হওয়ার কথা। কিন্তু দেশে শেষ জনগণনা হয়েছিল ২০১১ সালে। সরকারের রীতি অনুযায়ী ২০২১ সালে জনগণনা হওয়ার কথা ছিল। তবে তা হয়নি। অভিযোগ রয়েছে, ২০১৯ সালের সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন পাশের পর দেশ জুড়ে তৈরি হওয়া উত্তেজনায় কেন্দ্রের বিজেপি সরকার জনগণনার প্রক্রিয়া শুরুর তৎপরতা দেখায়নি। অন্যদিকে কেন্দ্রের দাবি, করোনা পরিস্থিতির কারণে আদমশুমারির প্রক্রিয়া চালানো সম্ভব হয়নি।

এই জনগণনা গুরুত্বপূর্ণ হওয়ার অন্যতম কারণ এতে জাতিভিত্তিক শুমারিও হবে। মোদি সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে এটি হবে প্রথম জনগণনা। এখন দেশের জনগণনা কমিশনার পদে রয়েছেন মৃত্যুঞ্জয়কুমার নারায়ণ। ২০২৪ সালে মৃত্যুঞ্জয়কুমারের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল, যদিও মোদি সরকার ২০২৬-এর অগাস্ট মাস পর্যন্ত এই মেয়াদ বাড়িয়ে দেয়।

আরও পড়ুন- জাতগণনার সিদ্ধান্ত বিজেপির কাছে ব্যুমেরাং হবে না তো?

দু'টি ধাপে জনগণনা হবে

দু'টি ভাগে জনগণনা হবে। প্রথমে, জনসংখ্যা গণনা করা হবে, দ্বিতীয় পর্যায়ে জাতিগণনা করা হবে। ২০২৬ সালের ১ এপ্রিল থেকে ২০২৭ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ১১ মাস ধরে এই প্রক্রিয়া চলবে।

২০২১ সালের আদমশুমারির জন্য চূড়ান্ত করা ২৪ লক্ষ গণনা কেন্দ্রকেই ফের এবারের অনুশীলনের জন্য ব্যবহার করা হতে পারে। প্রায় ৩০ লক্ষ জন এই গণনা প্রক্রিয়া চালাবেন। বেশিরভাগই থাকবেন সরকারি স্কুল শিক্ষক। তাঁদের মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে নতুন করে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।

নিজে থেকেও গণনা প্রক্রিয়া চালানো যাবে

রেজিস্ট্রার জেনারেল অফ ইন্ডিয়ার কার্যালয় জনগণনা করে থাকে। ২০২১ সালের আদমশুমারির জন্য সেখানে একটি পোর্টাল তৈরি করা হয়েছিল। কেউ চাইলে নিজে থেকেও সেখানে পরিবারের গণনা প্রক্রিয়া চালাতে পারবেন। তবে, এই সুবিধে শুধুমাত্র তাঁরাই পাবেন যাঁরা অনলাইনে এনপিআর (জাতীয় জনসংখ্যা পঞ্জি)-এ রেজিস্টার করেছেন। নাগরিকত্ব বিধি ২০০৩ অনুসারে, এনপিআর হলো জাতীয় নাগরিক পঞ্জি (এনআরসি)-তে নাম নথিভুক্ত করার প্রথম ধাপ। গত কয়েক বছরে বেশ কয়েকটি রাজ্য এই তথ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে বিরোধিতা করেছে। এনপিআর-এর বিরোধিতায় দেশে জোরদার আন্দোলনেও হয়েছে। যদিও এনপিআর-এ তথ্য দেওয়ার বিষয়ে এখনও কোনও নির্দেশ দেওয়া হয়নি। এনপিআর-এ এখনও অবধি ১১৯ কোটি বাসিন্দার তথ্যভাণ্ডার রয়েছে। ২০২১ সালের আদমশুমারিতে প্রথমে এখানে জনসংখ্যা আপডেট করার কথা ছিল।

বিরোধীদের ইস্যু

প্রসঙ্গত, বিরোধীরা দীর্ঘদিন ধরেই জনগণনায় জাতিভিত্তিক শুমারি অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানাচ্ছিল। দু'বছর আগেই কংগ্রেস জাতগণনার দাবি তুলেছিল। ২০২৩ সালে বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধি কর্নাটকের বিধানসভা ভোটের প্রচারে প্রথম জাত গণনার দাবি তুলেছিলেন। ২০২৪ সালের লোকসভা ভোটের প্রচারে রাহুল বলেছিলেন, "ক্ষমতায় এসেই আমরা প্রথম যে কাজটি করব তা হলো- দেশের ওবিসিদের সঠিক সংখ্যা জানতে জাতভিত্তিক গণনা করব। কারণ তাদের জনসংখ্যা কেউ জানেন না।" লোকসভার রাহুল অভিযোগ করেছিলেন, "বর্তমানে ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী খাদ্যসুরক্ষা আইনে সহায়তা করা হচ্ছে। এতে ১৪ কোটি মানুষ বঞ্চিত হচ্ছেন।"

আরও পড়ুন- ১০ বছর দেশের মানুষের তথ্যই জানে না বিজেপি সরকার! জনগণনা না হলে আখেরে কার লাভ?

বারেবারে অভিযোগ উঠেছে, জনশুমারি না হওয়ায় বঞ্চিত হচ্ছেন অনগ্রসর শ্রেণির মানুষেরা। বর্তমানে সরকারি চাকরি এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তপশিলি জাতির সংরক্ষণ ১৫ শতাংশ, তপশিলি জনজাতিভুক্তদের জন্য রয়েছে ৭ শতাংশ সংরক্ষণ এবং ওবিসিরা পান ২৭% সংরক্ষণ। রাজনৈতিক কিছু বিশ্লেষক বলে থাকেন, ওবিসিদের জনসংখ্যা বেশি। ফলে তাদের ২৭ শতাংশ আসন সংরক্ষণ আসলে তাদের জনসংখ্যার জন্য কম। ফলত জনসংখ্যা প্রকাশ্যে এলে ওবিসি কোটায় আরও সংরক্ষণের দাবি উঠবে। এতে জেনারেল ক্যাটাগরি এবং ওবিসি দু'দিক থেকেই বিজেপির উপর চাপ বাড়বে। লোকসভা ভোটের সময় থেকেই 'ইন্ডিয়া' শরিকেরা কংগ্রেসকে জাতগণনার বিষয়ে সমর্থন জানিয়ে এসেছে।

জনগণনার ফলে ডিলিমিটেশন

এখনও পর্যন্ত বিহারে জনগণনা হয়েছে। চলতি বছরেই বিহারে বিধানসভা নির্বাচন। বিহারে ৬৩% অনগ্রসর শ্রেণির বাসিন্দা। তবে সেই জনগণনা নিয়েও বিতর্ক রয়েছে। বিহারের ভোটের আগেই এখন দেশ জুড়ে জনগণনার কথা জানিয়েছে কেন্দ্র। আগে জনগণনার পর লোকসভা আসন বাড়ানো হতো। ১৯৭১ সালের পর থেকে আসন সংখ্যা বাড়ানো হয়নি। এবার জনগণনার ভিত্তিতে লোকসভা এবং বিধানসভার আসনও বাড়ানো হবে। ডিমলিমিটেশনের ফলে যেমন কিছু রাজ্যের আসন সংখ্যা বাড়বে তেমনই কিছু রাজ্যের আসন সংখ্যা কমবেও। লোকসভার আসন সংখ্যা বেড়ে সর্বমোট ৮৪৮টি হতে পারে। তবে লোকসভার আসন সংখ্যা বেড়ে যাওয়া নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। ডিলিমিটেশন হলে দক্ষিণের রাজ্যগুলির আসন কমবে বলেই জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। সংসদ ও বিধানসভায় মহিলাদের জন্য প্রস্তাবিত ৩৩% সংরক্ষণের উপরও প্রভাব পড়বে। ফলত এই জনগণনা চালানোর জন্য আরও আলোচনার হবে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

এখন দেখার, ভারতের জনসংখ্যা আসলে কত? মিলবে কি সেই উত্তর?

More Articles