নিরাপদ নয় দার্জিলিংও! কীভাবে জোশীমঠের মতোই তলিয়ে যাওয়ার পথে পাহাড়ের রানি?

Darjeeling: দার্জিলিং জেলার তিনধারিয়া। প্রতিনিয়তই জোশীমঠের মতোই আতঙ্কে কাটাচ্ছেন এখানকার মানুষ।

জোশীমঠ ভিনরাজ্য। জোশীমঠের মানুষজনের সমস্যা, জোশীমঠের বিপর্যয় সারা দেশের সংবাদমাধ্যমের বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ খবর। ক্রমাগত একটু একটু করে ডুবে যাচ্ছে, বসে যাচ্ছে পাহাড়ের এই শহর। দীর্ঘদিনের বাসিন্দারা ঘরছাড়া। এই অঞ্চলে মাত্রাতিরিক্ত নির্মাণকাজ, বাড়ির চাপ, পর্যটনের চাপে ধীরে ধীরে জমি বসে যাচ্ছে। ৭০০-র উপর বাড়িতে ফাটল, ৪০০০-এর উপর মানুষকে নিরাপদে সরিয়েছে প্রশাসন। বিশেষজ্ঞরা অবশ্য আগেই জানিয়েছিলেন, এমনটা জোশীমঠে একদিন হবেই। বিশেষজ্ঞরা এখন বলছেন শুধু জোশীমঠ নয় উত্তরকাশী, নৈনিতালের অবস্থাও হবে জোশীমঠেরই মতো। আর আমাদের সাধের দার্জিলিং? হিমালয়ের রানির কোলে বাড়াবাড়ি রকমের নির্মাণ আর চূড়ান্ত পর্যটনের খেসারত কি দিতে হবে না? দিতে হচ্ছে, জোশীমঠের মতোই বসে যাচ্ছে জমি দার্জিলিংয়ের একাংশে।

দার্জিলিং জেলার তিনধারিয়া। প্রতিনিয়তই জোশীমঠের মতোই আতঙ্কে কাটাচ্ছেন এখানকার মানুষ। এইখানকার বাড়িতে ‘দরজা, জানলার ছিটকিনি আটকানো যায় না। যখন আটকানো যায়, তার কিছু দিন পরেই দেখা যায় আবার লাগানো যাচ্ছে না। ফের নতুন করে ছিটকিনির জায়গা বদল করেন মানুষ। কেন? জমি বসে যাচ্ছে। বাড়ি, দরজা, জানলা সমেত জমি আস্তে আস্তে বসে যাচ্ছে। মাটি ধীরে ধীরে বসে যাওয়ার ফলেই বাড়ি ঘরে দেখা দিচ্ছে ফাটলও। জোশীমঠের আতঙ্ক ফিরছে উত্তরবঙ্গেও। তিনধারিয়ার রাজবাড়ি পাড়া, বাজার এলাকার বাসিন্দারা জানাচ্ছেন জোশীমঠের ঘটনায় উদবিগ্ন তাঁরা। যে কোনও দিন তাঁদেরও কাটাতে হতে পারে রাস্তায়। বাড়িতে, দোকানে ফাটল দেখা দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে প্রশাসনের পদক্ষেপ করা উচিত বলেও মনে করছেন তাঁরা।

আরও পড়ুন- আয়ু কমছে তিলোত্তমার, উন্নয়নের তোড়ে কলকাতারও অবস্থা জোশীমঠের মতোই!

৫৫ নম্বর জাতীয় সড়ক থেকে তিনধারিয়া বাজারে নেমে যাওয়া রাস্তায় গত কয়েক বছরে অভাবনীয় হারে মাটি বসে গিয়েছে। জমি বসে গিয়ে সিঁড়ির মতো ধাপও তৈরি হয়েছে। লাগোয়া ‘গার্ড ওয়াল’-এর ফাটলও বাড়ছে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, এই এলাকায় ক্রমাগত বাড়ছে জনসংখ্যার চাপ। গত ১০ বছরে পাহাড়ি এই এলাকায় জনসংখ্যা ৬০০০ এর কাছাকাছি বেড়েছে। শুধু তাই নয়, তিনধারিয়ায় মাটির নীচে কয়লাও ছিল। মানুষজন নিয়মিত তা তুলতেন একটা সময়। ফলে মাটির নীচটি এমনিতেই ফাঁপা হয়েছে। একে পাহাড়ি দুর্বল জমি বহুকাল থেকেই ভূপ্রাকৃতিক ভাবে ‘সিঙ্কিং জ়োন’, তার উপর কয়লা তোলার বিপত্তি! কয়লা তোলা ঠেকাতে এবং এই পাহাড়ি এলাকাকে রক্ষা করতে ‘গ্রামকল্যাণ সমিতি’-ও রয়েছে। লাগাতার প্রচার চালিয়ে এখন কয়লা তোলা বন্ধ করা গিয়েছে। তবে যা ক্ষতি হওয়ার তা হয়েই গিয়েছে আগে।

দার্জিলিং হিমালয়ান রেল জানিয়েছে, তিনধারিয়ায় রেলের ওয়ার্কশপ এলাকায় এর আগে বড় ধস নেমেছে। ১৭ মাইলে মাটি বসে গিয়েছে। কয়েক বছর পর পর রেল লাইন তুলে ঠিক করতে হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের কথায়, জোশীমঠের সঙ্গে দার্জিলিংয়ের এই এলাকার অনেক মিলই রয়েছে। জোশীমঠের গোটা শহরটার অবস্থান একটি প্রাকৃতিক চ্যুতি রেখার উপর, গোটা উপত্যকাই বসে যাচ্ছে সেখানে। আর দার্জিলিং সার্বিকভাবে তলিয়ে যাচ্ছে না। মাটি দুর্বল, মাটির উপর চাপ বাড়ছে আর তা বসে যাচ্ছে। ফলে এই এলাকায় ধস আরও বাড়বে। শুধু তিনধারিয়া নয়, পূর্ব হিমালয়ের সর্বত্রই সবচেয়ে বেশি ধস নামে এবং এখানে মাটি বসে যাওয়ার প্রবণতাও অনেকটাই বেশি। ধস এবং মাটি বসে যাওয়ার নিয়ে রাজ্যসরকারকে জানানোর চেষ্টাও করা হচ্ছে। জোশীমঠের কথা মাথায় রেখেই পাহাড়ের রানিকে বাঁচানোর মরিয়া চেষ্টা।

 

More Articles