১৯৯৬ থেকে ২০২৫: দিল্লির বিস্ফোরণের ইতিহাস এক নজরে

Timeline of Delhi Blasts (1996–2025): ২৫ মে ১৯৯৬। জনাকীর্ণ লাজপাত নগর মার্কেট। হঠাৎই ভয়াবহ বিস্ফোরণ। প্রাণ হারান অন্তত ১৬ জন। আহত বহু মানুষ। দিল্লির বিস্ফোরণ ইতিহাসের সূচনা যেন সেদিনই।

ভারতের রাজধানী দিল্লি। প্রশাসনের কেন্দ্রবিন্দু, তবু নিরাপত্তার বলয়ে থেকেও বহুবার কেঁপে উঠেছে এই শহর। ১৯৯৬ সাল থেকে আজ পর্যন্ত রাজধানীতে ঘটেছে একাধিক ভয়াবহ বিস্ফোরণ। প্রতিবারই কেঁপে উঠেছে শহরবাসীর মন। আতঙ্ক ছড়িয়েছে প্রতিটি অলিগলিতে, বাজারে, অফিসপাড়ায়। সাধারণ মানুষের ভিড়েই টার্গেট করা হয়েছে। এক মুহূর্তে বদলে গিয়েছে শত শত জীবনের গতিপথ। নিচে দিল্লির বিস্ফোরণগুলির ধারাবাহিক বিবরণ তুলে ধরা হলো—

১৯৯৬: লাজপাত নগর

২৫ মে ১৯৯৬। জনাকীর্ণ লাজপাত নগর মার্কেট। হঠাৎই ভয়াবহ বিস্ফোরণ। প্রাণ হারান অন্তত ১৬ জন। আহত বহু মানুষ। দিল্লির বিস্ফোরণ ইতিহাসের সূচনা যেন সেদিনই।

১৯৯৭: সারা বছরজুড়েই আতঙ্কে

১ অক্টোবর সাদার বাজারে দু'টি বোমা ফাটে, আহত ৩০।

১০ অক্টোবর শান্তিভন, কাউদিয়া পুল ও কিংসওয়ে ক্যাম্পে একসাথে তিনটি বিস্ফোরণ হয়। মৃত্যু হয় ১ জনের, আহত ১৬ জন।

১৮ অক্টোবর রানীবাগ মার্কেটে বিস্ফোরণ, ২৩ জন আহত।

২৬ অক্টোবর কারোলবাগ মার্কেটে দু'টি বিস্ফোরণ, ১ জন নিহত।

৩০ নভেম্বর রেড ফোর্টের কাছে ভয়ঙ্কর বিস্ফোরণ, মৃত্যু হয় ৩ জনের, আহত হন ৭০ জন।

বছর শেষে, ৩০ ডিসেম্বর পঞ্জাবি বাগে বাসে বিস্ফোরণ হয়, মারা যান ৪ জন।

আরও পড়ুন

তেলেঙ্গানা বিস্ফোরণ: ৩৯ শ্রমিক মৃত্যুর কারণ কী? কেন তদন্তে গুরুত্ব নেই মিডিয়ার!

২০০০ দশক: নতুন দশকেও আতঙ্ক

ফেব্রুয়ারি থেকে জুন ২০০০— পাহারগঞ্জ, সাদার বাজার ও রেড ফোর্টে টানা বিস্ফোরণ। নিহত অন্তত ১০ জন।

২০০৫ সালের মে মাসে, লিবার্টি ও সত্যাম সিনেমা হলে বোমা, মৃত্যু ১, আহত ৬০।

২৯ অক্টোবর ২০০৫, দীপাবলির আগে সরোজিনী নগর, পাহারগঞ্জ ও গোবিন্দপুরীতে একযোগে বিস্ফোরণ, মৃত্যু অন্তত ৬০ জনের, আহত শতাধিক।

২০০৮: রাজধানীর বুক কাঁপানো হামলা

১৩ সেপ্টেম্বর ২০০৮, রাজধানীর বিভিন্ন প্রান্তে পাঁচটি বিস্ফোরণ— কারোলবাগ, কনট প্লেস, গ্রেটার কৈলাশ। মৃত্যু ২০-৩০ জন, আহত প্রায় ৯০।
মাত্র দু'সপ্তাহ পর, ২৭ সেপ্টেম্বর মেহরৌলি ফুল মার্কেটে ফের বিস্ফোরণ। প্রাণ হারান তিনজন।

২০১১: আদালতের সামনে বিস্ফোরণ

২৫ মে ২০১১, দিল্লি হাইকোর্টের পার্কিং এলাকায় বিস্ফোরণ। সৌভাগ্যক্রমে বড়সড় ক্ষয়ক্ষতি হয়নি, তবে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে গোটা শহরে।

আরও পড়ুন

পুলওয়ামা বিস্ফোরণের মাস্টারমাইন্ড? ইমরানের কাঁটা নয়া পাক সেনাপ্রধানের আসল পরিচয় জানুন

২০২৫ : দিল্লি

২০২৫ সালের ১০ নভেম্বর। পুরনো দিল্লির লালকেল্লা মেট্রো স্টেশনের সামনে ভয়াবহ বিস্ফোরণে কেঁপে ওঠে রাজধানী। সন্ধ্যা প্রায় সাতটার সময় একটি গাড়ি ট্রাফিক সিগন্যালে থামতেই হঠাৎ বিস্ফোরণ ঘটে। মুহূর্তের মধ্যে আগুন ছড়িয়ে পড়ে, ক্ষতিগ্রস্ত হয় আশপাশের গাড়ি। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় অন্তত আট জনের, আহত হন ২০ জনেরও বেশি। বিস্ফোরণের পর গোটা এলাকায় চরম আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। দিল্লি পুলিশ ও বিশেষ দফতর ঘটনাস্থলে পৌঁছে তদন্ত শুরু করেছে। প্রাথমিকভাবে সন্ত্রাসযোগের সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া হয়নি। নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে লালকেল্লা ও আশপাশের এলাকায়।

এই ঘটনাগুলো দিল্লির নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে। প্রতিবার বিস্ফোরণের পর কিছুদিন সতর্কতা বাড়লেও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেই তৎপরতা কমে যায়। লাজপাত নগর থেকে সরোজিনী নগর, পাহারগঞ্জ থেকে কারোলবাগ— দিল্লির প্রায় প্রতিটি বড় এলাকা কোনো না কোনো সময় বোমা বিস্ফোরণের সাক্ষী। বিস্ফোরণের শিকার পরিবারের জীবনে সেই দিনগুলো যেন থেমে আছে। কারও সন্তান হারিয়েছে মা-বাবাকে, কারও চোখের সামনে হারিয়ে গেছে বন্ধুবান্ধব। বহু মানুষ আজও শারীরিক ও মানসিক ক্ষতের ভার নিয়ে বেঁচে আছেন। প্রতিটি হামলার পর প্রশাসন জোরদার করেছে তদন্ত। একের পর এক বিশেষ টিম গঠিত হয়েছে, খুঁজে বের করা হয়েছে অভিযুক্তদের। তবু মানুষ প্রতিদিন অফিসে যায়, ট্রেনে ওঠে, বাজারে কেনাকাটা করে— ভয়কে সঙ্গী করেই। প্রশ্ন থেকে যায়, কীভাবে বারবার এমন ঘটনা ঘটে? কেন একই জায়গায়, একই কৌশলে রাজধানীর বুক কাঁপিয়ে দেয় আতঙ্ক?

More Articles