চিনের গোলামিই নেপালে কেপি ওলির পতন ডেকে আনল?
Pro-China KP Oli: নেপালের জনগণের একাংশ এটা দেশকে স্বাধীনভাবে দাঁড় করানোর প্রচেষ্টা হিসেবে দেখলেও, অনেকেই মনে করেন ওলির নীতিতে নেপাল অতিরিক্তভাবে চিনের প্রভাবের অধীনে চলে যাচ্ছে।
ছাত্রদের আন্দোলনের চাপে মঙ্গলবার পদত্যাগ করেছেন নেপালের প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলি। সামাজিক মাধ্যম নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে ছাত্রদের বিক্ষোভের শুরু, কিন্তু তার অনেক আগে থেকেই নিজের পতনের বীজ পুঁতেছিলেন কেপি ওলি। দুর্নীতির অভিযোগ তো ছিলই, তারই সঙ্গে অর্থনৈতিক বৈষম্য এবং তাঁর অতিরিক্ত চিন প্রীতিই তাঁকে ধ্বংসের মুখে নিয়ে গেছে। নেপালের প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন কেপি ওলি বারবার চিনের প্রতি প্রকাশ্যে তাঁর সমর্থন জানিয়েছেন। এবং ভারতের সঙ্গে দূরত্ব বাড়িয়েছেন, কূটনৈতিক ও বাণিজ্যিক দিক থেকে।
ভারতকে পাশ কাটিয়ে নেপালকে চিনের ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ’-এ যুক্ত করেছিলেন। ভারতের উপর নির্ভরশীলতা কমাতে চিনের সঙ্গে ট্রানজিট ট্রেড চুক্তি করেছিলেন ওলি। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের অনেকের মতে, এই পদক্ষেপের কারণেই নেপালের উপর চিনের প্রভাব বেড়ে যায়।
আরও পড়ুন- নেপালের গণ অভ্যুত্থানে বাংলাদেশের ছায়া কতটুকু?
ওলির শাসনকালে সবথেকে খারাপ সময়ের মধ্যে দিয়ে যায় ভারত-নেপাল সম্পর্ক। সীমান্ত নিয়ে বড় দ্বন্দ্ব তৈরি হয়। ২০১৫ সালে প্রথমবার প্রধানমন্ত্রী পদে বসে নেপাল সীমান্ত নিয়ে কঠোর অবস্থান নিয়েছিলেন ওলি। এছাড়া ২০২০ সালে ভারত যখন লিপুলেখে রাস্তা খোলে, তখন সংসদে নতুন মানচিত্র পাশ করার ওলি। যেখানে কালাপানি, লিপুলেখ আর লিম্পিয়াধুরা নেপালের অংশ বলে দাবি করা হয়। এর ফলে দুই দেশের মধ্যেই অস্থিরতা বাড়ে।
শুধু তাই নয়, গত বছরই কেপি ওলি বলেন— “নেপালের ভূখণ্ডে কোনও ধরনের চীনবিরোধী কার্যকলাপ চালাতে দেওয়া হবে না”। ২০২৪-এর অক্টোবরে বালুয়াটার সরকারি বাসভবনে চিনের এক উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠকে ওলি এই মন্তব্য করেন।
আরও পড়ুন- ছাত্র বিক্ষোভ থেকে প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ! যা যা ঘটল নেপালে
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ওলির এই ঘোষণা মূলত চিনকে আশ্বস্ত করা ও চিনা বিনিয়োগ-সহযোগিতা বজায় রাখার কূটনৈতিক সিদ্ধান্ত। তবে এটি একই সঙ্গে মতপ্রকাশের স্বাধীনতায় বাঁধা ও তিব্বতীয় কণ্ঠস্বর বা চিন-বিরোধী মানবাধিকার কর্মীদের নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা।
বহু সময় একাধিক বিতর্কিত মন্তব্য করেও ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের জটিলতা বাড়িয়েছেন ওলি। একসময় তিনি বলেন, আসল অযোধ্যা নাকি নেপালেই! আর সেখানেই জন্মেছিলেন ভগবান রাম। এই মন্তব্য ভারতে ব্যাপক ক্ষোভ সৃষ্টি করে। অনেকে এটাকে ইতিহাস বিকৃতির চেষ্টা বলে মনে করেছিলেন।
কোভিডের সময়ও বিতর্কিত মন্তব্য করে ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের তিক্ততা বাড়িয়েছিলেন ওলি। তিনি বলেন, “ভারত থেকে আসা ভাইরাস নেপালে আরও প্রাণঘাতী।’ ভারতের চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যব্যবস্থা নিয়েও কটাক্ষ করেছিলেন।”
আরও পড়ুন- ছাত্র বিক্ষোভ থেকে প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ! যা যা ঘটল নেপালে
তারই সঙ্গে প্রকাশ্যে চিনকে নিয়ে প্রশংসা করে গেছেন ওলি। তিনি বলেছিলেন, “চিন নেপালের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য বন্ধু।” এমনকি, নেপালের কমিউনিস্ট দলগুলির একীভূত হওয়ার পিছনেও চিনের ভূমিকা ছিল। আর সেই ভূমিকা তিনি অস্বীকার করেননি।
এ’সব কারণেই কেপি শর্মা ওলিকে বলা হয় ‘চরম চিনপন্থী’। তাঁর নীতি ও মন্তব্য একদিকে চিনের সঙ্গে নেপালের সম্পর্ক মজবুত করেছে, অন্যদিকে ভারতের সঙ্গে দূরত্ব বাড়িয়েছে। নেপালের জনগণের একাংশ এটা দেশকে স্বাধীনভাবে দাঁড় করানোর প্রচেষ্টা হিসেবে দেখলেও, অনেকেই মনে করেন ওলির নীতিতে নেপাল অতিরিক্তভাবে চিনের প্রভাবের অধীনে চলে যাচ্ছে।
২০১৬ সালে পোখরা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নির্মাণে নেপাল চিনের সঙ্গে ২০ বছরের চুক্তি সই করে। এই প্রকল্পের জন্য চিন এক্সিম ব্যাংকের কাছ থেকে মোট ২২০ বিলিয়ন টাকা (প্রায় ২১৫.৯৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার) ঋণ নেওয়া হয়। নেপালের উপর প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলারের বৈদেশিক ঋণ রয়েছে, যার মধ্যে চিনের অংশ কম হলেও, ঋণের পরিমাণ বাড়ছে। কেপি ওলির পতনের পিছনে অর্থনৈতিক অচলাবস্থাও অন্যতম প্রধান কারণ।

Whatsapp
