দলের অন্দরেই অসন্তোষ! ইরান আক্রমণ করে আইন ভেঙেছেন ট্রাম্প ?
Iran-Israel conflict : কোনো পক্ষের মতামত না নিয়ে একতরফা ভাবে ইরানের তিন পরমাণুঘাঁটিতে হামলার নির্দেশ দিয়ে ট্রাম্প মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আইন লঙ্ঘন করেছেন বলে অভিযোগ তুলেছিলেন বিরোধী ডেমোক্র্যাট নেতৃত্বের একাংশ।
সম্প্রতি ইরানে হামলা চালিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। যদিও হোয়াইট হাউস বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছিল, ইরানের সঙ্গে বোঝাপড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কী সিদ্ধান্ত নেবেন, তা দু’সপ্তাহের মধ্যে জানা যাবে। কিন্তু সেই ঘোষণার ৭২ ঘণ্টার মধ্যেই ইরানে হামলা চালায় আমেরিকা। হামলার দিন (২২ জুন) থেকেই তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠছিল। রিপাবলিকানের অনেকেই ইরান হামলার বিরোধিতা করেছেন। প্রশ্ন উঠছে, ইরানে হামলা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আইনে কতটা বৈধ? ইরান আক্রমণ করে কি আইন ভেঙেছেন ট্রাম্প?
কোনো পক্ষের মতামত না নিয়ে একতরফা ভাবে ইরানের তিন পরমাণুঘাঁটিতে হামলার নির্দেশ দিয়ে ট্রাম্প মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আইন লঙ্ঘন করেছেন বলে অভিযোগ তুলেছিলেন বিরোধী ডেমোক্র্যাট নেতৃত্বের একাংশ। ইরানে মার্কিন সেনার হামলা নিয়ে সে দেশের আইনসভা কংগ্রেসেও সমালোচনার মুখে পড়েছেন ট্রাম্প। কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ হাউস অফ রিপ্রেজেনটেটিভসের রিপাবলিকান সদস্য টমাস ম্যাসি এক্স পোস্টে লিখেছেন, ‘‘এই হামলা আমেরিকার সংবিধান অনুযায়ী বৈধ নয়।’’ তাঁর দাবি, মার্কিন আইন অনুযায়ী, হামলার সম্মুখীন না হয়েও যদি কোনো দেশে আক্রমন চালাতে হয় সে ক্ষেত্রে সেই দেশের কংগ্রেসের মতামত অপরিহার্য। কিন্তু ইরানের ফোরডো, নাতাঞ্জ, ইসফাহান পরমাণুকেন্দ্রে পেন্টাগনে আক্রমণের পূর্বে মার্কিন আইনসভাকে কিছুই জানানো হয়নি। রিপাবলিকান পার্টির প্রভাবশালী কংগ্রেসম্যান ওয়ারেন ডেভিডসন মঙ্গলবার (২৩ জুন) সমাজমাধ্যমে লিখেছেন, ‘‘এটি সাংবিধানিক ভাবে বৈধ, এমন কোনও যুক্তি কল্পনা করাই কঠিন।’’
আরও পড়ুন-কেন দু’সপ্তাহের কথা বলে ৭২ ঘণ্টার মধ্যেই ইরানে হামলা ট্রাম্পের?
তবে ট্রাম্পের এই অসময়ে রিপাবলিকান নেতা তথা হাউস অফ রিপ্রেজেনটেটিভসের স্পিকার মাইক জনসন তাঁর পাশে রয়েছেন। ২৩ জুন তিনি বলেন, ‘‘অতীতেও আমেরিকার প্রেসিডেন্টদের অনেকে জরুরি পরিস্থিতিতে এমন পদক্ষেপ নিয়েছিলেন।’’
অন্যদিকে আবার শুধু রিপাবলিকান নেতারাই নন, দলের সমর্থকরাও ইরানে হামলার বিরোধিতা জানাচ্ছেন। হামলায় ইরানের পারমাণবিক ঘাঁটিগুলি কতটা ধ্বংস হয়েছে তা জানতে সময় লাগবে। যদি এই অভিযানে সফল না হয় তবে ট্রাম্পের চাপ আরও বাড়বে। এ হামলায় ট্রাম্পের রাজনৈতিক ঝুঁকি বাড়াবে। নিউ ইয়র্ক টাইমস ইরানে হামলা প্রসঙ্গে রিপাবলিকান সমর্থকদের কাছ থেকে বেশ কিছু মতামত সংগ্রহ করেছে। কিছুজন ট্রাম্পকে সমর্থন করলেও বিরোধী মতও উঠে এসেছে। সমর্থকদের যুক্তি, ট্রাম্পকে ভোট দেওয়ার অন্যতম কারণ হলো, আমার মনে করতাম ট্রাম্প উপসাগরীর অঞ্চলের সঙ্কটের পরিস্থিতি থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে দূরে রাখবেন। যুক্তরাষ্ট্রকে এর সাথে জড়াবেন না। কিন্তু উনি তাই করে ফেললেন। সমর্থকদের দাবি, , জিমি কার্টার পারেননি, ট্রাম্প পারলেন। উনি ইরানকে বুঝিয়ে দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সংঘাতে লিপ্ত হলে বিপদ অনিবার্য।
ট্রাম্পের সমালোচকরা এই মুহূর্তে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ আইনের কথা বলছেন, যার নাম 'ওয়ার পাওয়ার্স রেজোলিউশন'। ১৯৭৩ সালে ভিয়েতনাম যুদ্ধের সময় এই আইনটি আনা হয়। আইনটির উদ্দেশ্য ছিল- কংগ্রেসের অনুমতি না নিয়ে প্রেসিডেন্ট যেন সহজে সংঘর্ষে জড়িয়ে না পড়েন, এই বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করা। আইনটিতে বলা হয়েছে, জরুরি পরিস্থিতিতে প্রেসিডেন্ট সামরিক শক্তি ব্যবহার করতে পারলেও, যুদ্ধ বা সংঘর্ষে জড়ানোর আগে প্রেসিডেন্টকে কংগ্রেসের থেকে যতটা সম্ভব পরামর্শ নিতে হবে।
আরও পড়ুন-কাতারের আল উদেইদ ঘাঁটিতে কী রয়েছে?
১৯৪২ সালে শেষবার কংগ্রেস আনুষ্ঠানিকভাবে যুদ্ধ ঘোষণা করেছিল। তখন জাপান পার্ল হারবার আক্রমণ করে। এর আগে ১৮১২ সাল থেকে ১৯৪২ সালের মধ্যে প্রায় ১০ বার এই ক্ষমতা প্রয়োগ করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
‘অপারেশন মিডনাইট হ্যামার’-এর মতোই এখন ইরান-ইজরায়েল যুদ্ধবিরতি ঘোষণার ক্ষেত্রেও তাড়াহুড়ো করেছেন ট্রাম্প। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ইরান-ইজরায়েল ‘সংঘর্ষবিরতি’ ঘোষণার নেপথ্যে আসলে তাঁর দলের অন্দরেই তাঁকে নিয়ে বিরোধিতা। ট্রাম্প তাঁর প্রথম মেয়াদে কোনো নতুন যুদ্ধ শুরু করেননি। নির্বাচনী প্রচারেও বারবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আগের নেতাদের বৈদেশিক সংঘাতে জড়ানোর নীতি নিয়ে সমালোচনা করেছেন। ট্রাম্প নিজেকে ‘শান্তির দূত’ বলে দাবি করেন। এই পরিস্থিতিতে তিনি যদি আবার হামলা চালান তবে এবার দলের ভেতরেই তাঁকে সর্বাত্মক বিদ্রোহের মুখে পড়তে হতো। ট্রাম্পের হামলার পর ইরানের কাতার হামলায় আরও উদ্বেগ বাড়ছিল। এই সকল পরিস্থিতি কথা মাথায় রেখেই হয়তো সোমবার (২৩ জুন) রাতে ট্রাম্প সমাজমাধ্যমে পোস্ট করে ইরান-ইজরায়েলের যুদ্ধবিরতির ঘোষণা করেন। তিনি নিজেই আবার সংঘর্ষবিরতি লঙ্ঘনের অভিযোগও তুলেছেন। তেহরান-তেল আভিভ, দু’পক্ষের বিরুদ্ধেই অভিযোগ করছেন।