ভাঙল আস্ত ফ্ল্যাট, মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচাল 'ডোরেমন'! একরত্তি ছেলের কাহিনি শুনে হতবাক দেশ

Lucknow Building Collapse Doraemon : সবার ছানাবড়া চোখ দেখে সেই বাচ্চাটি বলে ফেলল আসল ‘রহস্য’। ডোরেমন এসে নাকি তাকে বাঁচিয়েছে!

২৪ জানুয়ারি, মঙ্গলবার। গোটা ভারতের মতো লখনউও একটু একটু করে প্রজাতন্ত্র দিবস উদযাপনের জন্য তৈরি হচ্ছিল। হঠাৎই সন্ধ্যায় বিপর্যয় নেমে এল। শহরের হজরতগঞ্জ এলাকার একটি ফ্ল্যাটবাড়ি হুড়মুড় করে ভেঙে পড়ে। চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে ইট, সিমেন্ট, ভাঙা কাচ, খেলনার টুকরো। লোহা লক্কর ও সেই ধ্বংসস্তূপের ভেতর অনেকেই চাপা পড়ে রয়েছে, এমনটাই আশঙ্কা ছিল। একটু একটু করে উদ্ধারকাজ শুরু হল।

সেই সময়ই ওই ধ্বংসস্তূপ থেকে বছর ছয়েকের এক বালককে উদ্ধার করা হয়। এত বড় বিপজয় হল, অথচ ছেলেটার গায়ে সেভাবে আঁচ লাগেনি! তড়িঘড়ি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হল বটে, কিন্তু বিশেষ কিছু চিকিৎসা করতে হল না। মাত্র ছয় বছর বয়স, এর মধ্যেই মৃত্যুকে ফাঁকি দেওয়ার ‘নিনজা টেকনিক’ কী করে শিখে ফেলল সে? সবার ছানাবড়া চোখ দেখে সেই বাচ্চাটি বলে ফেলল আসল ‘রহস্য’। ডোরেমন এসে নাকি তাকে বাঁচিয়েছে! ওর জন্যই সে আজ শ্বাস নিতে পারছে! ছোট বাচ্চার মুখে এমন কথা শুনে আরও তাজ্জব হয়ে যান চিকিৎসক, পুলিশরা।

আরও পড়ুন : অম্বিকেশ কার্টুন মামলা খারিজ, ১১ বছর ধরে খেসারতের যে পথ পেরিয়ে এলেন যাদবপুরের অধ্যাপক

যারা টিভির জগত ও বাচ্চাদের সম্পর্কে জানেন, তাঁদের কাছে ‘ডোরেমন’ নামটি একেবারেই অচেনা নয়। পৃথিবী বিখ্যাত এই কার্টুনটি ভারতের অনেক বাচ্চাই দেখে। বলা ভালো, টিভির পর্দায় ডোরেমনের কাণ্ডকারখানা গোগ্রাসে গেলে তারা। জাপানের এই কার্টুনটি অনেকটা কল্পবিজ্ঞানের কাহিনির মতো। যেখানে ভবিষ্যৎ থেকে নোবিতা নামের এক কিশোরের জীবনে আসে ডোরেমন। সে আদতে এক অত্যাধুনিক রোবট। তার বুদ্ধি আছে, মন আছে, দুঃখ পেলে সে কাঁদে। সেইসঙ্গে নোবিতা, সিজুকা, জিয়ান, সুনিও-র সঙ্গে দস্যিপনায় মেতে ওঠে। হাসি, আনন্দ, দুঃখের পাশাপাশি বন্ধুত্বের গল্পও বলে এই ‘ডোরেমন’। কিন্তু সেটা তো কাল্পনিক চরিত্র। সে কী করে বাস্তবে একটা বাচ্চার জীবন বাঁচাবে? তাও এমন ভয়ংকর ঘটনা থেকে?

তার আগে ঘটনাটায় আসা যাক। হজরতগঞ্জ এলাকার ওই ফ্ল্যাটটির নাম আলিয়া এপার্টমেন্ট। সেখানেই থাকত বছর ছয়েকের মুস্তাফা। তাঁর বাবা আব্বাস হায়দার সমাজবাদী পার্টির মুখপাত্র। ঠাকুরদা আমির হায়দার কংগ্রেসের বড় নেতা ছিলেন। ২৪ জানুয়ারির সন্ধ্যায় ঘরে বসে টিভি দেখছিল মুস্তাফা। সঙ্গে ছিল ঠাকুরদা, মা উজমা হায়দার ও ঠাকুমা বেগম হায়দার। হঠাৎই গোটা বাড়িটা যেন কেঁপে ওঠে। তারপর হুড়মুড় করে ভেঙে পড়ে।

তখনই আসল কাজটি করে মুস্তাফা। বাড়ি কাঁপতে থাকায় সে মনে করে, বোধহয় ভূমিকম্প হচ্ছে। সঙ্গে সঙ্গে তার মনে পড়ে যায় প্রিয় কার্টুন চরিত্রের কথা। ডোরেমন দেখতে খুবই পছন্দ করে মুস্তাফা। তার মনে পড়ে, কয়েকদিন আগেই একটি এপিসোডে দেখিয়েছিল, ভূমিকম্পের সময় নোবিতা খাটের নিচে গিয়ে লুকিয়েছিল। সেখানে বলা হয়েছিল, ভূমিকম্প হলে এমনই করতে হয়। সঙ্গে সঙ্গে মুস্তাফা খাটের নিচে গিয়ে বসে পড়ে। সেখান থেকেই দেখতে পায়, তার ‘আম্মি’ চিৎকার করছে, ছুটছে। হঠাৎই চারিদিক ধুলোয় ঢেকে গেল; তারপর অন্ধকার…

আরও পড়ুন : জোশীমঠ নিয়ে মিডিয়াকে কোনও তথ্য না! কোন রহস্য ধামাচাপা দিতে চাইছে সরকার?

ওই ধ্বংসস্তূপ থেকে মুস্তাফার মা আর ঠাকুমা, উজমা আর বেগম হায়দারকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই তাঁরা মারা যান। ধ্বংসস্তূপ থেকে মুস্তাফা আর তার দাদুকে উদ্ধার করা হয়। বাবা আব্বাস হায়দার তখন বাড়ি ছিলেন না। খাটের নিচে ঢুকে পড়ার জন্যই বেঁচে গিয়েছিল মুস্তাফা। তাই সে এখনও জীবিত, বলছেন ডাক্তাররা। কার্টুন মানেই খারাপ, এমনটা তাহলে নয়। কার্টুন মানুষের জীবনও বাঁচায় তাহলে!

কিন্তু কেন এই দুর্ঘটনা? কেন ভেঙে পড়ল ফ্ল্যাটটি? এখনও সঠিক কারণ জানা যায়নি। তবে উঠে আসছে বেশকিছু কারণ। প্রতিবেশীদের বক্তব্য, ওইদিন দুপুরে নেপালে মাঝারি মাপের ভূমিকম্প হয়। সেই ঝটকা এসে লাগে লখনউয়েও। তার জেরেই নাকি ওই ফ্ল্যাটে ফাটল দেখা যায়। ভূমিকম্পের প্রায় চার ঘণ্টা পর এমন ঘটনা ঘটে। সেইসঙ্গে এও অনুমান, ওই ফ্ল্যাটে সিলিন্ডার বিস্ফোরণের জন্যও এমনটা ঘটতে পারে। 

More Articles