ইডেনে লজ্জার হার, তিনদিনেই সাঙ্গ টেস্ট, র্যাঙ্কিংয়ে পিছল ভারত
Eden Test Shock: খেলার মোড় ঘুরেছিল যদিও অন্য জায়গায়— শুভমান গিলের চোট। প্রথম ইনিংসেই ব্যাট করতে নেমে ঘাড়ে চোট পান ভারতের অধিনায়ক। দ্বিতীয় ইনিংসে নামলেন না। এই টেস্ট জুড়ে সেই অনুপস্থিতি শূন্য করে রাখল।
কলকাতার ইডেন গার্ডেন। নভেম্বরের মিষ্টি রোদ। কিন্তু আবহাওয়া মিষ্টি নেই। চারদিকে টানটান উত্তেজনা। তিন দিনের মধ্যেই শেষ হয়ে গেল টেস্ট। আর সেই সমাপ্তির সঙ্গেই দীর্ঘ তেরো বছরের দুর্গ— ইডেনে ভারতের অজেয় থাকার রেকর্ড ভেঙে গেল। দক্ষিণ আফ্রিকা ৩০ রানে জিতল। জিতে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়ন শিপে র্যাঙ্কিং-এ দ্বিতীয় স্থানে পৌঁছে গেল আফ্রিফা। ভারত রইল চারে।
খেলার মোড় ঘুরেছিল যদিও অন্য জায়গায়— শুভমান গিলের চোট। প্রথম ইনিংসেই ব্যাট করতে নেমে ঘাড়ে চোট পান ভারতের অধিনায়ক। দ্বিতীয় ইনিংসে নামলেন না। এই টেস্ট জুড়ে সেই অনুপস্থিতি শূন্য করে রাখল।
ইডেনের পিচ প্রথম দিন থেকেই সন্দেহ তৈরি করেছিল। সিম মুভমেন্ট, ভেরিয়েবল বাউন্স, আর অদ্ভুত রকমের আগাম টার্ন—একসঙ্গে তিন অস্ত্র চালাল। ব্যাটসম্যানদের কাছে যেমন তা রহস্য, তেমনি বিপদ। চার ইনিংসে সর্বোচ্চ স্কোর ১৮৯— পরিসংখ্যানই বলছে কতটা কঠিন ছিল ব্যাট করা।

তবু ভারতের শুরুটা খারাপ ছিল না। প্রথম দিনে ভরসার নাম জসপ্রীত বুমরাহ। দারুণ ছন্দে বল করে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম ইনিংস গুটিয়ে দেন ১৫৯ রানে। স্কোরবোর্ডে তার নামের পাশে ৫/২৭— টেস্টের উপযুক্ত চিহ্ন। সেই জবাবে ভারতের ব্যাটিংও লড়াইয়েরই নাম। বড় রান না হলেও ১৮৯ তুলতে পেরেছিল লোয়ার অর্ডারের ধৈর্য। ৩০ রানের লিড, এই পিচে তা অনেক কিছু।
কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকার দ্বিতীয় ইনিংসেই খেলার একমাত্র স্থিরতা দেখা গেল। নাম টেম্বা বাভুমা। বাকি ব্যাটাররা হোঁচট খেলেও তিনি দাঁড়িয়ে রইলেন। ৫৫ রান— এই খেলায় একমাত্র অর্ধশতরান। না কোনো বাহুল্য, না কোনো বিশেষ ঝলক। নিখুঁত ধৈর্য। স্ট্রোকের ভুল জায়গা নেই। তাঁর সেই লড়াই দলকে টেনে তুলল ১৫৩ পর্যন্ত। স্কোর ছোট, পিচ আরও ছোট করে দিল।
১২৪ রানের লক্ষ্য, ভারতীয় ড্রেসিংরুম-এ সাধারণত এটাকে 'হাঁটাপথ'ই ধরা হয়। কিন্তু ইডেনের তৃতীয় দিনের সকাল তাঁর নিজের নিয়মে খেলল। দক্ষিণ আফ্রিকার পেসাররা বল ফেলতেই নড়ে উঠছিল পিচ। অমন দাপট বহুদিন দেখা যায়নি।
ভারতের ব্যাটিং একের পর এক ফাটলে ভেঙে গেল। রাহুলের পর আস্থার জায়গা আর রইল না। মাঠে বোঝা গেল— গিল নেই, রোহিত নেই, বাকি সবাই অনিশ্চয়তার সঙ্গে লড়াই করছে। লক্ষ্য ১২৪। পেল মাত্র ৯৩।

ঘাড়ের পেছনে ধরে হেঁটে যাওয়ার সময়
এর ফলাফল, দল নেমে গেল চতুর্থ স্থানে। আট ম্যাচে চার জয়, তিন হার। অস্ট্রেলিয়া শীর্ষে। দক্ষিণ আফ্রিকা দ্বিতীয়। শ্রীলঙ্কা তৃতীয়।
ইডেনের তিন দিনের টেস্ট অনেক প্রশ্ন রেখে গেল। পিচের চরিত্র, ব্যাটিংয়ের অবস্থা, আর অধিনায়কের চোট— সব মিলিয়ে এক ধাক্কায় বদলে গেল ভারতের ক্রিকেট অভিযানের মানচিত্র। দক্ষিণ আফ্রিকা তুলে নিল মূল্যবান প্রতিপক্ষের ঘরের মাঠে জয়। আর ভারতের সামনে রেখে গেল কঠিন সমীকরণ। কীভাবে এই হার থেকে বেরোবে, আর বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের দৌড়ে ফের গতি আনবে ভারত?

Whatsapp
