৬৮ জন ভোটারের ঠিকানা বার! ফের নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে ভোটচুরির অভিযোগ

Election Commission : সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি শুধু দাবিই করেননি ভোটার তালিকাও দেখিয়েছেন। ওই তালিকায় দেখা গিয়েছে, চারটি ভিন্ন ভোটকেন্দ্রেই একটি ব্যক্তির নাম রয়েছে।

বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী ৭ অগাস্ট একটি সাংবাদিক সম্মেলন করেছেন। ১ ঘণ্টা ১২ মিনিটের এই সাংবাদিক সম্মেলনে রাহুল অভিযোগ তুলেছেন নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে। সাংবাদিক সম্মেলনটির শিরোনাম ছিল - 'ভোট চোরি কা অ্যাটম বোমা সাবুত'। যার বাংলা অর্থ- ভোট চুরির বোমার মতো প্রমাণ। নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে কী কী অভিযোগ তুললেন রাহুল?

রাহুলের অভিযোগ, দেশ জুড়ে ভোট কারচুপি হচ্ছে। কীভাবে ভোট চুরি হচ্ছে তা জানতে অনেক সময় লেগেছে বলে জানান তিনি। ভোটার তালিকা নিয়ে পাঁচটি স্তরে ছ’মাস ধরে তদন্ত করেছে কংগ্রেসের প্রতিনিধিরা। তাঁর অভিযোগ, নির্বাচন কমিশন জাল ভোটার এবং নকল ভোটারদের ভোটদানের সুযোগ করে দিয়েছে। তিনি অভিযোগ তুলেছেন, ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)-কে সুবিধা করে দিচ্ছে নির্বাচন কমিশন আর বিজেপি সেই সুযোগে ভোটে কারচুপি করছে।

তাঁর কথায়, এটি সবচেয়ে বেশি হয়েছে বিশেষত বেঙ্গালুরুর বিধানসভা কেন্দ্র মহাদেবপুরায়। বেঙ্গালুরুর সেন্ট্রালের অধীনে এই বিধানসভা কেন্দ্র। রাহুল বলেন, ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে বেঙ্গালুরু সেন্ট্রালে কড়া প্রতিযোগিতা হয়েছিল। কংগ্রেস প্রার্থী মনসুর আলি খানা বেশির ভাগ সময়ে এগিয়ে ছিলেন। কিন্তু দেখা গেল কংগ্রেস বিজেপির পিসি মোহনের কাছে ৩২,৭০৭ ভোটে হেরেছে।

আরও পড়ুন- WB Electoral Roll : নির্বাচন কমিশনের অভূতপূর্ব নির্বাচনী তালিকা সংশোধন এবার বঙ্গেও

রাহুল বলেন, কংগ্রেস কর্ণাটকের ২৮টি আসনের মধ্যে ১৬টি জিতবে বলে ভেবেছিল। কিন্তু তারা শুধুমাত্র নয়টি আসনই জিতেছে। তিনি এর জন্য ভোট কারচুপির মতো ঘটনাকেই দায়ী করছেন। তাঁর কথায়, “আমরা তথ্য পেয়েছি  মহাদেবপুরায় ১,০০,২৫০টি ভোট চুরি হয়েছে।” রাহুল দাবি করেছেন, ফর্ম ৬ ব্যবহারের করে জাল এন্ট্রি  করে এই ঘটনাগুলি ঘটানো হয়েছে। তাঁর দাবি, “ বিপুল সংখ্যক নকল ঠিকানা এবং ছবি ব্যবহার করে" নতুন ভোটারদের তালিকাভুক্ত করা হয়েছে।

সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি শুধু দাবিই করেননি ভোটার তালিকাও দেখিয়েছেন। ওই তালিকায় দেখা গিয়েছে, চারটি ভিন্ন ভোটকেন্দ্রেই একটি ব্যক্তির নাম রয়েছে। "এরকম শত শত ঘটনা ঘটেছে," বলে দাবি করেন তিনি। তাঁর আরও দাবি, "৬৮ জন ভোটারের ঠিকানা ছিল একটি বারে।" রাহুল বলেছেন, কংগ্রেসের প্রতিনিধিরা এই জায়গাগুলিতে গিয়েছিলেন।

রাহুল মহারাষ্ট্রের বিরুদ্ধেও একই অভিযোগ তুলেছেন। তাঁর দাবি, মহারাষ্ট্রেও ভোট কারচুপি হয়েছে। রাহুল বলেছেন, "লোকসভা নির্বাচনে, কংগ্রেস এবং তার জোট দলগুলিই রাজ্যের সিংহভাগ আসনে জিতেছিল। কিন্তু বিধানসভা নির্বাচনে তারা হেরে গেল।" এর মধ্যে ১ কোটি নতুন ভোটারকে যুক্ত করে ভোট তোলার অভিযোগ তুলছেন রাহুল।

হরিয়ানার নির্বাচনের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেস হরিয়ানায় ভালো ফল করেছিল কিন্তু দেখা গেল বিধানসভা নির্বাচনে হেরে গেল কংগ্রেস। নির্বাচন কমিশন ভোটগ্রহণের দিন ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে কোনো সিসিটিভি রাখেনি, এই সিদ্ধান্তর সমালোচনা করেন রাহুল। তিনি নির্বাচন কমিশনের এই সিদ্ধান্তকে সন্দেহজনক বলে উল্লেখ করেছেন।

রাহুল প্রশ্ন তুলেছেন, নির্বাচন কমিশন কেন বৈদ্যুতিন মাধ্যমে ভোটার তালিকা প্রকাশ করেনি? এই নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন তিনি। তাঁর অভিযোগ, বৈদ্যুতিন মাধ্যমে ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হলে ৩০ সেকেন্ডে তাদের জালিয়াতি সামনে এসে যেত।

আরও পড়ুন-  ১৯৭৭ আর ২০২৪: ইন্দিরা আর মোদির দুই নির্বাচনে কী কী আশ্চর্য মিল?

রাহুল স্পষ্ট বলেন, মহারাষ্ট্রের নির্বাচনে ভোট চুরি হয়েছে। আর তার জন্যই নির্বাচনে হেরেছে কংগ্রেস। ৪০ লক্ষ সন্দেহজনক ভোটারের নাম নথিভুক্ত করা হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি। রাহুল প্রশ্ন তোলেন, পাঁচ বছরে মহারাষ্ট্রে যে ভোটারের সংখ্যা ছিল পাঁচ মাসের মধ্যেই হঠাৎ তা বেড়ে গেল কী করে?

একদম শেষে রাহুল গান্ধী বলেন, "যদি তারা (বিজেপি) আরও ২৫টি আসন হেরে যেত" তাহলে বিজেপি এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ক্ষমতা হারাত। তাঁর দাবি, এর জন্যই বিজেপি এই ঘটনাগুলি সাজিয়েছিল।

রাহুল নির্বাচন কমিশনের আধিকারিকদের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, ‘‘আপনারা যে পদেই থাকুন না কেন, সিনিয়র হোন বা জুনিয়র, আপনাদের রেয়াত করা হবে না।’’ তাঁর দাবি, একাধিক আসনে ভোটার তালিকার কারচুপি জবাব দিতে হবে নির্বাচন কমিশনকে।

নির্বাচন কমিশন ইতিমধ্যেই রাহুল গান্ধীর অভিযোগের পাল্টা প্রতিক্রিয়া জানিয়ে দিয়েছে। রাহুলের দাবির প্রমাণ জমা দিতে বলা হয়েছে।  বিজেপি এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি।

More Articles