পদপিষ্ট গরিবরাই! উচ্চবিত্তদের জন্য মহাকুম্ভে কী আয়োজন? চমকে দেবে বিলাসের বহর
Maha Kumbh 2025: উচ্চবিত্তদের কুম্ভ! বাথটাব, রেইন শাওয়ার, গরম এবং ঠান্ডা জলের বাথরুম, হিটারের উত্তাপ, বিনামূল্যে ওয়াইফাই – পাঁচতারা হোটেলে যা থাকে সব আছে সেখানে!
মহাকুম্ভে পদপিষ্ট হয়ে মরেছে মানুষ। থেঁতলে, চেপ্টে যাওয়া দেহ উদ্ধারের ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে মোবাইলে মোবাইলে। তবুও মহাকুম্ভে স্নানের হুজুগ কমেনি। এই কুম্ভ আসলে দু'টি। বড়লোকদের কুম্ভ, দরিদ্রদের কুম্ভ। দুই কুম্ভেই ভিড় আছে। উন্মাদনা আছে। তবে মৃত্যু শুধু আছে গরিবের ভাগে। বরাবরই এমন ঠেলাঠেলি, অব্যবস্থা, পদপিষ্ট হওয়ার মতো ঘটনা যখন কোনও তীর্থে ঘটে, সেখানে মারা যায় গরিব, সস্তা মানুষেরাই। কখনও প্রচুর বিত্তবানরা বেঘোরে প্রাণ হারিয়েছেন, এমন খবর মেলে না কারণ বিত্তবানদের ঠেলাঠেলিও করতে হয় না, লাইন দিতে হয় না, তাঁবুতেও থাকতে হয় না। ঈশ্বরের দর্শন ও পুণ্য তারা আগেভাগেই পেয়ে যান। গায়ে-গতরে কষ্ট না করেই। দরিদ্রদের ভিড় ঠেলে এগোতে হয় ডুব দিতে। তাঁদের জন্য সব ব্যারিকেড, সেখানে অব্যবস্থা। হুড়োহুড়িতে মাটিতে পড়ে যায় শিশু, কাতরাতে থাকে বৃদ্ধ। গরিব মানুষই গরিব মানুষকে মাড়িয়ে চলে যায়। আর অন্য কুম্ভে? সেখানে সবই স্পেশ্যাল। এই ফেলে যাওয়া চপ্পল, থেঁতলা যাওয়া মুখ, পড়ে থাকা সায়া-ব্লাউজ, মুচড়ে যাওয়া ব্যাগের পাশে ঘায়ের মতো জেগে থাকে ফাইভস্টার কুম্ভ, বিলাসবহুল কুম্ভ। এই ফারাক চিরকালই ছিল, থাকবেও। তবে প্রশাসন যখন কেবল ভিআইপিদের জন্য পর্যাপ্ত নিরাপত্তা দিতে গিয়ে সাধারণ মানুষের প্রাণের মূল্যও দেয় না তখন প্রশ্ন ওঠে, এই মৃত্যু কি শুধুই দুর্ঘটনা?
প্রয়াগরাজের মহাকুম্ভে রয়েছে 'ভিআইপি সঙ্গম'। সেখানে নো ভিড়! ব্যক্তিগত নৌকায় সেখানে যাওয়া যায়। জলও বেশ সাফ। নিয়মিত সাফাই হচ্ছে। গরিবের সঙ্গমের ঘাটের থেকে অনেক দূরে। নতুন এই ভিআইপি সঙ্গমটি গঙ্গা, যমুনা এবং সরস্বতীর সঙ্গমস্থলে, স্রোতের ঠিক মাঝখানে অবস্থিত। এই ভিআইপি সঙ্গমে ডুব দিয়ে পুণ্য করতে দুবাই থেকে এসেছেন এনআরআই ভারতীয়রা। উন্মত্ত ভিড়ের ধাক্কাধাক্কি থেকে ঢের দূরে নিরাপদে ডুব দিয়েছেন তারা। অভিজাত কুম্ভে তাঁদের জন্য স্পেশাল বন্দোবস্ত। পুলিশ তাঁদের লাঠি দিয়ে খেদায় না, পদপিষ্ট হওয়ার আশঙ্কাও নেই। দামী ট্যুর অর্গানাইজাররা জানিয়ে দিয়েছে তাঁদের যে, এটিই 'আসল সঙ্গম'। আসল সঙ্গমে নৌকা করে যেতে ৫,০০০-১০,০০০ টাকা খরচ। এই 'বিশেষ' মানুষরা বলছেন, ভিড় দেখে তাঁদেরও ভয় হয়েছিল ঠিকই। জনাকীর্ণ রাস্তায় গাড়ির নট নড়নচড়ন তারা ফেসবুক-ইনস্টা স্ক্রল করতে করতে নানা রিলে দেখেছিলেন। কিন্তু এই গরিবের ভারতের অংশ তারা নন। প্রশাসন তাঁদের জন্য বিশেষ সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করেছে।
আরও পড়ুন-পায়ের চাপে পিষ্ট শিশু-বৃদ্ধ! মহাকুম্ভে মৃতের সংখ্যা চাপতে কেন মরিয়া যোগী সরকার?
তবে বেশ কয়েক দশক আগেও কুম্ভকে ধার্মিক এবং দরিদ্র মানুষদের তীর্থ হিসেবেই দেখা হতো। এবার মহাকুম্ভে 'প্রিভিলেজড'-দের জন্য বিশেষ আয়োজন। হলিউড তারকা, বলিউড সেলেব- সক্কলে ডুব দিচ্ছেন। পুণ্যের পিরামিড উল্টে দিয়েছে উত্তরপ্রদেশের যোগীর প্রশাসন। এবারের কুম্ভ এনআরআই এবং উচ্চবিত্ত ভারতীয়দের জন্য গ্ল্যামারাইজড তীর্থ! ২৯ জানুয়ারি যে ভারতের মানুষ পদপিষ্ট হয়েছে, এই মানুষরা সেই ভারতের নন।
এই উচ্চবিত্তদের জন্য বিলাসবহুল সুইট, ফাইভ-স্টার সুবিধা, চওড়া রাস্তা, রিভারভিউ বুলেভার্ড, হেলিকপ্টার রাইড, বিলাসবহুল তাঁবু, বাথটাব, দারুণ খাবারের বুফে এবং ব্যক্তিগত ভিআইপি ঘাট রয়েছে। ইন্ডিয়া ট্যুরিজম ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন (আইটিডিসি) এবার কুম্ভে বিশেষ তাঁবু বসানোর জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়েছিল। ৮০টি বিলাসবহুল তাঁবুই বুক হয়ে গিয়েছিল। ডিসেম্বরে বুকিং শুরু হতেই কয়েক ঘণ্টার মধ্যে, কুম্ভের প্রথম পাঁচ দিনের জন্য সমস্ত তাঁবু বুক করা হয়ে যায়। সেখানে কী নেই! বাথটাব, রেইন শাওয়ার, গরম এবং ঠান্ডা জলের বাথরুম, হিটারের উত্তাপ, বিনামূল্যে ওয়াইফাই – পাঁচতারা হোটেলে যা থাকে সব! খাবারের এলাহি আয়োজন! ভারতের বিশেষ অঞ্চলের বিশেষ খাবার। শতাধিক কর্মচারী, সাতজন শেফের দল বানিয়ে চলেছেন একের পর এক স্পেশাল খাবার।
আরও পড়ুন- এআই ক্যামেরা, বিশেষ বাহিনী দিয়েও কেন মহাকুম্ভে পদপিষ্ট হওয়া আটকানো গেল না?
২৬ ফেব্রুয়ারি কুম্ভ সমাপ্ত হবে। এক মাসেরও কম সময় আর। তাতেও এই বিলাসবহুল তাঁবুর চাহিদা এখনও বাড়ছে। আইটিডিসি এখন আরও ১৫টি বিলাসবহুল তাঁবু যুক্ত করছে। এর ডিলাক্স স্যুট ক্যাম্প, সুপার ডিলাক্স স্যুট ক্যাম্প, প্রিমিয়াম স্যুট ক্যাম্প এবং সুপার প্রিমিয়াম স্যুট ক্যাম্পে যোগব্যায়াম, ধ্যান এবং স্পা-এর বন্দোবস্তও আছে। সকালে যোগব্যায়াম এবং ধ্যান শিবির, আধ্যাত্মিক আলোচনার পাশাপাশি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের ব্যবস্থাও আছে। সন্ধ্যায় গঙ্গা আরতি দেখা যাবে ধাক্কাধাক্কি ছাড়াই। অতিথিদের আখড়ায় নিয়ে গিয়ে সাধুদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থাও আছে।
এক রাতে ১ লাখ টাকার তাঁবুও আছে, ৫০ হাজারেরও। তাতে খাবার, ব্যক্তিগত পার্কিং, সঙ্গম পরিদর্শন এবং আখড়ার সাংস্কৃতিক সফর যুক্ত। এক কামরার কটেজের দাম প্রায় ২০,০০০ টাকা। কটেজগুলিতে ঘাসের মেঝে, লাউঞ্জ সবই আছে। শরবতে চুমুক দিতে দিতে সঙ্গমে সূর্যাস্ত দেখার সুযোগ আছে। সরকারের অন্দরের খবর, নতুন এক অর্থনীতির জন্ম হচ্ছে কুম্ভে। অনুমান করা হচ্ছে, শুধুমাত্র মহাকুম্ভের সময় আতিথেয়তা খাতে প্রায় ২,৫০০ কোটি টাকা রাজস্ব আয় করবে প্রশাসন।
Experience the First-Ever Dome City at Mahakumbh 2025. Prayagraj welcomes you to a one-of-a-kind luxury experience amidst the divine confluence!
— Mahakumbh (@MahaKumbh_2025) December 26, 2024
- Dome-shaped accommodations with a stunning 360° view.
- Blending tradition, culture, and modern luxury.
- Book your spot online –… pic.twitter.com/dsUqZoiUzg
মাঝরাতে পদপিষ্ট হয়ে অজস্র মানুষ মারা যাওয়ার পরেও বিলাসবহুল কুম্ভের চাহিদা কমেনি। আর মজার বিষয় হলো, অধিকাংশ বুকিং ভারতীয়দেরই। যে ভারতীয়রা ভিড়ের অংশ নন। যারা পুণ্যার্জন করেন বিত্তের বিনিময়েই। তাঁদের পায়ে পিষে মরার ভয় নেই, সুযোগও না। একই দেশে দুই কুম্ভ! একটি ভারতের, একটি সম্ভবত ইন্ডিয়ার!