স্বাধীনতার প্রথম স্বাদ: রাত দখলের স্বাধীনতা

Independence Day: মাঝে মাঝে ভাবি, যদি কোনো পুরুষ না থাকতো! তবে হয়তো নির্ভয়া, অভয়ারা বেঁচে থাকতো। তবে হয়তো নিৰ্ভয়ে হাঁটতে পারতাম রাতের রাস্তায়।

ঠিক সময়ে ক্যাবটা বুক করেও আসছে না দেখে একটু চিন্তায় পড়তে হল। রাতটাও নেহাত কম হল না। বাড়ি থেকে ফোন আসছে বারবার। বিরক্ত হলেও কেটেও দেওয়া যাচ্ছে না। যাক বাবা ক্যাবটা এল। এবার লাইভ লোকেশন আর গাড়ির নম্বরটা বাড়িতে পাঠিয়ে রাখি।

হ্যাঁ, এও আমার স্বাধীন ভারতবর্ষ। রোজকার গল্প। একটু বেশি রাত হয়ে গেলেই চিন্তায় পড়ে যান মা-বাবা। যদিও যথেষ্ট সঙ্গত কারণেই এই চিন্তা। স্বাধীনতার ৭৯-এ এসে ভাবতে হয় কী পরা উচিত আর কী নয়। কিন্তু তারপরেও স্বাধীনতা আসে। গুটি-গুটি পায়ে।

প্রথম ভুল করার স্বাধীনতা। প্রথম 'না' বলার স্বাধীনতা। প্রথম রাতে একা রাস্তায় ঘুরে বেরানোর স্বাধীনতা। এরকমই, প্রথম স্বাধীনতা পেলাম রাতে একা ঘুরে আসার। না, ঠিক ঘুরে আসা নয়। গত বছর, ঠিক স্বাধীনতা দিবসের আগের দিন এল রাত দখলের ডাক। মোটামুটি বেশ কয়েকবার আবৃত্তির জন্য মঞ্চে ওঠায় এই অধমের পরিচয় হল এই যে, সে নাকি ভাল আবৃত্তি করে। তা বেশ। রাত দখলের জন্য মোটামুটি প্রস্তুত। কিন্তু একা যাওয়া হল না। সঙ্গে রইল পাহারা। কিন্তু সুযোগ আসল ঠিকই।

আরও পড়ুন- স্বাধীনতার প্রথম স্বাদ: নেট-জেআরএফ, ফুল ফেলোশিপ পাওয়া

ধীরে-ধীরে আন্দোলন আরও সংঘটিত হল। তা সেবার লেখক-শিল্পী গণ সংগঠনের পক্ষ থেকে ডাক এল মঞ্চে দাঁড়িয়ে আবৃত্তির মাধ্যমে আন্দোলন জোরালো করার। সঙ্গে যেন এল বাক-স্বাধীনতা। পুলিশ প্রশাসনের চোখে চোখ রেখে, নিমতা থানার সামনে দাঁড়িয়ে বলতে পেরেছিলাম প্রশাসনের চূড়ান্ত গাফিলতির কথা। প্রাতিষ্ঠানিক খুনের কথা। ঠিক সেই দিন রাতে ২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ফের এল রাত দখলের ডাক। না, সেদিন কোনো পাহারা ছিল না। পূর্ণ স্বাধীনতার ছিল সেদিন। বাড়ি যখন ফিরছি, তখন ঘড়িতে সময় রাত ৩টে। একা একটা রাস্তা, সঙ্গী কয়েকজন ভৈরব বাহন, মাইকে কোথাও-কোথাও বাজছে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের কন্ঠে মহিষাসুরমৰ্দিনী। একদিকে ছিল বিষণ্ণ এক মন, কারণ তিলোত্তমার ন্যায়বিচার তখনও এক আলোকবর্ষ দূর। ওপর দিকে এক অনন্য অনুভূতি। একা হাঁটার অনুভূতি।

কিন্তু আমি জানি না, এত আন্দোলন, রাত দখলের ফলশ্ৰূতি কবে পাব, কবে অভয়ার দোষীরা যোগ্য শাস্তি পাবে, কিংবা আদৌ পাবে কিনা। আমি এও জানি না আর কোনোদিন একা রাস্তায় রাতের বেলা হাঁটতে পারব কিনা। তবে তোমায় ধন্যবাদ অভয়া। পারলে আমায় ক্ষমা কোরো। কিন্তু আমরা এখনও চাই তোমার বিচার। তবে বিচারের বাণী যে এখনও নিভৃতে কাঁদে অভয়া।

আরও পড়ুন- স্বাধীনতার গল্প : মিছিল

মাঝে-মাঝে ভাবি, যদি কোনো পুরুষ না থাকত! তবে হয়তো নির্ভয়া, অভয়ারা বেঁচে থাকত। তবে হয়তো নিৰ্ভয়ে হাঁটতে পারতাম রাতের রাস্তায়। আচ্ছা এমন কি কখনও হবে যেদিন রাস্তায় কোনো পুরুষ থাকবে না, শুধু থাকবে নারী, একদিনের জন্য হলেও পুরুষরা থাকবে গৃহবন্দি। তবে সেদিন হয়তো ভয়টা থাকবে ঘরে ফেরার।

স্বাধীনতার ৭৯ তম বর্ষে এসে এটুকুই চাইব, একটু মানুষ ভাবুন আমাদের। বাড়ির সম্মান রক্ষার দায়ভার তো বাড়ির পুরুষ সিংহটিরও। চরিত্র তো আপনাদের-ও আছে, সেদিকে নজর দিন। এটুকু বাঁচতে দিন আমাদের।

More Articles