দেশভাগের দু-দিন পর কীভাবে স্বাধীন হয় পশ্চিমবঙ্গের এই জেলাগুলি?
Partition of West Bengal : তবে স্যার র্যাডক্লিফ চূড়ান্ত রায় দিলেও তা তৎক্ষণাৎ প্রকাশ করা হয়নি। ১৭ আগস্ট বিকেলে যখন তা প্রকাশিত হয় তখন দেখা গেল চরম বঞ্চনার স্বীকার হয়েছে পশ্চিমবঙ্গ।
মানচিত্র অনুসারে পশ্চিমবঙ্গ অঞ্চলের জন্য গঠিত হয়েছিল একটি ছায়া মন্ত্রীসভা। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েলেন কংগ্রেসের ড. প্রফুল্ল চন্দ্র ঘোষ। আমরা বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গের যে-মানচিত্রের সঙ্গে পরিচিত, তার থেকে কিছুটা আলাদা এবং সীমানা কমিশনের নির্ধারণ করে দেওয়া পশ্চিমবঙ্গের মানচিত্রের থেকে আয়তনেও বড় ছিল অন্তর্বর্তীকালীন সেই মানচিত্র।
সমগ্র বর্ধমান বিভাগ, প্রেসিডেন্সি বিভাগের অবিভক্ত ২৪ পরগনা, কলকাতা, খুলনা জেলা এবং রাজশাহী বিভাগের দার্জিলিং, সমগ্র জলপাইগুড়ি জেলা ছিল সেই মানচিত্রের অন্তর্ভুক্ত। অপরদিকে নদিয়া, মুর্শিদাবাদের মতো জেলাগুলি পূর্ববঙ্গে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। অবশেষে সীমানা কমিশনে বিস্তর সওয়াল, জবাব এবং বিচারপতিদের মধ্যে মতানৈক্যর পর কমিশনের চেয়ারম্যান স্যার সিরিল র্যাডক্লিফ নির্ধারণ করলেন দুই বাংলার মানচিত্র।
আরও পড়ুন-
সিনেমায় বিকৃত ১৯৪৬, ইতিহাসের নামে চলছে যে রাজনীতির খেলা
তবে স্যার র্যাডক্লিফ চূড়ান্ত রায় দিলেও তা তৎক্ষণাৎ প্রকাশ করা হয়নি। ১৭ আগস্ট বিকেলে যখন তা প্রকাশিত হয় তখন দেখা গেল চরম বঞ্চনার স্বীকার হয়েছে পশ্চিমবঙ্গ। অন্তর্বর্তী মানচিত্রে পূর্ববঙ্গের অন্তর্ভুক্ত হওয়া মুর্শিদাবাদ, নদিয়া, মালদহ, দিনাজপুরের একাংশ, যশোর জেলার বনগাঁ ও গাইঘাটা থানা যেমন পশ্চিমবঙ্গের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে তেমনই পূর্ববঙ্গের গর্ভে তলিয়ে গিয়েছে বিস্তীর্ণ অমুসলিম প্ৰধান অঞ্চল।

পশ্চিমবঙ্গের বর্তমান মানচিত্র
সীমানা কমিশনের রায় ১৫ আগস্টের পর প্রকাশিত হবার কারণে অন্তর্বর্তী মানচিত্র অনুযায়ী পশ্চিমবঙ্গভুক্ত যে খুলনায় স্বাধীনতার দিন ভারতের ও মুর্শিদাবাদ জেলায় পাকিস্তানের পতাকা উড়েছিল, সেই সমস্ত এলাকাগুলিতে ১৭ আগস্ট রায় ঘোষণা হবার পর দেখা গেল এক বিপরীত চিত্র। মুর্শিদাবাদে উত্তোলন করা হল ভারতের জাতীয় পতাকা এবং খুলনায় উড়ল পাকিস্তানের পতাকা। বাংলার মোট জনসংখ্যার ৪৬ শতাংশ অমুসলিম এবং রাজস্বের ৮০ শতাংশই হিন্দুরা দিলেও পশ্চিমবঙ্গের ভাগে অবিভক্ত বাংলার ৪০ শতাংশ জমিও অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। দার্জিলিং ও জলপাইগুড়ির সঙ্গে বাকি পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে সরাসরি সংযোগের করিডোর থেকে যেমন পশ্চিমবঙ্গকে বঞ্চিত করা হয়েছে তেমনিই হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ ঢাকা বন্দর, চট্টগ্রামের স্বশাসিত পার্বত্য অঞ্চল অনৈতিকভাবে পূর্ববঙ্গকে পাইয়ে দেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন-
অ্যাংলোদের স্বপ্নে চিরতরে ক্ষতচিহ্ন এঁকে দিয়েছিল দেশভাগ
বঞ্চনার ইতিহাস অনেক দীর্ঘ হলেও পশ্চিমবঙ্গের তৎকালীন প্ৰধানমন্ত্রী ড.প্রফুল্ল ঘোষ পূর্ববঙ্গের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দিনের সঙ্গে এক যৌথ বিবৃতিতে সীমানা কমিশনের রায়কে অকুন্ঠচিত্তে গ্রহণ করার আবেদন জানান। সীমানা কমিশনের চূড়ান্ত রায়ে অন্তর্বর্তী মানচিত্রে পূর্ববঙ্গের অন্তর্ভুক্ত হওয়া যে সমস্ত জায়গা বাংলায় ফিরে আসে সেই সমস্ত জায়গার অধিবাসীবৃন্দ আজও দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে ভারতের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন। সেই সময় যোগাযোগ ব্যবস্থা এত শক্তিশালী ছিল না। ১৭ তারিখে প্রকাশিত রায় মানুষের কাছে ব্যাপকভাবে পৌঁছেছিল ১৮ আগস্ট অর্থাৎ পরের দিন সংবাদপত্রের মাধ্যমে। ১৮ আগস্ট পুনরায় ‘স্বাধীনতা দিবস’ পালন করার এটিও একটি বড় কারণ। মুর্শিদাবাদ, নদিয়া জেলার একাংশের মতো নানান এলাকার পশ্চিমবঙ্গে অন্তর্ভুক্তির আড়ালের আসল ইতিহাস সময়ের সঙ্গে-সঙ্গে অনেকের কাছেই ফিকে ও অস্পষ্ট হয়ে গেছে। অজানা, অস্পষ্ট ইতিহাস মানুষের কাছে পৌঁছে যাক, এটিই আশা করা উচিত।

Whatsapp
