শাড়িতেই ভালো লাগে তোমায়, ঋজুকে উত্তর ফেরাচ্ছি নাকি আমি একজন ট্রোল?
Riju Biswas: এই যে স্রোতে গা ভাসানো, তা ঋজু বিশ্বাস হোক বা AI দ্বারা নির্মিত ছবি— যা কিছুদিন আগে ট্রেন্ডে ছিল কীসের জন্য? শুধুই কি ট্রেন্ড ফলো বা ট্রোলিং? আমি কি অন্য কিছুর দ্বারা প্রভাবিত হয়ে এমন আচরণ করে ফেলছি?
শাড়িতে ভালো লাগে তোমায়— এই ম্যাসেজ নিয়ে সরগরম সোশ্যাল মিডিয়া। সোশ্যাল মিডিয়ায় হয়তো এমন কোনো নারী নেই যিনি এই ম্যাসেজ পাননি, যিনি পাননি তাঁরও মনে হয়েছে সৌন্দর্যের সংজ্ঞায় তিনি 'ফিট' করছেন না। কষ্ট হয়েছে, কষ্ট হয়, ছোটবেলা থেকেই সমাজ যে চোখ আর মন তৈরি করে দেয় সৌন্দর্য্যকে দেখার, তাতে খাপে খাপ যে মিলে যায় তার উপর রাগ হয়, নিজের উপর বিতৃষ্ণা। অথচ এই ভাবনা তৈরি করে দেওয়া, সেই বৈশিষ্ট্যে ফিট হওয়ার জন্য দামী ক্রিম থেকে শুরু করে দামী পোশাক— আর এই ফিট করার লড়াইয়ে যদি সেলিব্রিটি সৌন্দর্যের প্রশংসা করে, তাহলে আর পায় কে? তাই এই মেসেজ স্ক্রিনশট নিয়ে নিজের ওয়ালে শেয়ার করেননি এমন নারী পাওয়া মুশকিল, এবং এই নিয়ে শুরু হয় ট্রোলিং। কিন্তু কারা কেন এ কাজে অংশ নেয়, জেনে নেওয়া প্রয়োজন।
ট্রোলিং, সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি Malicious Behavior— যার আক্ষরিক অর্থ দূষণমূলক ব্যবহার। নিয়মের বাইরে ঘটে যাওয়া ঘটনা, প্রভাবশালী মানুষের ব্যক্তিগত কুৎসা, বিখ্যাত মানুষের কুখ্যাত বেফাঁস কীর্তিকলাপ এইসমস্ত ক্ষেত্রে ট্রোলিং ঘটে। নিজেদের জীবনের বহু না পাওয়া, অনৈতিকতার শিকার হওয়া, অপমান, প্রত্যাখ্যান বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এগুলো উগরে দেওয়ার একটা মাধ্যম হিসেবে দেখা যেতে পারে ট্রোলিংকে। বইতে বইতে বইতে যখন অসহ্য লাগে, একপ্রকার উদগারের সুযোগ দেয় ট্রোলিং। অচেনা মানুষ হয়ে বিখ্যাত মানুষের পোস্টের তলায় কমেন্ট করে বেশ কিছুটা আশ মেটানো যায়, আর সেই কমেন্টে যদি লাইক, হাহা রিয়াক্ট পড়ে তাহলে এই ইনস্ট্যান্ট ভ্যালিডেশনে এই ব্যবহারের পুনরাবৃত্তি ঘটে।
ঋজু এই কাজ ভুল করেছেন না ঠিক, সেই প্রসঙ্গে আসছি না। তবে যারা ক্রমাগত এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ট্রোল করে যাচ্ছেন তাঁদের নিজের মনের দিকে একবার তাকিয়ে দেখ দরকার। এই ধরনের ঘটনা ট্রিগার মাত্র। আজ ঋজু কাল অন্য কেউ, ট্রোলিং কিন্তু আপনার থামছেনা...
আরও পড়ুন- রূপঙ্কর হোক বা ‘আমরেলা’, কোন মানসিকতা থেকে ট্রোল করি আমরা?
সোশ্যাল মিডিয়া আমাদের প্রতিযোগিতামূলক মানসিকতা তৈরি করে দেয় যা থেকে মনে হয়, হাতে সময় কম, এখনই আমাকেও পোস্ট দিতে হবে। কারণ কোথাও না কোথাও জানি এই পোস্ট কদিন পর আর প্রাসঙ্গিক নয়। কিন্তু আমার এই একঘেয়ে জীবন মুহূর্তে মনযোগ পাবে যদি আমি গুরুত্ব পাই, সমর্থন পাই তাই ঘটনা ঘটার দুদিনেই মিম থেকে শুরু করে পোস্টের ভিউস আর রিচ দুটোই বেড়েছে প্রবল গতিতে। এই যে স্রোতে গা ভাসানো, তা ঋজু বিশ্বাস হোক বা AI দ্বারা নির্মিত ছবি— যা কিছুদিন আগে ট্রেন্ডে ছিল কীসের জন্য? শুধুই কি ট্রেন্ড ফলো বা ট্রোলিং? আমি কি অন্য কিছুর দ্বারা প্রভাবিত হয়ে এমন আচরণ করে ফেলছি? নাকি এর বীজ বপন করা ছিল আগে থেকেই? একটু জল সার পেলেই যা কদর্য হয়ে বেরিয়ে আসছে সোশ্যাল মিডিয়ায়? মনের মধ্যে যদি বারুদ ভরা থাকে তবেই দেশলাই কাঠি ছুঁড়লে আগুন জ্বলে উঠবে, দোষ কি দেশলাই কাঠিকে দেওয়া যাবে? ভেবে দেখুন এই সময়ই প্রাইম টাইম, নিজের জীবনের না পাওয়া Displacement Defense হচ্ছে, যাকে উচিৎ জবাব দেওয়া প্রয়োজন ছিল, দিতে পারিনি বলে আড়াল থেকে প্রকাশিত হচ্ছে অন্যের উপর। তাই পাড়ার মন্টু আবেগের বশে কমেন্ট করে বসছে, সাময়িক উত্তেজনার লোভে, একঘেয়ে জীবনের উদ্দীপনা বোধ করতে।
যদি এক মিনিট চুপ করে ভাবতে পারি কীসের জন্য এই উগরে দেওয়া? প্রক্ষোভ নিয়ন্ত্রণ করতে না চাওয়া? না পারা নয় কিন্তু, কারণ প্রক্ষোভ নিয়ন্ত্রণ করা যায়। কিছুক্ষণ ফোনটা রেখে একটু হেঁটে আসা যায়, মন যেহেতু স্থির নয় কিছুক্ষণ পরে সে অন্য কিছুতে মনযোগ দিতে বাধ্য।
জীবনটা যেহেতু চালনা নিজেরাই করছি, তাই স্টিয়ারিং যতক্ষণ নিজের হাতে থাকছে বেসামাল আচরণ করার আগে কি একটুও ভাবব না? একটা বড় ইন্ডাস্ট্রি সোশ্যাল মিডিয়া তার হাতেই এই দায়িত্ব তুলে দেব? এতটা না পাওয়া, ভয়াবহ ফাঁকা জীবন কি সত্যিই বইছি? নাকি মিথ্যে সোশ্যাল মিডিয়ায় অন্যের ভালো থাকা নিজের জীবনকে বারবার প্রশ্নের মুখে ফেলে দিচ্ছে? একেবারেই ঋজু কেন বছরের পর বছর এমন কাণ্ড ঘটালেন তা নিয়ে ভাবছি না, ভাবতে বাধ্য হচ্ছি এত শয়ে শয়ে মানুষ কী ভাবে স্রোতে গা ভাসিয়ে ফেললেন? সত্যিই কি এটা আলোচনা করার বিষয়বস্তু হতে পারে? নিজের এই আচরণের দিকে আরও একবার তাকাই। একটু রিফ্লেক্ট করি, সোশ্যাল মিডিয়াতে যেমন ছুট্টে গিয়ে এক্ষুনি পোস্ট-কমেন্ট করে ফেলি, তেমন ভাবে এক্ষুনি যদি একটু ভাবি, কেন এই প্রশ্ন না করে ৩টে কারণ ভাবার চেষ্টা করি, স্থির হয়ে, চুপ করে বসে। সম্ভব?

Whatsapp
